মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশের কারাগারে বন্দি রয়েছেন অসংখ্য বাংলাদেশি। অবৈধভাবে মালয়েশিয়াতে প্রবেশসহ নানা কারণে তারা সাজা ভোগ করছেন এসব ক্যাম্পে (কারগার)। কিন্তু সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও তারা দেশে ফিরতে পারছেন না টাকা বিমান টিকেটসহ নানা কারণে। মালয়েশিয়ার পেনাং প্রদেশের জুরু ক্যাম্পে এমন ৬০ জন বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পরেও দেশে আসতে পারছেন না।
আনন্দের খবর হচ্ছে, জুরু ক্যাম্প থেকে এবার ২০ জন অবৈধ বাংলাদেশি দেশে ফেরত আসছেন পেনাং-এ অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতায়। প্রাথমিকভাবে আজ বুধবার (২৯ জুন) রাত পৌনে বারোটায় এই বিশ জন থেকে নুরুল আলম, মো. লাবলু, মো. রানা সরকার, মো. লিটন এবং শ্রী মনি রাজ নামে পাঁচ বাংলাদেশি দেশে ফিরছেন।এরা প্রত্যেকে সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পরেও অর্থাভাবে বিদেশের মাটিতে কারাগারে ছিলেন। শুধু পাঁচজনই নয়, আগামী ১৩ জুলাই আসবেন আরও ছয় জন।পর্যায়ক্রমে বাকিরাও দেশে ফেরার এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন আবদুল নাকিব। নাকিব পেনাং এ প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ইসলামিক কমিউনিটি অব বাংলাদেশ (পেনাং) এর সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ পিপলস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহসাধারণ সম্পাদক। যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ফোনে আবদুল নাকিব বলেন,এখানে অবৈধভাবে প্রবেশকারী বাংলাদেশিদের সাজা হয় দুই থেকে তিন মাস। কিন্তু সাজার বিষয়টি বাংলাদেশে স্বজনরা জানতে পারায়, তাদের কাছে বিমান টিকিট না থাকায়, কিংবা কখনও কখনও মালয়েশিয়াতে যেসব কোম্পানিতে কাজ করেছেন, সেসব কোম্পানি মালিকদের অসহোগিতার কারণে বছরের পর বছর ধরে তারা সাজা ভোগ করছেন। তাদেরকে বিনা অপরাধে জেলখানায় থাকতে হয়।জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপের ভিত্তিতে কাগজপত্র দাখিল করে এসব বাংলাদেশিদের আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি বলেন আবদুল নাকিব।
তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিলে আমাদের পক্ষে সেটি নানা কারণেই সমস্যার সৃষ্টি করে, ইমিগ্রেশন থেকেও সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ, যারা দেশে ফিরবেন তাদের বিমানভাড়াসহ টাকাও দিতে হয়। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে অনেকের পক্ষেই এটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তবে যারা এখানে বিত্তশালী বাংলাদেশি রয়েছেন তাদের অনেকেই এসব আটকে পড়া বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন। যেমন বাংলাদেশ পিপলস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী শামসুল একাই দায়িত্ব নিয়েছেন ১০ জন বাংলাদেশিকে বিমানভাড়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করার।
আবদুল নাকিব বলেন, আমরা অনেকেই অনেক বছর ধরে এখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। ব্যবসা করছি। বলতে পারেন এখানে ওয়েল স্যাটেলড। আমরা যদি আমাদের ভাইদের সহযোগিতা না করি তাহলে তারা কোথায় যাবে? দিনের পর দিন জেলখানায় থাকতে হবে তাদের, তাই আমাদের সম্মিলিত এ উদ্যোগ। বিশজনের দেশে ফিরে যাওয়ার কাগজপত্রের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বাকিদের কাগজপত্রও ধীরে ধীরে আমরা সম্পন্ন করতে পারবো বলে আশা করি। এ বিষয়ে ইমিগ্রেশনও আমাদেরকে খুবই সহযোগিতা করেছে। তাদেরকে আমরা ধন্যবাদ দিতে চাই।
আবদুল নাকিব বলেন, আজ বুধবার (২৯ জুন) বাংলাদেশে ফেরত আসা পাঁচ জনকে তারা বিমান টিকিট এবং প্রতিজনকে নগদ ১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন, যাতে দেশে এসেই তাদের আর্থিক সংকটে না পড়তে হয়। আর ধীরে ধীরে সবাইকে পাঠানোর ব্যবস্থা আমরা করবো।
আবদুল নাকিব বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানো ছাড়াও তাদের সংগঠন ইসলামিক কমিউনিটি অব বাংলাদেশ (পেনাং)এবং বাংলাদেশ পিপলস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন মালয়েশিয়াতে অবস্থানরত যে কোনও বাংলাদেশি বিপদে পড়লে তার সাহায্যে কাজ করে। কেউ মারা গেলে তার লাশ দেশে পাঠানো, অসুস্থ বাংলাদেশির চিকিৎসা,বাংলাদেশিদের যে কোনও প্রয়োজনে কাজ করে এ দুটো সংগঠন।
নাকিব জানান, এমন কি পেনাং ছাড়া অন্য প্রদেশেও যেসব অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন তাদেরও সাহায্য করবেন তারা। বাংলাদেশিদের একত্র করতে আমরা আগামী ১৬ জুলাই ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এই পুনর্মিলন অনুষ্ঠানে বাঙালিরা তাদের সমস্যা এবং সহযোগিতার কথা তুলে ধরবেন।এভাবেই প্রবাসে আমরা কাজ চালিয়ে যাবো একে অন্যের বিপদে পরস্পর পাশে থাকবো।
এপিএইচ/
আরও পড়ুন:
বিদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে মালয়েশিয়া
বিভিন্ন দেশের কারাগারে ১৩ হাজার ২৪ বাংলাদেশি, পাকিস্তানের সঙ্গে আপাতত কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী