দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) র্যাগিংয়ের অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করেছেন কিছু শিক্ষার্থী।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী ২০২২ ও ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী ও তাদের সহপাঠীদের একাংশ প্রধান ফটকের সম্মুখে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে প্রধান ফটক অবরোধ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হাতে পোস্টার ও বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে বহিষ্কারের বিরোধিতা করেন। পরে বিকাল ৪টা থেকে বহিষ্কারাদেশ বাতিলের এক দফা দাবিতে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন।
পুনরায় র্যাগিংয়ের অভিযোগ ও বহিষ্কার আদেশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রিভিউ করার আশ্বাস দিলেও অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা রাত ৯টা পর্যন্ত বহিষ্কার বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
উল্লেখ্য, বিদায়ী বছর সর্বোচ্চ বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি)। শুধুমাত্র র্যাগিংয়ের অভিযোগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী গত বছরে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার হয়েছেন ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ১২ শিক্ষার্থী।
আগস্ট মাসে ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন ছাত্রাবাসে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের র্যাগিং ও হয়রানির অভিযোগে মার্কেটিং বিভাগের ছয় শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার এবং তিন শিক্ষার্থীকে কঠোরভাবে সতর্ক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সে সময় র্যাগিংয়ের ভুক্তভোগী মার্কেটিং বিভাগের ২৩ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. ওয়াসিম বলেন, আমরা ওই দিন ভাইদের মেসে গেছিলাম দেখা করতে। নরমাল কথাবার্তা বলেছে ম্যানার শিখিয়েছে কিন্তু যেসব ভাইয়েদের নামে অভিযোগ করা হয়েছে সেরকম কিছু হয়নি।
সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ছাত্রাবাসে র্যাগিংয়ের অভিযোগে কৃষি অনুষদের ২০২২ ব্যাচের রাকিবুল হুদা তাজমুল ও আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও দুই শিক্ষার্থীকে সর্তক করা হয়। একই মাসে শ্রেণিকক্ষে র্যাগিংয়ের অভিযোগে ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের আরও ২১ শিক্ষার্থীকে সতর্ক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসেও একই অভিযোগে অর্থনীতি বিভাগের ২০২২ শিক্ষাবর্ষের তৌহিদুল ইসলাম তুরাগ ও সজীব হোসেন নামের দুই শিক্ষার্থীকে দুই সেমিস্টার এবং রোকনুজ্জামান চৌধুরী ও অনুপম রায় নামের দুই শিক্ষার্থীকে এক সেমিস্টার করে বহিষ্কার করে। পাশাপাশি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। একইসঙ্গে ওই বিভাগের এফ. এন শাবিন, শাহীন আলম, জাহিদ হাসান, শাকির মাহমুদ ও ইয়াসির রহমান শাকিল নামের চার ছাত্রকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়।
র্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কৃত অর্থনীতি বিভাগের ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থী সজীব হোসেন বলেন, যেদিন যে অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের বহিষ্কার করা হয়েছে ওই দিন আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে মেইন গেট দিয়ে যাওয়ার সময় এক জুনিয়র মেয়ে মেইন গেটে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তার বন্ধুদের খবর দেই তারপর আমরা চলে আসি। পরে জানতে পারি আমাদের নামে নাকি অভিযোগ গেছে ওই মেয়েকে আমরা র্যাগ দিয়েছি ক্লাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রশিদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং প্রতিরোধে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড কমিটি আছে। তারা সব প্রমাণ-তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগে সঠিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে র্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নীতিমালা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড। এরপরও শিক্ষার্থীদের আবেদনে আবারও অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড কমিটি তথ্য প্রমাণগুলো পুনরায় বিশ্লেষণ করবে এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।
