মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমার সেনাপ্রধান মিন আং হ্লাইংয়ের বিচারের দাবি জোরালো হয়ে উঠছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার জন্য আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে মিলিত হচ্ছেন। সেখানে মিয়ানমার সেনাপ্রধানের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের বিষয়টি উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবসময় ইইউ’র সহযোগিতা চেয়ে এসেছি। ২৬ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে আমরা কাজ করছি।”
পররাষ্ট্র সচিব অবশ্য এর বেশি বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে তার মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘ইইউভুক্ত প্রায় ১৫টি দেশে আমাদের দূতাবাস আছে। এসব দূতাবাসের কার্যালয়ে এ বিষয়ে তাদের স্ব স্ব এখতিয়ারভুক্ত দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তার মন্তব্য— মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সদস্য নয়, ফলে এর কোনও নাগরিকের বিচার করতে হলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে সুপারিশ করতে হবে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার এখনও চীন ও রাশিয়ার সমর্থন পেয়ে থাকে। তবে মিয়ানমার সেনাপ্রধানের বিচারের বিষয়ে ইইউভুক্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে একমত হলে চীন ও রাশিয়ার অবস্থান পরিবর্তনে হয়তো ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।
অভিযোগ রয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের সেনাপ্রধানের নির্দেশে রাখাইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়েছে। এর মধ্যে আছে নির্বিচারে শিশুসহ নিরীহ জনগণকে হত্যা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ।
মেডিসিন স্যানস ফ্রন্টিয়ারের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর এক মাসেই হত্যা করা হয়েছে ৭ হাজার নিরীহ রোহিঙ্গাকে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৭৩০। এছাড়া জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, নির্যাতনের শিকার অথবা সাক্ষী হয়েছেন বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় প্রত্যেক রোহিঙ্গা নারী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘মিয়ানমার সামরিক বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, এ বিষয়ে প্রমাণাদি সংগ্রহ করা হয়েছে ও এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
সম্প্রতি মিয়ানমার সেনাপ্রধান নিজের ফেসবুক পেজে স্বীকার করেছেন, রাখাইনে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ইতোমধ্যে গণহত্যাসহ আরও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণাদি প্রকাশ করেছে বলেও তিনি জানান।