X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্রগতি নেই জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে

এস এম আববাস
০৩ মার্চ ২০১৭, ০৮:১০আপডেট : ০৩ মার্চ ২০১৭, ১৬:১৩

বাংলাদেশ সরকার ঢাক ঢোল পিটিয়ে সরকার জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দিলেও চোখে পড়ছে না এর দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি। দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন করতে বিভিন্ন আইন, নীতিমালা করা হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। সরকারের সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, ‘দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। শতাংশে উল্লেখ করে হিসাব করার মতোও অর্জন হয়নি।’ তবে এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাবেক আমলারা।
সরকারের শুদ্ধাচার কৌশল নীতি অনুযায়ী, সাধারণভাবে নৈতিকতা ও সততা প্রভাবিত আচরণের উৎকর্ষই শুদ্ধাচার। দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে রাষ্ট্র ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মধ্যে বিশুদ্ধ আচরণ সৃষ্টি করা এবং তা কর্মক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করার কৌশলই শুদ্ধাচার কৌশল। যা বাস্তবায়ন করতে সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, দফতর, অধিদফতর, পরিদফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মধ্যে যারা শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করবে তাদের মধ্যে এবং সরকারের নীতি বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের মধ্যে এ বিষয়ে অনীহা রয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আমলা এবং আওয়ামী লীগ দলীয় নেতারা।
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য সরকারি প্রশাসন ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিশুদ্ধ আচরণ জরুরি। সরকারের শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন সে লক্ষেই। ইতোমধ্যেই কিছু অর্জন হয়েছে। শুদ্ধাচার কৌশল পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন তৈরি করা সম্ভব হবে। তখন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতিমুক্ত থাকতে বাধ্য হবেন।
বর্তমানের সরকারের সময় অবসরে যাওয়া বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও শুদ্ধাচারের কৌশল বাস্তবায়নের অগ্রগতি নেই বলে অভিমতও দিয়েছেন। সরকারের সদ্য বিদায়ী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি হয়নি। কার্যক্রম খুবই আধুনিক হলেও বাস্তবায়ন সেভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে না। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হবে বলে মনে করি। শুদ্ধাচার কৌশলের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় জড়িত, সে কারণেই বাস্তবায়ন সেভাবে হচ্ছে না হয়তো।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কিছু প্রোগ্রেস আছে। এই কাজে টাইম লাইন নেই। জাতির শুদ্ধাচার ঘটাতে যুগ যুগও লাগতে পারে। তবে লেগে থাকতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এই কৌশল বাস্তবায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর, পরিদফতর, অধিদফতর ও সংস্থাকে এ কৌশল বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে কমিটি রয়েছে শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য। জাতীয় পর্যায়েও কমিটি রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে শুদ্ধাচারের কৌশল বাস্তবায়ন মনিটরিংয়ের জন্য। জাতীয় কমিটির প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে এই উদ্যোগ নেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞার মাধ্যমে। সাবেক এই সচিব এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞে হাত দিলেও কিছুদিন পরেই অবসরে যান।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়, প্রধান শেখ হাসিনা চান জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তি জীবনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। ব্যক্তির নৈতিকতা ও সততার উৎকর্ষ সাধন করতে। কারণ, প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা করার আগেই ব্যক্তি পর্যায়ে শুদ্ধাচার প্রয়োজন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, সরকারি কর্মচারীদের বৈধ পারিশ্রমিক ছাড়াও বকশিস, কোনও বস্তু নেওয়া, কারও ক্ষতি সাধন করার উদ্দেশ্যে আইন অমান্য করা, বেআইনি ব্যবসা পরিচালনা করা, কাউকে সুবিধা দিতে আইন অমান্য করা, অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করা, ভুল রেকর্ড ও লিপি প্রস্তুত করা, অসাধু উপায়ে সম্পত্তি আত্মসাৎ, প্রতারণা, জালিয়াতি, সরকারি নথি ও রেজিস্ট্রার জামানত উইল জাল করা, হিসাব বিকৃত করা, অর্থ পাচার করার মতো ঘটনা ঘটছে। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ফল আসছে না। এই অবস্থা থেকে পুরো প্রশাসনযন্ত্রকে মুক্ত করতেই জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শুদ্ধাচারের অভাবে বিভিন্ন আইন ও কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধনে বড় বড় বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন আইন তৈরি করা ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হলেও তা কাজে আসছে না। তাই বর্তমান এ পরিস্থিতিতে এগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও সামঞ্জস্য প্রয়োজনে শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়।
শুধু সরকারি খাত নয়, এনজিও এবং বেসরকারি খাতেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিস্তৃতি লাভ করেছে। সরকারি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজনের দুর্নীতির সুযোগ বেড়েছে। সে কারণে দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এই কৌশল কাজে আসবে। যদিও বাস্তবে চার বছরে অগ্রগতি খুবই কম বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, আমাদের অর্জন রয়েছে। ই-টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে দুর্নীতি কমানো গেছে। অন্যান্য সেক্টরেও কমানো গেছে। দুর্নীতি করলে চাকরি হারানো এবং ফৌজদারি মামলায় শাস্তি পাওয়ার মতো উদাহরণ তৈরি হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন সেক্টরে শুদ্ধাচার চালালে প্রশাসন দুর্নীতিমুক্ত হবে। ব্যক্তির আচরণও পরিবর্তন হবে, তা বাধ্য হয়ে হলেও।

/এসএমএ/ টিএন/আপ-এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ আজ
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ আজ
যশোরে তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মাছের পোনা, ক্ষতি ‌‘২০ কোটি টাকা’
যশোরে তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মাছের পোনা, ক্ষতি ‌‘২০ কোটি টাকা’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ