X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভুল চিকিৎসায় বাংলাদেশি শিশুর মৃত্যু, ৩ বছর পর ভুল স্বীকার ব্রিটিশ হাসপাতালের

তানভীর আহমেদ, লন্ডন
২১ জানুয়ারি ২০১৭, ০৯:৫৬আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:৩৯

শিশু তাহমিদ ও র‌্যয়াল লন্ডন হাসপাতাল

তিন বছর পর ভুল চিকিৎসা ও দায়িত্বে অবহেলার কথা স্বীকার করলো রয়্যাল লন্ডন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটির ভুল চিকিৎসার কারণে ২০১৩ সালে ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তোফিকুল করিম সুহৃদ ও নারগিস ফারজানা ন্যান্সি দম্পত্তির ২০ মাস বয়সী সন্তানের মৃত্যু হয়। তিন বছরের আইনি লড়াইয়ের পর বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে। দোষ স্বীকার ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে ৩৫ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দেবে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস ট্রাস্ট (এনএইচএস)।

লন্ডন প্রবাসী সুহৃদ-ন্যান্সি দম্পতি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০১২ সালে ১২ মার্চ লন্ডনের কুইন্স হাসপাতালে তাদের সন্তান তাহমিদ তাওসিফের জন্ম। তাদের সন্তান শর্ট ট্রমা ভাওয়েল বা ছোট পাকস্থলী নিয়ে জন্ম নেয়। সাধারণত জন্মের সময় একটি শিশুর পাকিস্থলীর আয়তন থাকে ১০০ সেন্টিমিন্টার। কিন্তু তাহমিদের পাকস্থলী ছিল ২৭ সেন্টিমিটার। জন্মের পরপরই শিশুটির পাকস্থলীতে অপারেশনের প্রয়োজন হলে তাকে রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২০ মাস পর্যন্ত রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোনমি বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিল তাহমিদ। তার পাকস্থলী স্বাভাবিক করতে ৯টি অপারেশন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর শেষ অপারেশনটি করা হয়। অপারেশনের পর শিশুটির ক্ষতস্থানে থ্রি এম পলিফিল্ম টেপ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। অপারেশন ঠিক মতো না হওয়ায় ক্ষতস্থান দিয়ে ফ্লুইড (তরলজাতীয় পদার্থ) গড়িয়ে পাকস্থলীর ভেতরে ইনফেকশন হয়। শিশুটির বাবা-মা তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তারের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও ডাক্তারের সাক্ষাৎ পাননি। শিশুটির অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। পরদিন ১০ ডিসেম্বর শিশুটি মারা যায়।

মা-বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে তাহমিদ

তাহমিদের মৃত্যুর পর ডাক্তাররা সুহৃদ-ন্যান্সিকে এই বলে সান্ত্বনা দেন যে, জন্মের সময় দুর্বল থাকায় সে মারা গেছে। তবে এমন যুক্তি মানতে না পেরে তদন্তের দাবি করে শিুশুটির পরিবার।

ক্লিনিক্যাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগে অভিযোগ করলে কোনও প্রতিকার পাননি এই দম্পতি। বারবার অভিযোগের ফলাফল জানতে চাইলেও তারা এ বিষয়ে কথা বলে ২০১৪ সালের এপ্রিলে। ৮ মাস পর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে রয়্যাল লন্ডন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার অবহেলার কথা স্বীকার করলেও ভুল চিকিৎসার বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এরপর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেন সুহৃদ দম্পতি। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় দফা তদন্তের পর এনএইচএস চিকিৎসায় কোনও ধরনের অবহেলা ছিল না বলে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এরপর ব্যক্তিগত আইনজীবীর মাধ্যমে তৃতীয় দফা তদন্তের পর ডিসেম্বরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ও ভুল চিকিসার বিষয়টি প্রমাণিত হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়। চলতি বছরে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সুহৃদের আইনজীবী গণমাধ্যমে বিষয়টি জানান।

সুহৃদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার সন্তানের চিকিৎসার সময়ে দেখেছি অনেক বাঙালি পরিবারের শিশু এনএইচএসের গাফিলতি আর ভুল চিকিৎসার কারণে মারা যাচ্ছে। কিন্তু কোনও বাবা-মাকে সাহস করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখিনি আমি। এ কারণেই আমি এনএইচএসের ভুল চিকিৎসার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তাদের ভুল স্বীকার করতে বাধ্য করি।’

সুহৃদ-ন্যান্সি দম্পতি মনে করেন, হারানো সন্তান আর কোনোদিন ফিরবে না। তবে এই আইনি লড়াইয়ে আজ যে সত্য উম্মোচিত হলো তাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশিরা ভুল চিকিৎসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহস পাবে।

 /এসটি/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগপিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট