X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামের ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘর’-এর নাম বদলে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর’ চান নওফেল

এস এম আববাস
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:২১আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:৫৮

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের বর্তমান নাম জিয়া স্মৃতি জাদুঘর। এবার এই নাম বদলে করা হবে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর। (ছবি: অনলাইন থেকে সংগৃহীত)

শিক্ষার্থী ও পর্যটকসহ ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস তুলে ধরতে চট্টগ্রামের পুরাতন সার্কিট হাউস ভবনের নাম পরিবর্তন চান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। স্বাধীনতা যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি বিজড়িত এই ভবনটি বর্তমানে ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে সরকারিভাবে সংরক্ষিত। কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি তাতে পুরোপুরি উঠে না আসায় ভবনটির নাম আবারও পরিবর্তনের চান তিনি। জিয়া স্মৃতি জাদুঘর এর বদলে এখন এই ভবনের নাম ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর’ রাখার পক্ষপাতী তিনি। এ বিষয়ে সরকারকে প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে সংসদেও প্রস্তাব আকারে উত্থাপন করা হবে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান তিনি।

শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ভবনটিকে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর করার প্রস্তাব দেওয়া হবে। একাত্তরে এই সার্কিট হাউসটি ছিল পাকিস্তানি সেনাদের সামরিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এখান থেকেই তারা পুরো শহর নিয়ন্ত্রণ করত। সার্কিট হাউসের বিশেষ কয়েকটি কক্ষে মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ ও নারীদের নির্যাতন করা হতো। ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে শক দিয়ে ভয়াবহ নির্যাতন করা হত মুক্তিকামী বাঙালিদের। নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করা হত। এখানে গণকবর রয়েছে। রয়েছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সরঞ্জাম। এসব ইতিহাস ম্লান করে করে দিয়ে এই ভবনটিকে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর করা হয়েছে। কিন্তু, জাতিকে সঠিক ইতিহাস জানাতে এটিকে আমরা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি যাদুঘরে রূপান্তর করবো।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস। এখানে মুক্তিযুদ্ধের নির্মম ঘটনার অনেক স্মৃতি থাকলেও সাধারণ জনগণের তা জানার তেমন ব্যবস্থা নেই। মানুষ কেবল জেনেছে, পরবর্তী সময়ে এখানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর ঘটনা। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডটিই কেবল মানুষের সামনে আসে। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের মুক্তিযুদ্ধের সেই ইতিহাস জিয়া স্মৃতি জাদুঘর নাম দিয়ে জানানো সম্ভব নয়।এসব কারণেই ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের নাম বদলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস ছিল পাকিস্তানি সেনাদের সামরিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এখান থেকেই তারা পুরো শহরকে নিয়ন্ত্রণ করত। সার্কিট হাউসের বিশেষ কয়েকটি কক্ষ ছিল নির্যাতনের জন্য। এসব কক্ষের একটিতে ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতন করা হত। ইলেকট্রিক চেয়ারের মাধ্যমে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বাঙালিদের নির্যাতনের ব্যবস্থা ছিল এই কক্ষে। নির্যাতনের পর অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে হয়েছে। এছাড়াও এখানে নারী নির্যাতনের ব্যবস্থা ছিল। দোতলার দুটি কক্ষের একটি কক্ষে শহর থেকে নারীদের ধরে নিয়ে রাখা হত। আর অন্য বিশেষ কক্ষটি থাকত সুসজ্জিত। সেখানে বন্দি নারীদের রাতভর ধর্ষণ ও নির্যাতন করতো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসাররা। পরে তাদের পাঠানো হতো সিপাহীদের কাছে। কোনও নারী গর্ভবতী নারী হওয়া মাত্র তাকে বাইরে পাঠিয়ে হত্যা করে একটা কূপে ফেলে দেওয়া হতো। সার্কিট হাউসের সেই কূপে হত্যা করে ফেলা হতো মুক্তিযোদ্ধাদেরও। আটক নারীদের অনেককে সেই নির্যাতন কেন্দ্র থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর উদ্ধারও করা হয়। অন্য আরেকটি কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় অনেক বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাকে। এছাড়াও সার্কিট হাউস সংলগ্ন একটি গর্তে পাওয়া গেছে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার মাথার খুলি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এদের ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করার বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আরও বলেন, ‘শিশু, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের  মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করার প্রস্তাব দেওয়া হবে।’

উপমন্ত্রী আরও জানান, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সরঞ্জাম রয়েছে সেখানে। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে এই সার্কিট হাউসের একটি কক্ষে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু পুরো সার্কিট হাউসজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছড়িয়ে থাকায় বৃহত্তর কারণে এটির নাম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর রাখার প্রস্তাব করা হবে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটা তো এখনও একটা জাদুঘর আছেই। সেটা তো মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান জাদুঘর। এটাকে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর করার কী আছে। দেশে থেকে জিয়াউর রহমান নাম মুছে ফেলার সর্বোত চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু তারা চেষ্টা করলেও এটাকে জনগণ ভালোভাবে নেবে না। জনগণের হৃদয় থেকে জিয়াউর রহমানের নাম মোছা যাবে না। চট্টগ্রামের প্রত্যেকটা ধূলিকণায় জিয়াউর রহমানের নাম আছে। সেই চট্টগ্রামের একটি সার্কিট হাউজ থেকে জিয়াউর রহমান নাম মুছে দিয়ে জনগণের মন থেকে তার নাম মোছা যাবে না। এটা করলে সরকার ভুল করবে। এটা জনগণ গ্রহণ করবে না। যদিও এই সরকার জনগণ কোনটা গ্রহণ করলো আর কোনটা করলো না তার পরোয়াই করে না।

/এএইচআর/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে