রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরনো কারাগারের অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের পরিধি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জানা গেছে, জাদুঘরের বর্তমান কাঠামো ঠিক রেখে নির্মাণ করা হবে পৃথক আরেকটি ছয়তলা ভবন। সেখানে বড় পরিসরের স্থানে রাখা হবে জাদুঘরের বিভিন্ন সরঞ্জাম।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাঙালি জাতির ইতিহাস তথা বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, চার নেতার স্মৃতি জাদুঘর এবং ঢাকার মধ্যযুগের ঐতিহ্য সংরক্ষণ, কারা অধিদফতরের আওতায় সরকারি জমির পরিকল্পিত ব্যবহার,উন্মুক্ত নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি,গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি এবং পুরান ঢাকার ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যেই এই নতুন প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পুরনো এই কারাগারের আয়তন ২১ একর।এর মধ্যে নতুন করে ৬ তলা ভিতের ওপর ৬ তলা ভবন করে নির্মাণ করা হবে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর সংরক্ষণ মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স। নির্মাণ করা হবে ৫ তলা ভিতের ওপর ৫ তলা স্কুল। জাদুঘরের অভ্যন্তরে রাস্তা নির্মাণ করা হবে। থাকছে ২৭ হাজার ২৯৮ বর্গাকার দৈর্ঘ্যের ফুটপাত ও ওয়াকওয়ে। তিন তলা ভিতের ওপর দোতলা একটি এবং দুইতলা ভিতের ওপর দোতলা আরেকটিসহ মোট দুটি সুসজ্জিত মসজিদ নির্মাণ করা হবে। জাদুঘরে ল্যান্ডস্কেপিংসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কার্যক্রমও থাকবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, “বর্তমান পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এর ইতিহাস,ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন’ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে তা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ। এ প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের এই অর্থ পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে। প্রকল্পটি সুরক্ষা সেবা বিভাগের আওতায় কারা অধিদফতর এবং ইএনসিজ ব্রাঞ্চ, ওয়ার্কস ডাইরেক্টরেট, ঢাকা সেনানিবাস বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে কারাগার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ২৩০ বছরের। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে ১৭৮৮ সালে একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নির্মাণের মাধ্যমে তদানীন্তন পূর্ববঙ্গের ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের এই কারাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কালের পরিক্রমায় এবং বাস্তব প্রয়োজনে নাজিম উদ্দিন রোডের এ কারাগারটি কেন্দ্রীয় করাগার হিসেবে গড়ে তোলা হয়। কারাগারটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকারী দেশপ্রেমিক অসংখ্য বাঙালির ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত স্থান। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন হতে শুরু করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত আন্দোলনকারী অসংখ্য দেশপ্রমিক এই কারাগারে কারাবরণ করেছেন।
সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারটি ১৮০৬ সালে ২১ দশমিক ৯০ একর জমির ওপর নির্মিত হয়। পুরান কারাগারটি জরাজীর্ণ এবং বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পশ্চিম পাশে নতুনভাবে নির্মাণ করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সব কয়েদীকে নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে পুরনো কারাগার এলাকাটির কয়েকটি কক্ষ কারাগার ও একটি বিশেষ মামলার এজলাস হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বেশিরভাগ অংশ অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। পুরান ঢাকার এই কেন্দ্রীয় কারাগারটির সুদীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরা এবং কারাগার সংলগ্ন ২১ দশমিক ৯০ একর সরকারি জমির পরিকল্পিত ব্যবহারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতেই সরকারের নিজস্ব মোট ৫৩২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবিত ডিপিপি’র ওপর গত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল। পিইসি সভার আলোচনা ও সিদ্ধান্তের আলোকে পাওয়া পুনর্গঠিত ডিপিপি’র মোট ব্যয় বাড়িয়ে ৬০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয় এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০২০ সাড়ে ৩১ ডিসেম্বর নির্ধারণ করে ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয় এবং তা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয় যা ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে অনুমোদন লাভ করে। একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পটি আগের প্রকল্পের তুলনায় ৭৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বেশি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেল জীবনের ইতিহাস তথা বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, জাতীয় চার নেতার স্মৃতি জাদুঘর এবং ঢাকার মধ্যযুগের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও কারা অধিদফতরের আওতায় কারাগারের সরকারি জমির পরিকল্পিত ব্যবহার করতে হবে, এর জন্যই নতুন প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উন্মুক্ত নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সুযোগ সৃষ্টি হবে গবেষণারও। একইসঙ্গে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি।