X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকারের তিন কৌশল

শেখ শাহরিয়ার জামান
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:০৮আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০০:৪২

কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা (ফাইল ছবি) রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ত্রিমুখী কৌশল নিয়েছে সরকার। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস দমন-পীড়ন ও গণহত্যার মুখে পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরানোকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। এ জন্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। একইসঙ্গে, প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত হতভাগ্য এই মানুষগুলোর খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো চাহিদা পূরণের দিকেও মনোযোগ রয়েছে সরকারের।

পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) তার কার্যালয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা আমরা আশা করি না। এর ফলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, পরিবেশ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে।’

পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক (ফাইল ছবি)

সচিব আরও বলেন, ‘এ অবস্থায় আমরা একটি জিনিসই চাই, সেটি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন। এজন্য মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা, আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখা ও বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার দিকে মনোযোগ দিয়েছি।’

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে গত এক মাসে চার লাখ ৩৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া, আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা গত ২৫ আগস্টের আগে থেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

উখিয়ার বালুখালী এলাকায় রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসতি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সবসময় দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। গত বছরের অক্টোবরে রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গেই মিয়ানমারকে চিঠি দিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দূত কোনও ম্যান্ডেট ছাড়া বাংলাদেশ সফর করেন। এরপর গত জুলাই মাসে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বাংলাদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা উ থং টিনের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। সেখানে মিয়ানমার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রস্তাব করে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের অফিসের ইউনিয়ন মন্ত্রী চো টিন্ট সোয়ে কে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানায়। মিয়ানমারের মন্ত্রী বাংলাদেশে কবে আসবেন সেটি এখনও ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক যোগাযোগ

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে নতুন করে রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু হলে আগের যোগাযোগের ফলে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলাটা অনেক কার্যকরী হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দু’বার আলোচনা হয়েছে এবং এ সপ্তাহে আবারও আলোচনা হবে। মিয়ানমার সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন রাষ্ট্র বিবৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এ বিষয়ে সোচ্চার হয়েছে। বাংলাদেশ সবার সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলেছি, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চাই এবং এই মানবিক দুর্যোগের জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানিয়েছি, মিয়ানমার তার সামরিক অভিযানের জন্য সন্ত্রাসবাদকে দায়ী করে থাকে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই সন্ত্রাস দমনে যৌথ অভিযানের প্রস্তাব মিয়ানমারকে দিয়েছি। এছাড়া, নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনার জন্য বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস চুক্তি করারও প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ। গত দুই বছর ধরে প্রস্তাবটি বিবেচনা করছে মিয়ানমার।

ত্রাণ ব্যবস্থাপনা

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তাদের এখন জরুরিভিত্তিতে বাসস্থান, পানি, খাদ্য, স্যানিটেশন ও অন্যান্য জিনিসের প্রয়োজন। এ বিষয়ে সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। এছাড়া, স্থানীয় জনগণ, সাহায্য সংস্থা ও বিভিন্ন রাষ্ট্র তাদের জন্য ত্রাণ দিচ্ছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের শরণার্থী মর্যাদা দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই। কারণ এর ফলে তাদের বাংলাদেশে অবস্থান ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়বে।

রোহিঙ্গাদের শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া হলে তাদের সব মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। কেননা, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, ওই চাহিদাগুলো শরণার্থীদের অধিকারে পরিণত হয়। বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় সাড়ে ৮ লাখ রোহিঙ্গার মৌলিক চাহিদা পূরণ করা বাংলাদেশের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

এছাড়া প্রত্যাবাসনের সময়ে শরণার্থী মর্যাদাপ্রাপ্ত রোহিঙ্গারা যদি নিজের ইচ্ছায় ফেরত যেতে রাজি না হয়, তবে তাদের কোনও অবস্থাতেই ফেরত পাঠানো যাবে না। বিভিন্ন সমস্যা বিবেচনা করে সরকার তাদের শরণার্থী  ঘোষণা করার পক্ষপাতি নয় বলে জানান তিনি।

 

/এএম/
সম্পর্কিত
রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা চালাতে ওআইসির সহযোগিতা চাইলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
১২ ঘণ্টার মাথায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরেক যুবককে হত্যা
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে হত্যা
সর্বশেষ খবর
সড়ক সম্প্রসারণকাজে ৩৪৩ গাছের মৃত্যু, জনমনে ক্ষোভ
সড়ক সম্প্রসারণকাজে ৩৪৩ গাছের মৃত্যু, জনমনে ক্ষোভ
ভারতে আজ তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে
ভারতে আজ তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে
বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
টিভিতে আজকের খেলা (৭ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৭ মে, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস