X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

যাকে হত্যার টার্গেট করেছিল মুফতি হান্নান

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ এপ্রিল ২০১৭, ০৫:২৯আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:১৯

১৩ বছর আগে যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়ে দেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ড শুরু করা নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) প্রধান মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বুধবার (১২ এপ্রিল) রাতে। যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে হামলার পর ২০০৫ সালের মধ্যে মুফতি হান্নানের নির্দেশে অন্তত ২০টি জঙ্গি হামলা হয়েছে। এসব জঙ্গি হামলার মধ্যে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ হলেও মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর হত্যা চেষ্টা মামলায়। এ হামলার মূল টার্গেট ছিলেন আনোয়ার চৌধুরী।

গ্রেনেড হামলায় আহত অবস্থায় তোলা আনোয়ার চৌধুরীর ছবি। এপি সিলেটে হজরত শাহজালাল মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালের ২১ মে বাংলাদেশে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। গ্রেনেডটি আনোয়ার চৌধুরীর গায়ে লেগে মাটিতে পড়ে বিস্ফোরিত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন। এছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামে আরেক ব্যক্তি হাসপাতালে মারা যান। আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন ওই ঘটনায় আহত হন।
আনোয়ার চৌধুরী এখন পেরুতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ২০০৪ সালে তিনি বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাই কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। বাংলাদেশে দায়িত্ব নেওয়ার ১৮ দিনের মাথায় তাকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছিল। এরপরও ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আনোয়ার চৌধুরী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। ১৯৫৯ সালে সিলেটের জগন্নাথপুর থানার প্রভাকর পুর গ্রামে তার জন্ম হয়। ইউনিভার্সিটি অব সালফোর্ড থেকে উচ্চ শিক্ষা শেষে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন। ২০০৩ সালে আনোয়ার চৌধুরী ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসে (এফসিও) যোগদান করেন। এর আগে তিনি প্রাইভেট সেক্টর, দ্য রয়েল এয়ারফোর্স, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং কেবিনেট অফিসের ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন শেষে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনের পরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে এফসিও-তে পুনরায় যোগদেন। এ সময় তিনি এফসিও’র মাল্টিলিটারেল পলিসি বিভাগের দায়িত্ব ছিল তার ওপর। এরপর ২০১৪ সালে তাকে ব্রিটিশ সরকার পেরুতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়। এখনও তিনি পেরুর হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশে হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আসার পর সুনামগঞ্জে তার জন্মস্থান ও হযরত শাহজালালের (রা.) মাজারে তিনদিনের সফরে গিয়েই গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েছিলেন এই কূটনীতিক। হামলায় তিনি অল্প আহত হলেও তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা এক পুলিশের মৃত্যু হয় বিস্ফোরণে।

পেরুতে স্থানীয় শিশুদের সঙ্গে আনোয়ার চৌধুরী

হামলার পর আনোয়ার চৌধুরী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছিলেন, ‘বোমাটি ছুঁড়ে মারার পর আমার পাকস্থলীতে আঘাত করে কিন্তু তখন বিস্ফোরিত হয়নি। এরপর তা জেলা প্রধানের পায়ে কাছে মাটিতে পড়ে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমি এর বেশি কিছু বা কিভাবে ঘটেছে তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। আমি পায়ে ব্যথার অনুভূতি পাচ্ছি।’

হামলায় আনোয়ার চৌধুরীর আহত হওয়ার বিষয়ে ওই সময় সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ড. আবদুস সালাম বলেছিলেন, ‘হাইকমিশনার হাঁটুর নিচে স্প্লিন্টারের আঘাতের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’

ওই সময় ব্রিটিশ হাইকমিশন জানিয়েছিল, হামলার পর আনোয়ার চৌধুরীকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা নিয়ে আসা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তাও জানিয়েছেন,  ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (র.)-এর মাজারে বাংলাদেশে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা করে মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীরা।এই মামলাতেই ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে মুফতি হান্নানের। 

উল্লেখ্য,  আনোয়ার চৌধুরীর ওপরে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ওই দিনই সিলেট কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। ২০০৭ সালের ৭ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, তার ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

মামলায় ৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সামীম মো. আফজাল রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মুফতি হান্নান

ওই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন হান্নান ও বিপুল। আর রিপনের পক্ষে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত রায়েও ওই তিন আসামির সর্বোচ্চ সাজার সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।

গত বছরের ৭ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ওই তিন জঙ্গির আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বিভাগ খারিজ করে দেন। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের (মুত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন) শুনানি শেষে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি রায় দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।  ওই রায়ে মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং দু’জনের যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল রাখা হয়।

এরপর রায় পুনর্বিবেচনার আপিলও খারিজ হয়ে গেলে গত ২১ মার্চ তাদের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠানো হয়। সবশেষে ছিল কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা। সেটিও ১০ এপ্রিল প্রত্যাখ্যাত হলে কারাবিধি অনুযায়ী বুধবার রাত ১০টায় তাদের দণ্ড কার্যকর করা হয়।

/এএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলায় বিজয়ী হলেন যারা
কিশোরগঞ্জের তিন উপজেলায় বিজয়ী হলেন যারা
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার