X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্ত: আইনি জটিলতায় আটকে আছে ক্ষতিপূরণ

চৌধুরী আকবর হোসেন
১২ মার্চ ২০১৯, ০৭:৫৮আপডেট : ১৩ মার্চ ২০১৯, ১৬:৫৫

  বিমান দুর্ঘটনা নেপালে দুর্ঘটনায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ায়র ঘটনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। তবে আইনি জটিলতায় আটকে আছে বেশ কয়েকজন যাত্রীর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া।উত্তরাধিকার নির্ধারণ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ড্যাশ-৮ কিউ 8০০ বিমান বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে চারজন ক্রু ও ৬৭জন যাত্রীসহ মোট ৭১জন আরোহী ছিলেনI তাদের মধ্যে চারজন ক্রুসহ মোট ২৭জন বাংলাদেশি, ২৩জন নেপালি এবং একজন চীনা যাত্রী নিহত হনI আহত হন ৯জন বাংলাদেশি, ১০জন নেপালি ও মালদ্বীপের একজন নাগরিকI

জানা গেছে, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন ট্রিয়েটিস কনভেনশন, বাংলাদেশ ও নেপালের সংশ্লিষ্ট কেস’ল ইত্যাদি বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক সার্ভে প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ অনুযায়ী প্রত্যেক নিহত যাত্রীর ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স।

জানা গেছে, দুর্ঘটনার চার সপ্তাহের মধ্যে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সকে বিমানটির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়। এছাড়া নিহতদের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫১ হাজার ১২০ ডলার নির্ধারণ করেছ সংস্থাটি। তবে আহতদের ক্ষতির পরিমাণ, চিকিৎসা ব্যয় সব কিছু বিবেচনা করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হয়েছে। নিহত ১৯জন বাংলাদেশির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। নিহত আটজনের পরিবার এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি। আহত ৯জন বাংলাদেশির মধ্যে ছয়জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, তিনজন এখনও পাননি। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা খরচ ছাড়াই বাংলাদেশি ২৫জন আহত-নিহতদের পরিবারকে ১১ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৬ টাকা দিয়েছে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স।

সূত্র জানায়, নেপালের আহতরা এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি। নিহতদের মধ্যে ২ জনের পরিবারকে ৫১ হাজার ১২০ ডলার হারে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ককপিট ও কেবিন ক্রুরা দুটি ইন্স্যুরেন্স সুবিধা পাবেন। বিমানটির যাত্রী হিসেবে একটি, অপরটি পার্সোনাল এক্সিডেন্ট পলিসির আওতায়। বিমানটির যাত্রী হিসেবে ক্ষতিপূরণ ছাড়াও অতিরিক্ত ৫০ হাজার ডলার করে পাবেন পার্সোনাল এক্সিডেন্ট পলিসির আওতায়। ইতোমধ্যে বিমানটিতে চারজন ক্রুর মধ্যে দুইজনের পরিবারকে যাত্রী বিমা ও পার্সোনাল এক্সিডেন্ট পলিসির টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তবে ক্রুদের মধ্যে আইনি জটিলতায় নাবিলার পরিবারকে কোনও ধরনের ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স। পাইলট আবিদ সুলতানের পরিবারকে যাত্রী বিমার টাকা পরিশোধ করা হলেও এখনও দেওয়া হয়নি পার্সোনাল এক্সিডেন্ট পলিসির টাকা।

সূত্র জানায়, নিহতদের ক্ষতিপূরণ পাবেন তার উত্তারাধিকারীরা। তবে উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করতে হবে পারিবারিক আদালতে। নিহতের কে ক্ষতিপূরণের উত্তরাধিকারী হবেন, তা আদালতে নির্ধারণের পর দেওয়া হচ্ছে ক্ষতিপূরণ। অন্যদিকে আহত যাত্রীদের সকল চিকিৎসা ব্যয় বহন করছে ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠান। পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা শেষে আহতদের দেওয়া হবে ক্ষতিপূরণের টাকা। চিকিৎসা শেষ না হওয়ায় অনেকেই ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না।

দুই পা হারানো কবির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি যা হারিয়েছি, তা কেউ দিতে পারবে না। আমার দুটো পা চলে গেছে। আমার ভালো আয়-রোজগার ছিল। নিজের আয়ে দুটো বাড়ি বানিয়েছি। এখন আমার বাড়িভাড়া ছাড়া আর কোনও আয় নেই। আমার তিনটা ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে। বড় ছেলের লেখাপড়ায় এক বছর গ্যাপ হয়ে গেছে আমার জন্য। গত বছর আমার মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল, সেও পরীক্ষা দিতে পারেনি। ছোট ছেলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য আমার খরচ করতে হয়, টেনেটুনে দিন যাচ্ছে। দ্রুত ক্ষতিপূরণ পেলে আমার উপকার হবে।’

সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিক শামিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে পরিশোধ করা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণের দাবিদার কে হবেন, তা আদালত নির্ধারণ করছে। এখনও অনেকের দাবিদারের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি, আবার কারও কাগজপত্রে ত্রুটি আছে। এসব কারণে তারা ক্ষতিপূরণ পেতে দেরি হচ্ছে। নেপালের আহতরাও এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি, কারণ তাদের চিকিৎসা চলছে। একই কারণে মালদ্বীপের আহত ব্যক্তিকে এখনও টাকা দেওয়া যায়নি। নিহত চাইনিজ ব্যক্তির পরিবারও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। প্রথমে তাদের আত্মীয়-স্বজন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তারা বাংলাদেশে এসে ক্ষতিপূরণ নিয়ে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’

শফিক শামিম আরও বলেন, ‘কেবিন ক্রুদের মধ্যে একজন শারমিন আক্তার নাবিলা। তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়নি, কাগজপত্র না পাওয়ার কারণে। এক বছর হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের পরিবার কোনও কাগজপত্র দিতে পারেনি। নাবিলার পরিচয়পত্রে এক নাম, চাকরিতে জয়েন করার সময় দেওয়া কাগজপত্রে আরেক নাম। এসব বিষয়গুলো আদালতে নিষ্পত্তি না হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের কাছে আদালতের রায় নিয়ে এলেই আমরা টাকা পরিশোধ করবো। আমাদের এখানে কোনও জটিলতা নেই। যথাযথ প্রক্রিয়ায় এলে টাকা পরিশোধে কোনও সমস্যা হবে না।’

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং ও পাবলিক রিলেশন্স) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আহত-নিহতদের পরিবারকে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ায় দ্রুত ক্ষতিপূরণ দিতেও আমরা সাহায্য করছি।’ 

 

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা