X
শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
৭ আষাঢ় ১৪৩২

অতীতের মতো সংসদ বয়কটের ঘটনা এখন ঘটে না: স্পিকার

এমরান হোসাইন শেখ ও পাভেল হায়দার চৌধুরী
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:১০আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:১০

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী চলতি দশম সংসদ কার্যকরভাবে চলছে বলে মনে করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ কার্যক্রমে বিরোধী দলের সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অতীতের মতো লাগাতার সংসদ বয়কটের ঘটনা এই এখন ঘটে না। সংসদ বয়কটের সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি।’ চলতি সংসদের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

সংসদ সচিবালয়ের বাসভবনে বসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সংসদ পরিচালনায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন দেশের প্রথম নারী স্পিকার। নিচে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

বাংলা ট্রিবিউন: বর্তমান সংসদকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

স্পিকার: চলতি সংসদ তিন বছর শেষ করে চতুর্থ বছরে পা দিয়েছে। সংসদ কার্যকরভাবেই চলছে। এর অন্যতম কারণ হলো সরকারি দল, বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য—সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ সংসদে রয়েছে। আমরা কোনও সংসদ বর্জন বা ধারাবাহিক/ লাগাতার কোনও বয়কট দেখছি না। সংসদে বিরোধী দল থাকবে। বিরোধী দল সংসদে বিরোধিতা করবে। এটাই গণতন্ত্রের সব থেকে বড় বিউটি অ্যান্ড স্ট্রেন্থ। আর এই ভূমিকা রাখতে হলে সব থেকে বড় দরকার বিরোধী দলের উপস্থিতির বিষয়টি। উপস্থিতি না থাকলে তো কোনও  অংশগ্রহণই তারা নিশ্চিত করতে পারবে না। কাজেই সেই দিক থেকে আমার মনে হয়, এটি এই সংসদের খুবই একটা ভালো দিক।

আরেকটা দিক দেখছি, সংসদ সদস্যদের অন্যতম প্রধান কাজ আইন প্রণয়নের সময় বিরোধী দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ। কোনও বিল পাসের সময় লক্ষ করছি, বিরোধী দলের অনেক সদস্য অনেক সংশোধনী আনছেন। আর এই ধরনের সংশোধনীগুলো আনার জন্য কিন্তু সংসদ সদস্যদের যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়। আইনটাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করতে হয়। আর যে সংশোধনী বিরোধী দলের সদস্যরা আনছেন আর বিনাবাক্যে তা নাকচ হচ্ছে বিষয়টি এমন নয়। অনেক মন্ত্রী বিলটি পাসের সময় এগুলোর অনেকদিক আমলে নিচ্ছেন। প্রয়োজনের নিরিখে অনেক সংশোধনীও তারা গ্রহণ করছেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার দৃষ্টিতে সংসদ কতটা প্রাণবন্ত? বিরোধী দল যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে?

স্পিকার: সংসদ পুরোপুরি কার্যকর ও প্রাণবন্ত। আগে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন-উত্তরে বিরোধী দলের সদস্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ খুব একটা ছিল না। এখন তারা প্রশ্ন-উত্তরে সক্রিয় অংশ নিচ্ছেন। বিরোধী দলের সদস্যরা হাত তুললে আমি তাদের সুযোগ দেই। কাজেই সংসদ কার্যক্রমে বিরোধী দলের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখি।

বাংলা ট্রিবিউন: সংসদে যেসব আইন পাস হয়েছে, এর মধ্যে কোনগুলোকে আপনার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে?

স্পিকার: সংসদে পাস হওয়া সব আইনই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়। কারণ জনগণের প্রয়োজনেই এসব আইন পাস হচ্ছে। তারপরও জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট, নারীর ক্ষমতায়ন বা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও একেবারে তৃণমূল জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত কোনও আইন যখন পাস হয়, তখন আমার জন্য বিশেষ তৃপ্তির বিষয় হয়। তার মধ্যে একটি উদাহরণ যদি দেই, তাহলে বলব সম্প্রতি পাস হওয়া মিডওয়াইফারি আইনের কথা। মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য এ ধরনের আইনের প্রয়োজন ছিল। এ রকম আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইন সংসদে পাস হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: সম্প্রতি সংসদ সদস্যরা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দাবি তুলেছেন, এ বিষয়ে আপনার কী অভিমত?

স্পিকার: সবার নিরাপত্তা বিধান করা তো সাংবিধানিক অধিকার।  সংসদ সদস্যরা সবাই তাদের যে উদ্বেগের কথা বলেছেন, সেটাকে আমি অবশ্যই আমলে নিয়েছি। এ বিষয়ে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। মন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি,  সংসদ সদস্যদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে যেসব পদক্ষেপকে তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, সেগুলো যেন অবশ্যই গ্রহণ করেন। মন্ত্রীও এ বিষয়ে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। তারা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

বাংলা ট্রিবিউন: দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু সংসদীয় কমিটির নিয়মিত মিটিং হচ্ছে না, এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

স্পিকার: আমাদের সংসদীয় সব কমিটিই সক্রিয়। সরকারি কার্যক্রম যেন ভালোভাবে হয়, তার জন্য সেটা মনিটরিংয়ের যে কাজ তা কিন্তু আমাদের কমিটিগুলো করে যাচ্ছে। তবে সব কমিটি নিয়মিত মিটিং করে না বলে আপনি যে অভিযোগের কথা জানালেন, এটি সম্প্রতি আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে আমার নজরে এসেছে। যে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক কম হয়েছে, তাদের যারা সভাপতি আছেন, তাদের সঙ্গে আলাপ করে দেখব। কোনও সমস্যা থাকলে তার সমাধান করা হবে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী

বাংলা ট্রিবিউন: দশম সংসদের শুরুর দিকটাতে বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যকে বেশ সক্রিয় দেখা গিয়েছিল। ইদানিং সেটা দেখা যাচ্ছে না। এটা কি আশাহতের কোনও বিষয়?

স্পিকার: এতে আশাহতের কোনও বিষয় নেই। আমার মনে হয় তারা সক্রিয়ই ছিলেন, এখনও আছেন। সংসদের বিষয় নিয়ে তারা যথেষ্ট আগ্রহ রাখেন। কেউ সংসদে কথা বলার জন্য ফ্লোর চাইলে আমরা সেটা দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে আপনি যেসব স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের কথা বলছেন, তাদের মধ্যে  হাজী মো. সেলিম অসুস্থ। তিনি সংসদে আসতে বা কথা বলতে পারছেন না। সে কারণে হয় তো আপনাদের এটা মনে হচ্ছে।

বাংলা ট্রিবিউন: স্পিকারের পদ এনজয় করছেন কেমন?

স্পিকার: এটা খুবই ইউনিক একটা অভিজ্ঞতা। হাউস পরিচালনা অবশ্যই একটা আর্ট। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জও। কারণ কখন কী হবে সেটা তো বলা যায় না। অনেক সিদ্ধান্ত স্পিকারকে তাৎক্ষণিক নিতে হয়ে।

বাংলা ট্রিবিউন: চলতি সংসদের এমপিদের বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন?

স্পিকার: সংসদ সদস্যদের মূল্যায়ন করার যোগ্যতা নেই। আমি নিজেও একজন এমপি। তারা আমার সহকর্মী। সবাই জনগণের আস্থা অর্জন করে ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। অবশ্যই প্রত্যেকেই জনগণের প্রতিনিধি এবং যার-যার জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: আগামী ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলকে সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে, সংসদের ক্ষেত্রে এটা আদৌ সম্ভব হবে?

স্পিকার: আমি অবশ্যই সেটা প্রত্যাশা করি। সব সময় ইতিবাচক বিষয়টি চাই। ৩৩ শতাংশ কেন ৫০ শতাংশ হলেই দোষ কী? কিন্তু অন্তত ৩৩ শতাংশ থাকতে হবে। এটা হচ্ছে একটি গোল (লক্ষ্য)। তবে এখন থেকে ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়া সম্ভব নয় যে, ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ হয়ে যাবে। পূরণ হওয়ার জন্য যেহেতু আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেজন্য আমাদের কাজ কতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: সরকার সর্বস্তরে ডিজিটাইজ করছে, এই দৌড়ে সংসদের অবস্থান কী?

স্পিকার: আমরা সব কিছু ডিজিটাইজ করার কাজ করছি। সংসদের উপস্থিতির জন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বা কার্ড দিয়ে করে তাদের উপস্থিতি রেজিস্ট্রার করতে পারবেন। এটা এখনও পুরোপুরি হয়নি। আংশিকভাবে একটি মেশিন বসানো হয়েছে। আর প্রধান ফটকে আরেকটি মেশিন বসানো হবে। যেন কার্ড সোয়ায়েপ্ট করে তারা ঢুকতে পারেন। একটি ডাটা সেন্টার করেছি। সংসদের ওয়েবসাইট করতে পেরেছি। তবে ডিজিটাইজেশনের জন্য আমাদের আরও অনেক কাজ করার রয়েছে। এজন্য আইটি সেকশনে যারা কাজ করছেন, তাদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: সংসদে আপনার ভালো লাগার কোনও বিষয় রয়েছে?

স্পিকার: সংসদে আমার যে দায়িত্ব রয়েছে, সেটা আন্তরিকতার সঙ্গে পালনের চেষ্টা করছি। এই সংসদের প্রতি জাতির একটা প্রত্যাশা রয়েছে। জনগণ ভোট দিয়ে সংসদ সদস্যদের এই সংসদে পাঠিয়েছে। এমপিদের কাজ হচ্ছে জনগণের কল্যাণে কাজ করা। সেটা পূরণের ক্ষেত্রে সংসদ যখন ভূমিকা রাখে, তখন সত্যিই ‍খুব ভালো লাগে।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন।
/এমএনএইচ/আপ-এফএস/

আরও পড়ুন- 


এমপি লিটনের বাড়িতে এখন শুধু চারজন

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হার্পার কলিন্স থেকে প্রকাশ হচ্ছে কাজী আনিস আহমেদের উপন্যাস ‘কার্নিভোর’
হার্পার কলিন্স থেকে প্রকাশ হচ্ছে কাজী আনিস আহমেদের উপন্যাস ‘কার্নিভোর’
জামিনে বেরোনোর আগেই নতুন মামলা: হয়রানির অভিযোগ
জামিনে বেরোনোর আগেই নতুন মামলা: হয়রানির অভিযোগ
যুক্তরাষ্ট্রে ৩ মাস পর মুক্ত ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী মাহমুদ খলিল
যুক্তরাষ্ট্রে ৩ মাস পর মুক্ত ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী মাহমুদ খলিল
নিয়ম ভঙ্গ করে মাদক বিক্রি, সেনাবাহিনীর অভিযানে আটক ৩
নিয়ম ভঙ্গ করে মাদক বিক্রি, সেনাবাহিনীর অভিযানে আটক ৩
সর্বাধিক পঠিত
বিভক্ত বিরোধীদের গণআন্দোলনের ডাক, ইরানি অ্যাক্টিভিস্টরা নীরব
বিভক্ত বিরোধীদের গণআন্দোলনের ডাক, ইরানি অ্যাক্টিভিস্টরা নীরব
অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ
অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ
ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে পুলিশে দেওয়ার সময় ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ
ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে পুলিশে দেওয়ার সময় ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ
শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেফতারের ঘটনায় উত্তাল রংপুর, ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেফতারের ঘটনায় উত্তাল রংপুর, ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার আটক
সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ইকবাল বাহার আটক