X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে রোহিঙ্গারা!

উদিসা ইসলাম
২০ মার্চ ২০১৭, ১০:২৪আপডেট : ২০ মার্চ ২০১৭, ১৪:৩৯

টেকনাফের হ্ণীলা অনিবন্ধিত শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বেশিরভাগ রোহিঙ্গা তাদের নিজ ভাষায় শুদ্ধ করে কথা বলেন না। এমনকি নিজেদের লিপির পরিচয়, ব্যবহার সম্পর্কেও জানেন হাতে গোনা কয়েকজন। শুধু ভাষা নয়, প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে পোশাক, খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন এনেছেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিক্ষিত অংশ।

শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসে সেই স্মৃতি ভুলতে রোহিঙ্গারা নিজ ভাষার ব্যবহার ও সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে।

তবে ভাষা বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাষা, পোশাক,জীবনযাপন বদলে যাওয়াটা রোহিঙ্গাদের ‘আত্মরক্ষার কৌশল’। রোহিঙ্গারা এখন বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পাবর্ত্য তিন জেলার প্রধান ভাষা ‘চাটগাঁইয়া’ বাংলায় কথা বলে। তবে তাদের ভাষায় আরবী, উর্দু, ফার্সি ও বার্মিজ ভাষার প্রভাব রয়েছে। ফলে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষ ভাষার কারণে রোহিঙ্গাদের সহজে চিনতে পারলে, অন্য অঞ্চলের মানুষ চিনতে পারে না।

রোহিঙ্গা রিফিউজি ইয়ুথ সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ ইউনুস আরমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বিশ্বে মানুষের আগ্রহ থাকলেও নিজেদের ভাষার প্রতি মনোযোগ নেই তাদের।চাটগাঁইয়া ভাষা রোহিঙ্গারা এমনভাবে রপ্ত করছে যে, নিজেদের ভাষায় ভুলতে বসেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পড়ালেখায় রোহিঙ্গা ভাষার লিপির ব্যবহার না করায় তা আমরা ভুলতে বসেছি, এটা সত্য। তবে এটাও সত্য, শুধু নিরাপত্তাহীনতার কারণে রোহিঙ্গারা রাতারাতি নিজেদের পোশাক-খাদ্যাভ্যাস ত্যাগ করছে।’

জাফর আলম দীপু নামের এক রোহিঙ্গা ফার্মেসির মালিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা নারীরা সধারণত থামি-ব্লাউজ ও পুরুষরা লুঙ্গি পরে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা এগুলো ব্যবহার করছি না। এখানে এখন নারীদের পছন্দ ত্রিপিস।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিশুরা নিজের ভাষায় লিখতে পড়তে পারে না। এদেশের স্কুলে রোহিঙ্গা শিশুরা বাংলা শিখছে। ফলে তারা নিজের ভাষা ভুলে যাচ্ছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, কারণ এক সময় আমরা নিজের দেশে চলে যাবো। তাই নিজের ভাষা ভুলে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’

বর্তমান মিয়ানমারের রোহিং এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ভাষায় চট্টগ্রামের স্থানীয় উচ্চারণের প্রভাব রয়েছে। উর্দু, হিন্দি, আরবি শব্দও রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভাষা বিজ্ঞানী হাকিম আরিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ভাষা চট্টগ্রামের ভাষার অপভ্রংশ। ভাষা বিজ্ঞানে জরুরি একটি বিষয় হলো, ভাষার পরিবর্তন, যা প্রতিনিয়ত হয়। ধরা যাক, ব্যক্তি তার ভাষা নিয়ে নিরাপদ বোধ করছেন না, তার পোশাক আচার-আচরণ সমাজে তাকে অস্বস্তিতে ফেলছে, তখন সে জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটায় এমন যেকোনও কিছুকেই বদলে ফেলতে চান।’

তিনি আরও বলেন, ‘শহরে মানুষের ভাষা পরিবর্তন ইচ্ছেকৃত আর রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে অনিরাপদবোধ থেকে। তাদের মনে এর প্রভাব আছে। এটি আত্মরক্ষার কৌশল ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু এই আত্মরক্ষার কৌশল নিতে গিয়ে কয়েক প্রজন্ম পর তারা তাদের নিজস্বতা হারিয়ে ফেলবে।’

/ইউআই/এসএনএইচ/এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পিছিয়ে পড়েও সানডে-ইমনের গোলে ফাইনালে মোহামেডান
পিছিয়ে পড়েও সানডে-ইমনের গোলে ফাইনালে মোহামেডান
আচমকা এলো দেড় মিনিটের উসকানিমূলক ‘তুফান’!
আচমকা এলো দেড় মিনিটের উসকানিমূলক ‘তুফান’!
প্রকল্প নেওয়ার আগে জনগণের উপকার বিবেচনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
প্রকল্প নেওয়ার আগে জনগণের উপকার বিবেচনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
গাবতলীতে হবে মাল্টি মোডাল বাস টার্মিনাল: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
গাবতলীতে হবে মাল্টি মোডাল বাস টার্মিনাল: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচনছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল