X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

এমপি লিটনের বাড়িতে এখন শুধু চারজন

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:৫৩আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:০২

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের একমাস হয়ে গেছে। তবে হত্যা রহস্যের কোনও কূলকিনারা হয়নি, খুনিরা ধরা পড়েনি। ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় লিটনের স্ত্রীসহ স্বজনরা বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। হত্যাকাণ্ড যেখানে ঘটে সেই গ্রামের বাড়িতে দুই কেয়ারটেকার এবং গৃহকর্মে সাহায্যকারী দুই নারী। আর বাড়ির আশপাশে পুলিশের একটি দল এখনও নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করছে। এমপি লিটনের বাড়ি
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে এমপি লিটনের বাড়ি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের সাহাবাজ (মাস্টারপাড়া) গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে পুলিশের এক কর্মকর্তাসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বাড়িতে থাকা দুই কেয়ারটেকার শাহ আলম ও সাজেদুল ইসলাম উঠানে বসে আছেন। বাড়ির ভেতরের অঙিনায় দেখতে পাওয়া যায় কুলসুম বেগম নামে এক গৃহকর্মী। তবে বুলবুলি বেগম নামে আরও একজন গৃহকর্মী থাকলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া পুরো বাড়িতে আর কেউ নেই।

লিটনের বাড়ি ঘেঁষে তার চাচার বাড়ি। সেখানে চাচি স্মৃতি বেগম থাকতেন। কিন্তু তিনিও নিরাপত্তাহীনতার কারণে এখন আর সেই বাড়িতে থাকেন না। মাঝে মাঝে দিনের বেলায় বাড়িতে এসে খোঁজখবর নিয়ে আবার চলে যান স্মৃতি বেগম।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাড়ির উঠানে আগে নিয়মিত শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করলেও এখন আর তারা কেউ সেখানে আসে না। এ কারণে পুরো বাড়ি জুড়ে চলছে সুনসান নিরবতা।

এমপি লিটনের বাড়িতে থাকা কেয়ারটেকার শাহ আলম বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে স্যারের স্ত্রী স্মৃতি ম্যাডাম ঢাকার বাসায় থাকছেন। এর মধ্যে স্মৃতি ম্যাডামসহ স্যারের দুই বোন কয়েকবার বাড়িতে আসেন। সর্বশেষ গত ২৮ জানুয়ারি তারা বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর রাতেই তারা আবার ঢাকার বাসায় চলে যান। বাড়িতে আমি আর সাজেদুল নামে এক কেয়ারটেকার আছেন। তাছাড়া দুইজন কাজের বুয়াও বাড়িতে আছেন। আমরা সবাই মূলত বাড়িটি দেখাশুনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা না থাকায় বাড়িতে কেউ নেই। পাশের বাড়ির স্মৃতি চাচিও বাড়িতে থাকেন না। যে বাড়িতে দিনরাত শতশত মানুষের উপস্থিতি থাকতো এখন সেই বাড়ি পুরো ফাঁকা। তবে বাড়ির নিরাপত্তার জন্য পুলিশের লোকজন দিনরাত ডিউটি করছেন।’


অপর কেয়ারটেকার সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘এমপি স্যারকে হত্যার পর থেকে পুরো বাড়ি আমরাই দেখাশুনা করছি। এমপি স্যারের ড্রাইভারসহ বাড়িতে ৮-১০ কেয়ারটেকার আছে। ঘটনার দিন অনেকে ছুটিতে ছিল। এছাড়া ঘটনার পর ছুটিতে থাকা কেয়ারটেকারদের পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এখন আমি আর শাহ আলম, কুলসুম ও বুলবুলি বেগম ছাড়া বাড়িতে আর কেউ নেই। আমরাই বাড়িতে থাকা গরু-মহিষ, কুকুর-বিড়াল ও হাঁসসহ পুরো বাড়ি দেখাশুনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার একমাস হলেও স্যারের খুনিরা ধরা পড়েনি। বাড়িতে পুলিশের ডিউটি থাকলেও আমরা ভয়ে আছি। যেখানে স্যারকে বাড়িতে এসে খুনিরা খুন করে পালিয়ে গেলো সেখানে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?’
গৃহকর্মী কুলসুম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমি স্যারের বাসায় কাজ করি। ঘটনার দিনেও আমি রান্না ঘরে কাজ করছিলাম। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পাই। এখন বাড়ির কেয়ারটেকারদের রান্নার কাজ করি। তবে ঘটনার পর থেকে সবসময় ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে।’
লিটনের বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সাঘাটা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রাজা মিয়া জানান, কয়েকজন পুলিশ নিয়ে তিনি বাড়ির নিরাপত্তা দিতে দায়িত্বপালন করছেন। বাড়িতে দুই কেয়ারটেকার ও দুই গৃহকর্মী ছাড়া কেউ নেই। মাঝে মধ্যে লিটনের স্ত্রীসহ স্বজনরা বাড়িতে আসলে দলীয় নেতাকর্মীসহ লোকজনের উপস্থিতি থাকে। কিন্তু এখন বাড়িতে এমপি লিটনের কোনও স্বজন নেই।

এমপি লিটনের বোন মামলার বাদী ফাহমিদা বুলবুল কাকলী বলেন ‘কাজের প্রয়োজনে আমরা সবাই ঢাকায় থাকি। ভাইয়ের হত্যার পর কয়েকবার গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল। প্রয়োজন হলে যেতে হয়। বাড়িটা এখন কেয়ারটেকাররা দেখাশুনা করে। বর্তমানে বাড়ির নিরাপত্তার জন্য সেখানে পুলিশ রয়েছে। তবে ভাইয়ের হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে যেভাবে তদন্ত এগুচ্ছে তাতে অনেকটা হতাশ হচ্ছি।’

জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘এমপি লিটনের বাড়িতে স্বজনরা থাকেন না। তারা সবাই ঢাকায় থাকেন। লিটনের বাড়িতে দিনরাত নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। এছাড়া তার বাড়ি ও স্বজনদের ঘিরে পুলিশ নজরদারি রয়েছে।’

৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের সাহবাজ (মাস্টারপাড়া) গ্রামের নিজ বাড়িতে আততায়ীদের গুলিতে আহত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় এমপি লিটনের বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী বাদী হয়ে গত ২ জানুয়ারি অজ্ঞাত পরিচয় পাঁচজনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এরপর পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষায়িত দল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনসহ খুনিদের গ্রেফতারে কাজ শুরু করে।

আরও পড়ুন: কাঁচা চামড়া ঢোকেনি, হাজারীবাগ পুলিশি পাহারায়

/এফএস/আপ-এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পিকআপের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গিয়ে ২ শ্রমিক নিহত
পিকআপের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গিয়ে ২ শ্রমিক নিহত
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত