X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্স’ এর প্রভাবেই সহিংস হচ্ছে কিশোররা!

জাকিয়া আহমেদ
১০ জানুয়ারি ২০১৭, ১০:৪৬আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৫৩

ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্স

১৪ বছরের কিশোর আদনান কবির হত্যার অনেকগুলো বিষয় আলোচনায় এসেছে। এর মধ্যে উত্তরায় সক্রিয় থাকা কিশোরদের বেশ কয়েকটি গ্রুপের নাম ওঠে এসেছে। এসব গ্রুপের লিডারদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। আর সদস্যরা অষ্টম থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। যারা এলাকাতে আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িতে। এসব কিশোরদের এমন সহিংস আচরণের জন্য ‘ক্ল্যাশ অব ক্যান্স’, কল অব ডিউটি (সিওডি), ব্যাটল ফিল্ড এর মতো ভার্চুয়াল গেমকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এসব গেম তরুণ প্রজন্ম ও সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে।

অভিভাবকদের মতে, এই বয়সী কিশোদের খেলার উপযুক্ত কোনও মাঠ নেই। তাই তারা ভার্চুয়াল গেমে আসক্ত হয় পড়ছে। এর প্রভাবে তারা নিজেদের সহিংস অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ৬ জানুয়ারি (শুক্রবার) উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনানকে সন্ত্রাসীরা খেলার মাঠে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। ওইদিন সন্ধ্যায় আদনানের বাবা কবির হোসেন উত্তরা পশ্চিম থানায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন।

‘ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্স’ এর প্রভাবেই সহিংস হচ্ছে কিশোররা!

সন্তাদের ভাচুয়ার্ল গেমে আসক্ত হওয়ার জানালেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা লীনা পারভীন। তার দুই ছেলে এবার নবম শ্রেণির ছাত্র। পত্রিকার পাতায় আদনানের ছবি দেখে চিন্তিত এই মা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই বয়সে বাচ্চারা অ্যাডভেঞ্চার খোঁজে। অথচ তাদের সময় কাটানোর অপশন নেই। ইন্টারনেটের বদৌলতে তাদের সামনে অবারিত দুনিয়া। যা তাদের ভয়ঙ্কর  ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্স নামে একটা গেম আছে মোবাইলে। ওখানে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ফাইটিং করে এবং প্রতিটা গ্রুপের একটা করে চমকপ্রদ নাম থাকে। আমার দুই ছেলেও একসময় এই গেম খেলতো। ছেলেরা যখন এই গেম খেলতো, তখন ওদের চোখে মুখে মারাত্মক প্রতিশোধের ছায়া দেখতে পেয়েছিলাম। তাই এটা খেলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। অভিভাবকদের এসব গেমের ব্যাপারেও সচেতনতা দরকার। নয়তো আদনানের মতো আরও অনেক কিশোরকে আমাদের হারাতে হবে।’

এক সময় ‘ক্ল্যাশ অব ক্যান্স’ খেলা এক কিশোর বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ‘আমরা নিজেদের ডাকতাম সিওসি (ক্ল্যাশ অব ক্যান্স)। এই খেলায় যতো সংঘর্ষ হবে ততোই মজা। নিজেদেরকে বীর বীর মনে হয়, নিজের শক্তি বাড়ে। আমাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল নাইট নামের চরিত্র যে কিনা একজন উন্মাদ হত্যাকারী হিসেবে পরিচিত। তাকে দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হতাম, তার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতাম। আর এই খেলার প্রতিটি চরিত্র এবং অংশ একেকটা অশুভ শক্তি।’

‘ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্স’ এর প্রভাবেই সহিংস হচ্ছে কিশোররা!

সে বলে, ‘আমি যখন এই গেম খেলতাম, তখন এর বাইরে আর কিছু করতে পারতাম না। আমি গান গাইতাম, ছবি আঁকতাম কিন্তু সেসব নষ্ট হয়ে গেছে কেবল এই গেমের কারণে। এ গেমের চরিত্র ডাইনি, জাদুকর, অপদেবতা, বারবারিয়ানরা হিরো ছিল আমাদের কাছে।’

এই গেম কেন এতো জনপ্রিয় জানতে চাইলে এই কিশোর বলে, ‘আমরা কয়েকজন খেলোয়ার মিলে একটা ক্লান তৈরি করতাম। যার মধ্যে একজন দলনেতা, একজন সহ-দলনেতা আর বাকিরা সদস্য হিসেবে থাকে। আরেকটি ক্লোনকে আক্রমণ করে আমরা নিজেদের দলকে শক্তিশালী করতাম। অনেক কষ্টে এবং পরিবারের ভালোবাসা আর সহযোগিতায় আমি নিজেকে এ গেম কেলা বন্ধ করেছি। এখন বুঝি আমি কিসের মধ্যে ছিলাম। এসব গেম কিশোরদের শেষ করে দিচ্ছে। সৃজনশীলতা নষ্ট করে হিংস্র ও প্রতিশোধপরায়ণ বানাচ্ছে।’

সফটওয়্যার নির্মাতা এসএম মাহাবুব আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কার্টুন চরিত্র পপাইয়ের জন্য এক সময় বাচ্চাদের পালংশাক খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। সেই একইভাবে যদি ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্সের বারবারিয়ান, গবলিন (অপদেবতা), পেক্কা অথবা ডাইনি হতে চায় তাহলে কী এর দায় কেউ এড়ানো যাবে?’   

তিনি বলেন, ‘যেসব ভিডিও গেম এখন দেশের কিশোর তরুণদের হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে সেগুলো বিদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে যায়। আমাদের সন্তানেরা এগুলো খেলে শেষ হয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে কেউ কথাও বলে না। এসব গেমের যে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ছে তা কেউ চিন্তাও করতে পারছে না। এসব খেলা থেকে জঙ্গিবাদের ফর্মেশন হচ্ছে, কিশোরদের প্রতিশোধ পরায়ণ বানাচ্ছে। তাদের সাবকনশাস মনে বিষয়গুলো ঢুকে যাচ্ছে। কোনও কারণ ছাড়াই মারামারি করা, চুরি, গুলি মেরে রক্তাক্ত করাই এসব গেমসের আকর্ষণ। এই আসক্তি মাদক এবং অ্যালকোহলের চাইতেও ভয়ঙ্কর।’

‘ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান্স’ এর প্রভাবেই সহিংস হচ্ছে কিশোররা!

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই বয়সেই মানুষের শারীরিক পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে সঙ্গে মানসিক পরিবর্তনও হয়। চারপাশের নানাকিছু তাদের আকৃষ্ট করে। এসব ভার্চুয়াল গেম তাদের জীবনকে প্রভাবিত ও প্রলুব্ধ করে। যে বিষয়গুলো তাদেরকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে উত্তেজিত করে সেগুলোর প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি থাকবে এটাই এই বয়সের বৈশিষ্ট্য।’

এসব ভার্চুয়াল গেম সম্পর্কে অভিভাবকরা সচেতন না হলে বিপথে যেতে পারে সন্তান। এ সচেতনতা অভিভাবকদের এখনও তৈরি হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।  ডা. মেখলা বলেন, ‘অভিভাবকরা সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কিনে দিচ্ছেন স্মার্টফোন। যেখানে সাধারণ ফোন হলেই চলে। প্রতিযোগিতায় টিকতে সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তা না করে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। যা বুমেরাং হয়ে ফিরেছে।’ সহিংসতায় ভরপুর ভিডিও গেমের কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে নৃশংস অপরাধ বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।

/এসটি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ম্যারাডোনার সংস্পর্শ পাওয়া বাংলাদেশ দলের জুয়েল কেন ‘উধাও’
ম্যারাডোনার সংস্পর্শ পাওয়া বাংলাদেশ দলের জুয়েল কেন ‘উধাও’
আ.লীগের হীরকজয়ন্তী অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাবে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
আ.লীগের হীরকজয়ন্তী অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাবে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
খুলনায় বজ্রসহ বৃষ্টি
খুলনায় বজ্রসহ বৃষ্টি
কালবৈশাখী বয়ে যেতে পারে সারা দেশে
কালবৈশাখী বয়ে যেতে পারে সারা দেশে
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো