X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস: দরকার সচেতনতা

জাকিয়া আহমেদ
১২ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:২৮আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:৩০

গত ২৮ দিন ধরে চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অস্থিসন্ধির তীব্র ব্যথায় ভুগছেন গণমাধ্যমকর্মী ফাতেমা আবেদীন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘জ্বর কমে গেলেও ব্যথা রয়ে গেছে। প্রচণ্ড ব্যথা শরীর অবশ করে দেয়। শরীরের প্রতিটি জয়েন্ট (গিঁট) ও মাসলে (মাংসপেশী) ব্যথা হয়। একটু পরপরই তৃষ্ণা পায়, প্রচণ্ড তৃষ্ণা।’ ফাতেমা বলেন, ‘আমার হাতের মাসলে ব্যথা এত বেশি ছিল যে, জ্বর কমে যাওয়ার পরেও হাত দিয়ে কিছু ধরতে কষ্ট হয়। হাত মুষ্টিবদ্ধ করতে গেলেও এখনও ব্যথা পাই। একইসঙ্গে পায়ের পাতা ও গোড়ালিতেও রয়েছে প্রচণ্ড ব্যথা। এত ব্যথা যে দাঁড়াতে ও পা ভাঁজ করতে পারি না।’ পেইনকিলার খেলে ব্যথা একটু কমলেও কিছুক্ষণের মধ্যে আবার তা ফিরে আসে বলে জানান ফাতেমা।

চিকুনগুনিয়া সাম্প্রতিক সময়ে ফাতেমার মতো আরও অনেকেই ভুগছেন এডিস মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের সংক্রমণে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত জুন-জুলাইয়ে বর্ষা মৌসুমে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও এবছর অনেকটা অসময়েই এই রোগ দেখা দিয়েছে। তবে চিকুনগুনিয়াতে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর হার একেবারেই নেই বলে এনিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আর এই ভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পেতে সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য তাদের।

জানা যায়, ২০০৫ সালে ভারতে চিকুনগুনিয়া ভয়াবহ রূপ নিলে আইইডিসিআর (জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট) বাংলাদেশে জরিপ চালায়। তখন এ রোগে আক্রান্ত কোনও বাংলাদেশি পাওয়া যায়নি। পরে ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিল।

চিকিৎসকরা বলছেন, চিকুনগুনিয়ার উপসর্গের মধ্যে রয়েছে প্রচণ্ড জ্বর, কখনও কখনও সেটা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি কিংবা তারও বেশি হতে পারে। পাশাপাশি সর্দি, হাত ও পায়ের গিঁটে ব্যথা বা ফোসকা পড়ার মতো লক্ষণগুলোও দেখা যায়। এ রোগে অনেক সময় ব্যথায় শরীর বেঁকে যায় বলে স্থানীয়ভাবে এটাকে ‘ল্যাংড়া জ্বর’ বলেও অভিহিত করা হয়। এছাড়া, মাথা ব্যথা, গায়ের কোনও কোনও অংশে র‌্যাশ ওঠাও চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ। আর চিকুনগুনিয়া জ্বরের কোনও টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি বলেও জানান তারা।

চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক এডিস মশা। আবার, এই রোগে আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর পর কোনও মশা অন্য কাউকে কামড়ালে ওই ব্যক্তিও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হবেন। এ কারণেই চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে যেন মশা কামড়াতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। আর অস্থিসন্ধির ব্যথার জন্য ঠাণ্ডা পানির সেক ও হালকা ব্যায়াম উপকারী।

ব্যক্তিগত সচেতনতাই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রধান উপায় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মশার কামড় থেকে সুরক্ষাই চিকুনগুনিয়া থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়। রাতের বেলায় মশারি টানিয়ে ঘুমানো, জানালায় নেট ব্যবহার করা, প্রয়োজন ছাড়া দরজা-জানালা খোলা না রাখা, শরীরে মশা প্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করা— এগুলোর মাধ্যমেই এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।’

ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, ‘ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া রোধে মশার জন্মস্থান, আবাসস্থল ও এর আশেপাশে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে। বাসার আশেপাশে ফেলে দেওয়া মাটির পাত্র, কলসি, বালতি, ড্রাম, ডাবের খোসা— মোট কথা, পানি জমতে পারে এমন কোনও উপকরণই রাখা যাবে না। কারণ, জমে থাকা পানিতেই এডিস মশা প্রজনন করতে পারে।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই এসব রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’

মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে জানিয়ে সানিয়া তহমিনা বলেন, ‘তারা আমাদের জানিয়েছেন, মশক নিধন কর্মসূচি তাদের নিয়মিত কাজের অংশ। তারা এ বিষয়ে আরও সচেতন হবেন এবং এরই মধ্যে মশক নিধন কর্মসূচি বাড়িয়েছেন।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে চিকনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। ডেঙ্গুর মতোই এই রোগটিও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গুতে যেমন রক্তক্ষরণ হয় এই রোগে তেমন হয় না। তবে চিকনগুনিয়া ভালো হয়ে গেলেও রোগী  প্রায় এক-দেড় মাসের মতো ক্লান্তি, অবশাদ, দুর্বলতা ও গিঁটে ব্যথার উপসর্গে ভোগে।’

/জেএ/টিআর/এফএস/এপিএইচ/
আরও পড়ুন:  

ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকার প্রতিরোধ শুরু হতে হবে ঘর থেকে
প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটি: ১৯ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা