X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যস্ততা বেড়েছে সাভারের ট্যানারি মালিকদের

শফিকুল ইসলাম
১৫ আগস্ট ২০১৮, ০১:৪৭আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০১৮, ১০:৫৩

ট্যানারি কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন সাভারের ট্যানারি মালিকরা। বাৎসরিক চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি চামড়া সংগ্রহ করা হয় এই এক মৌসুমে। তাইতো এই ব্যস্ততা। আগামী ২২ আগস্ট পালিত হবে কোরবানি ঈদ। আশা করা হচ্ছে এ বছর এক কোটি ১৫ লাখেরও বেশি পশু (গরু, মহিষ, ছাগল ভেড়া, দুম্বা ও উট) কোরবানি হবে। সারা বছর দেশের চামড়া খাত পরিচালনায় এসব  পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও মজুদ করতে হবে। সেজন্য চলছে গুদাম পরিস্কার। ট্যানারি পল্লীর পাশাপাশি চামড়া সংরক্ষণের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকার ছোট ব্যবসায়ীরা। সাভারে যাওয়ার আগে সারা দেশে জবাই করা পশুর চামড়া  জড়ো হয় এই পোস্তায়। এখান থেকেই কাঁচা চামড়ায় লবন যুক্ত করে তা ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়।
জানতে চাইলে সাভারের ট্যানারি পল্লীর সোনার বাংলা ট্যানারির ম্যানেজার গোলাম রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন,  সারা বিশ্বে চামড়া খাতের সংকটময় মূহুর্ত চললেও সারা বছর শিল্প চালাতে প্রয়োজনীয় চামড়া এই সময়েই সংরক্ষণ করতে হবে। তাই প্রস্তুতি চলছে। তিনি জানান, গত বছর কেনা কিছু চামড়া রয়ে গেছে, সেগুলোকে সামনে রেখে গুদামের ভেতরে নতুন চামড়া সংরক্ষণ ও মজুদের জন্য স্থান সঙ্কুলানের কাজ চলছে। কোরবানির পরেও এই কাজ চলবে । কারণ সারা দেশের চামড়া পোস্তা হয়ে সাভারে আসতে মাসখানেকের বেশি সময় লেগে যায়।    

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত হিসেবে বিবেচিত। ২০২১ সালের মধ্যে এই খাত থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই নিম্নমুখী এই খাতের রফতানি আয়। তাই এ খাতের উন্নয়নে সরকার খুবই সতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, শত সংকটের মধ্যেও দেশের চামড়া খাত ঘুরে দাঁড়াবে, এটি আমার বিশ্বাস। সরকারের পক্ষ থেকে চামড়া খাতের উন্নয়নে সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেওয়া হচ্ছে নগদ প্রনোদনা। ব্যাবসায়ীরা যতো সংকটের কথাই বলুক, কোরবানির সময় যেহেতু সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল হিসেবে অর্ধেকেরও বেশি চামড়া সংরক্ষণ করতে হয়, তারা তা করবে। এ ক্ষেত্রে সরকার ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণসহ সব ধরণের সুবিধা নিশ্চিত করবে। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই গতবছরের চেয়ে কম মুল্যে এ বছরের জন্য চামড়া কেনার দর ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এ বছর চামড়া সংগ্রহে ব্যবসায়ীদের সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, সাভারে স্থানান্তর হওয়ার ফলে অনেক ট্যানারি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানিসহ যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কাঁচা চামড়া সংগ্রহসহ নানা দুর্ভোগে পড়তে হয়। পর্যাপ্ত সুযোগ না পেলে ২০২১ সালে ৫ হাজার কোটি টাকা আয় অসম্ভব।

লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহিন বলেন, বাংলাদেশে ট্যানারি স্বাস্থ্যকর ও কর্মীদের কাজের পরিবেশ ভালো করার পরও রফতানি আয় কমছে। ফলে বুঝতে হবে, পরিকল্পনার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। নতুন শিল্পনগরী, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না করা হলে এ খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়। সংকট ঠেকাতে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত সংস্থা রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, সদ্যসমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ১৩৮ কোটি ডলারের বিপরীতে আয় হয়েছে ১০৮ কোটি ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। এর আগের বছর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ১২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১২৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি ডলার। এ ছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১১৩ কোটি ডলারের চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রফতানি করা হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছিল ১১৬ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,  ২০১৩ সাল থেকে চামড়ার দাম ধারাবাহিকভাবে নিম্নগামী। যা ২০১৮ সালেও অব্যাহত রয়েছে। ২০১৩ সালে ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া কেনেন ৮৫-৯০ টাকায়। ঢাকার বাইরে তা কেনা হয় ৭৫-৮০ টাকায়। এ ছাড়াও সারাদেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ছিল ৫০-৫৫ টাকা।

একইভাবে ২০১৪ সালে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। ঢাকার বাইরে এ দর ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত মহিষের চামড়ার দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও খাসির চামড়ার দর ছিলো ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আর বকরির চামড়ার দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

২০১৫ সালে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ ও ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া প্রতি বর্গফুট মহিষের লবণযুক্ত চামড়ার দর ধরা হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর দেশজুড়ে খাসির প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া ২০ থেওকে ২২ টাকা ও বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা।

২০১৬ সালে গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার প্রতি বর্গফুটের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৫০ টাকা। খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ ও বকরির চামড়া ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

গতবছর ২০১৭ সালে গরুর চামড়ার প্রতি বর্গফুটের নির্ধারিত দাম ছিল সর্বনিম্ন ৪০ টাকা। এটি ছিল সারাদেশের গড় দাম। তবে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০ থেকে ৫৫ ও ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। খাসির চামড়ার মূল্য সারাদেশে প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ ও বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দর ৪৫ থেকে ৫০ আর ঢাকার বাইরে দর ঠিক করা হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর সারাদেশে প্রতিফুট খাসীর চামড়ার দর ঠিক করা হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা।  

/জেজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ