‘আমার ময়না কেবল আমারে একটু ডাকুক। একটিবার কেবল মা বলি ডাক দিক। ওর মুখেত মা ডাক শুনি না কতদিন হলি’, বলে আহাজারি করছিলেন রহিমা বেগম। শনিবার দুপুর বেলা, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ)-এর দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। কাছে গিয়ে কথা বলতেই নিচুস্বরে কেঁদে কেঁদে এসব কথা বলেন রহিমা বেগম।তিনি জয়পুরহাটের নির্যাতিত সেই মেয়েটির মা।
মেয়েটির ফুফা জাকারিয়া আল মামুন দুলাল বলেন, ‘সব কিছু ছেড়ে এখানে পড়ে আছি। নাওয়া-খাওয়ার ঠিক নেই। রাতে ঘুম হয় না ঠিকমতো। শুধু মেয়েটিকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলে এগুলান কোনও কষ্টই মনে হবে না।’ তবে মেয়েটির এখনও ঠিকমতো জ্ঞান ফেরেনি বলে জানালেন তার মা ও ফুফা দুজনেই।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ঘরে ঢুকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে কালাই থানার বানদিঘী গ্রামের দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় মেয়েটিকে ২৪ ডিসেম্বর সকালে বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সেদিনই রাত দেড়টার দিকে ঢাকার আগারগাঁও নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত ২৬ ডিসেম্বর দুপুরে ঢামেকে তার অপারেশন হয়।
এরপর মেয়েটির চিকিৎসায় গত ২৮ ডিসেম্বর ঢামেকের নিউরো সার্জারি, গাইনোকোলজি, জেনারেল সার্জারি এবং ওসিসি (ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার)র কনসালটেন্টদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী মেয়েটির চিকিৎসা হচ্ছে বলে জানা গেছে হাসপাতাল সূত্রে। আর এই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদেরকে রিমান্ডে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে জানা গেল, নির্যাতিত মেয়েটিকে গত বৃহষ্পতিবার আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) থেকে এইচডিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। শনিবার তার মাথার সেলাই কেটে ড্রেসিং করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা ভেতরে যখন মেয়েটির ড্রেসিং করছিলেন, তখন এইচডিইউর সামনে কথা হয় তার মা রহিমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কিচ্ছু চাইনা না। কেবল মেয়েটা সুস্থ হউক। আমার মেয়েটা যেন আবার আগের মতো স্কুলে যাইতে পারে।’
মেয়েটির ফুফা জাকারিয়া আল মামুন দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনও ঠিকমতো ওর জ্ঞান ফেরেনি। তবে হাত-পা একটু নাড়াতে পারে। চিকিৎসকরা এটাকে ভালো লক্ষণ বলে জানিয়েছেন আমাদের ।’ চিকিৎসকরা বলেছেন, ‘দুলাল।
তিনি আরও বলেন,‘মেয়েটা যে কথা বলে না এনিয়েই চিন্তা হচ্ছে আমাদের।’
আজ (রবিবার) মেয়েটির মুখের ভেতরের অংশের সিটিস্ক্যান হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। মেয়েটির ফরেনসিক প্রতিবেদন পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে জাকারিয়া আল মামুন দুলাল বলেন, ‘প্রতিবেদন এখনও আমাদের হাতে এসে পৌঁছায় নাই। তাই ওই বিষয়ে ভাল-মন্দ কিছুই জানি না আমরা ।’
নির্যাতিত এই মেয়েটির চিকিৎসায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা খুবই আন্তরিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের পরিচালক স্যার থেকে শুরু করে প্রত্যেক ডাক্তার তার খোঁজখবর নেন। তারা আলাদাভাবে নজর দিয়ে মেয়েটিকে দেখছেন। ’
জয়পুরহাটের স্থানীয় সংসদ সদস্য, কালাই উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়রা প্রত্যেকে তাদের পাশে রয়েছেন। তারা সবাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন, জানান জাকারিয়া মামুন। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে ভয়ে ছিলাম মেয়েটিকে নিয়ে, কিন্তু এখন আর ভয় পাই না। কারণ সবাইতো আমাদের পাশে রয়েছেন। সাহস দিচ্ছেন। এখন শুধু মেয়েটির সুস্থ হওয়ার অপেক্ষা।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেয়েটির অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো। তাকে আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে নিয়ে আসা হয়েছে। ওকে নিয়ে আগের চেয়ে শঙ্কা কিছুটা কমেছে। ’
মেয়েটিকে আরও দুই-তিনদিন এইচডিইউতে রাখার পর ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে স্থানান্তর করা হবে বলেও জানান অধ্যাপক অসিত চন্দ্র সরকার।
এপিএইচ/
আরও পড়ুন:
‘নির্বোধ’রাই রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্কের বিরোধিতা করে: ট্রাম্প
৩ বছরে বেশিরভাগ সমাবেশের অনুমতি পায়নি বিএনপি