X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বার্ন ইউনিট ভারি হয়ে আছে শিশুদের আর্তচিৎকারে

জাকিয়া আহমেদ
০৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ১১:৫৭আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ১২:১৩

বার্ন ইউনিটের সামনে বিমর্ষ হয়ে বসে আছেন কারখানা মালিক নাজমা বেগম ও তার প্রতিবেশী জোছনা বেগম

ঢামেক বার্ন ইউনিটের তৃতীয় তলায় অবস্থিত এইচডিইউতে (হাই ডেফিয়েন্সি ইউনিট) ঢুকতেই কানে আসে আর্তচিৎকার, ‘ও মাগো মরে যাচ্ছি, এতো ব্যথা কেন মা, আমি মরে গেলাম।’ কারা চিৎকার করছে জানতে চাইলে কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী জানান, ‘হাজারীবাগের বাচ্চাগুলোর ড্রেসিং হচ্ছে, তীব্র ব্যথা আর জ্বালাপোড়ায় সকাল থেকেই এমন চিৎকার করতেছে বাচ্চাগুলা।আর ড্রেসিং করার সময়ে সেটা আরও বেড়ে যায়।’

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাজারীবাগের একটি চামড়া কারখানায় আগুন লাগার ঘটনায় চার শিশু দগ্ধ হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাগলপুর লেনের কোম্পানিঘাটের তানজিদ লেদার কারখানায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অগ্নিদগ্ধ সবাইকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ‘অগ্নিদগ্ধ শিশুদের মধ্যে ১২ বছরের তামজিদের শরীরের ১৫ শতাংশ, ৬ বছরের হেদায়েতুল্লাহর ১৪ শতাংশ, ১৩ বছরের সজীবের ৬০ শতাংশ এবং আসাদুজ্জামান নামের আরেক শিশুর শরীরের ৫ শতাংশ পুড়ে গেছে ।’ এদের মধ্যে সজীব বর্তমানে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র), তামজিদ এবং হেদায়েত এইচডিইউতে চিকিৎসাধীন আছে। আর আসাদুজ্জামানকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ খন্দকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হেদায়েত ও তামজিদের শরীর কম পুড়লেও তাদেরকে আমরা আশঙ্কামুক্ত বলতে পারছি না, কারণ তাদের সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। আর শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়া রোগীরা সবসমই ঝুঁকিপূর্ণ। আরও কয়েকদিন না গেলে তাদের ব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব নয়।’

এইচডিইউর ভেতরে কী করে আগুন লাগলো জানতে চাইলে তামজিদের মা এবং কারখানার মালিক নাজমা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দোতলা বাড়ির নিচ তলায় তামজিদ লেদার কারখানায় শিশু শ্রমিকরা কাজ করছিল। পাশেই তাদের জন্য জোছনা বেগম রান্না করছিল। এ সময় অসাবধানতাবশত: হঠাৎ আগুন লেগে গেলে কারখানার দুই শিশু শ্রমিকসহ চার শিশু দগ্ধ হয়।

তবে তাদের বাঁচাতে উদগ্রীব কারখানার মালিক নাজমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার যতো ট্যাহা যায় যাউক, কিন্তু আল্লাহ যেন তিন মায়ের পুতেরে বাঁচায়ে আনে। আমি যেন তাগোরে চিকিৎসা করাইতে পারি, তাই খালি কইতাছি খোদার দরবারে, আপনেরা সবাই দোয়া করেন বাচ্চাগুলার জন্যে, আল্লাহ যেন আমারে তাগোর চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা দেয়।’

এ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে কারখানার মালিকের ছেলে তানজিদও। তার মা নাজমা বেগম জানান, ‘পাশের বাসায় টেলিভিশন দেখতে গিয়েছিল তানজিদ। কিন্তু হুট করে ওই সময় কারখানায় ফিরে আসে সে। আর তখনই সেখানে আগুন লাগে। এ আগুনে বাকি ছেলেদের সঙ্গে সেও দগ্ধ হয়।

‘ভাবীরে (জোছনা বেগম) বলছে, কাকি আপনি টিভি বন্ধ করে দেন, আমি কারখানা থেকে আসিগা। ওইখান থেইকা আইসা প্রাইভেট পড়তে বসমু। এইডা আমার নসিব গো আপা, কারখানার আগুনে ওরে টাইন্যা আনছে,’ বলেই বিলাপ করতে থাকেন নাজমা বেগম। তিনি বলেন, ‘এহন খালি আল্লাহর কাছে বলতাছি, ওগোরে হায়াত দাও আর আমারে চিকিৎসা করানোর তৌফিক দাও খোদা।’

অগ্নিদগ্ধ ৬ বছরের হেদায়েতের মা জোছনা বেগম বলেন, ‘ওই বাড়ির পুরান ভাড়াটিয়া আমরা, এতোবছর ধইরা রান্ধি ওইখানে, কিন্তু সেদিন কী থেকে কী হয়ে গেল জানি না। বাচ্চাগুলো খেলতেছিল, কিন্তু কেমনে যে চুলার থিকা আগুন ছড়ায়ে গেল আমি কইতে পারি না। পোলাডারে ডাকলাম, বাবা, আমার কাছে আয়। কিন্তু আইলো না। যদি কথা শুইন্যা চইল্যা আইতো তাইলে আর এই বিপদ হইতো না।’

কারখানায় কেন শিশুরা কাজ করছিল প্রশ্ন করলে এবার নাজমা বেগম এবং জোছনা বেগম দুজনই এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওরা কেউ কারখানায় কাজ করে না। সবাই ওখানকার আশেপাশে থাকে, সেদিন সবাই মিলে তামজিদের সঙ্গে খেলার জন্যই ওখানে আসে।

/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সিএনজির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে বিআরটিএ অফিস ঘেরাও
সিএনজির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে বিআরটিএ অফিস ঘেরাও
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
বৃষ্টি ও বন্যায় কেনিয়ায় নিহত অন্তত ৪৫
বৃষ্টি ও বন্যায় কেনিয়ায় নিহত অন্তত ৪৫
‘তাই বলে ১৯ গোল খাবো!’
‘তাই বলে ১৯ গোল খাবো!’
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড