চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে আবাসিক হলের কক্ষ থেকে গণমাধ্যমে কর্মরত শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (১৯ জুন) দুপুরে প্রক্টর বরাবর এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)।
এ ঘটনায় পরোক্ষ মদতদাতা হিসেবে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসের নামেও অভিযোগ দিয়েছে সংগঠনটি। অভিযোগপত্রে চবিসাস সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিনের সই রয়েছে।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগকর্মীরা হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ওয়ায়দুল হক লিমন, অর্থনীতি বিভাগের রানা আহমেদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আশিষ দাস, দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সাজ্জাদুর রহমান, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের তুষার তালুকদার বাপ্পা, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আবির আহমেদ, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রমিত রুদ্র ও একই শিক্ষাবর্ষের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের জাহিদুল ইসলাম। এছাড়া ঘটনায় আরও অজ্ঞাত ১০ জন জড়িত বলে অভিযোগ করেছে চবিসাস।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা সবাই সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসের অনুসারী বলে জানা গেছে। এর আগে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, মারধরসহ বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
চবিসাস সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আলাওল হলের দ্বিতীয় তলায় পূর্ব ব্লকে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরাসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের আসন রয়েছে। অনেকদিন ধরেই শাখা ছাত্রলীগের কতিপয় নামধারী, সুনাম বিনষ্টকারী কর্মী সাংবাদিকদের অবস্থানরত কক্ষের প্রতি দখলদারী মনোভাব পোষণ করছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির ছুটি কাটিয়ে ফেরার পর দেখা যায় ওই ব্লকের ওয়াইফাইয়ের তার চুরি হয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ছাত্রলীগকর্মী নিলয়ের কক্ষে তার লুকিয়ে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে তাকে বারবার তারটি ফেরত দিতে বলা হলেও সে কোনও ভ্রুক্ষেপ করেনি। প্রায় দুই মাস পর আমরা নিজ থেকেই কেটে ছোট করে ফেলা তারটি উদ্ধার করে নিয়ে আসি। এরপর ২০৯ ও ২০২ নম্বর কক্ষ দখলের চেষ্টা ও হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটে। আমরা তাদের সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা এবং তৎকালীন হল প্রভোস্টের মধ্যস্থতায় সেসব বিষয় সমাধান করি।’
সাইফুল ইসলামের অভিযোগ, ‘গত ১৫ জুন রাত প্রায় দেড়টার দিকে আমাদের ব্লকে এসে নিলয়সহ ৫-৭ জন শিক্ষার্থী হৈ-হুল্লোড় করে চলে যায়। পরদিন ১৬ জুন রাত বারোটার দিকে নিলয়সহ ১৫-২০ জন আমার কক্ষে ঢুকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আগের ঘটনার রেশ ধরে চিল্লাচিল্লি ও গালিগালাজ করতে থাকে। অকথ্য ভাষা ব্যবহার করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের হেনস্থা করে তারা সেখান থেকে চলে যায়। এরপর আরও দুই দফা এসে তারা সাংবাদিকদের হুমকি দিতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘তাদের বক্তব্য ছিলো এরকম- ‘এই হল আমাদের। হল আমরা লিজ নিছি। যখন ইচ্ছা তোদেরকে হল থেকে বের করে দেবো। এই রুম যদি তোদের হয় পুরো হল আমাদের। কি করবি তোরা? নিউজ করবি, কর। আমরা সাংবাদিক খাই না। প্রক্টরও খাই না।’
চবিসাসের সহ-সভাপতি আহমাদ সালমান বলেন, ‘ছাত্রলীগকর্মীরা বারবার সাইফুলের কক্ষে ঢুকে সাংবাদিকদের মারার জন্য উদ্যত হয়। এছাড়া তারা বেশ কয়েকবার রুমের বাতি বন্ধ করে দিয়ে রুম ভাঙচুরের চেষ্টাও করে। পুরো ব্লকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এসময় অর্থনীতি বিভাগের রানা আহমেদ ও ওবায়দুল হক লিমনসহ সবাই অশ্রাব্য ভাষায় সাংবাদিকদের গালি দিতে থাকে। অপ্রকাশযোগ্য ভিডিও ও অডিও আমরা প্রক্টরের কাছে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াসকে জানানো হলে তিনি দেখছেন বলে ফোন কেটে দেন। এরপরও সাংবাদিকদের হেনস্তা অব্যাহত রাখায় মোহাম্মদ ইলিয়াসের সঙ্গে আবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।’ ইলিয়াসের পরোক্ষ মদতেই মূলত তারা বারবার এরকম ঘৃণ্য ও অস্বাভাবিক আচরণ করার সাহস পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু সাংবাদিকতার পরিবেশ বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে। যেকোনও প্রয়োজনে সাংবাদিকদের পাশে আছি আমরা।’
তবে এ বিষয়ে জানতে বিজয় গ্রুপের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ঘটনায় আশা করবো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। আর আমরা আমাদের মতো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করবো কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হল লিজ নেওয়ার এখতিয়ার ছাত্রলীগের নেই। কোনও ছাত্রলীগকর্মী এভাবে কথা বলতে পারে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই প্রক্টরিয়াল বডি ওখানে গিয়েছিল। শুধু সাংবাদিক না, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেউ খারাপ আচরণ করলে আমরা শক্তভাবে ব্যবস্থা নেবো।’ এ বিষয়ে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।