X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

বুয়েটসহ সব শিক্ষাঙ্গনকে দলীয় রাজনীতিমুক্ত করার দাবি টিআইবির

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১০ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৩৬আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৩৭

টিআইবি বুয়েটের ছাত্র আবরারের হত্যাকাণ্ড একদিকে বাক স্বাধীনতার ওপর নিষ্ঠুর আঘাত ও অন্যদিকে ছাত্রসংগঠন তথা শিক্ষাঙ্গনের ওপর দুর্বৃত্তায়িত অসুস্থ রাজনৈতিক প্রভাবের নিষ্ঠুর পরিণতি বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দেশের তরুণ সমাজ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে বলেও মন্তব্য করেছে সংস্থাটি। এজন্য অবিলম্বে বুয়েটসহ দেশের সব শিক্ষাঙ্গনকে দলীয় রাজনীতিমুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি এ দাবি জানায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একের পর এক রক্তক্ষয়ী ছাত্র সহিংসতা, ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম, দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবদুষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতা এবং একই কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার ফলে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী আদর্শিক ছাত্র আন্দোলনের অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি। আবরার হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং ছাত্র আন্দোলনের গৌরবময় ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সব ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষাঙ্গনকে সম্পূর্ণ দলীয় রাজনীতিমুক্ত করার কোনও বিকল্প নেই।’

আবরার হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানকে উদ্বৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আবরার হত্যা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিনের লালিত মরণব্যাধির লক্ষণ মাত্র। এর প্রতিকার সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষাঙ্গনে আরও যেসব অনিয়ম, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর মতো এই ঘটনাও শেষ পর্যন্ত ধামাচাপা দেওয়া হলে এর দায় তাদেরই বহন করতে হবে। ফাঁকা আশ্বাস নয়, আমরা কার্যকর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতির নামে শিক্ষাঙ্গনে দুর্বৃত্তায়ন থেকে যারা লাভবান হয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করুন। কারণ, তারা দেশের যে ক্ষতি করছেন, তা অপূরণীয় ও দীর্ঘমেয়াদি। গণতন্ত্রের জন্য ও মেধাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যাশার পথে ভয়ঙ্কর প্রতিরোধক। তবে, সদিচ্ছা থাকলে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা এখনও সম্ভব। দেশের তরুণ সমাজের, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তাদের উদ্বেগের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের যে গৌরবোজ্জ্বল অতীত ও  অবিস্মরণীয় ভূমিকা তা ম্লান করে দিচ্ছে ছাত্রসংগঠনের ওপর দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির নিষ্ঠুর প্রভাব। ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে বাক স্বাধীনতার ওপর নৃশংস আঘাতের সূতিকাগার রাজনৈতিক নেতৃত্বের একাংশের বিধ্বংসী তাড়নায় বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের গৌরবকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এতে আমরা উদ্বিগ্ন এবং শঙ্কিত। আশা করি, রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্বশীল অংশ শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ও সর্বোপরি আইনের শাসন এবং প্রজন্মের কল্যাণ বিবেচনায় ছাত্রসংগঠনগুলোকে অসুস্থ রাজনীতির কালো থাবামুক্ত করবেন। একইসঙ্গে নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশে সুস্থ রাজনীতির বিকাশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলকে সত্যিকার অর্থেই সুস্থ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তরিত করতে আমূল সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।’

দেশের তরুণ প্রজন্মের, বিশেষ করে নির্দলীয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আজ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ‘দেশের ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষার্থীরাই বারবার সোচ্চার হয়েছেন, কার্যত জাতিকে পথ দেখিয়েছেন, সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজ তাদেরই উত্তরসূরিদের ব্যবহার করা হচ্ছে হীন রাজনৈতিক স্বার্থে। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের প্রক্রিয়ায় তারা অন্যতম সহযোগীতে পরিণত হয়েছে। ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের একদিকে বহুমুখী ক্ষমতার অপব্যবহার, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাস্তানি, মাদকব্যবসাসহ এমন কোনও অপকর্ম নেই, যাতে তারা জড়িয়ে পড়ছেন না। অন্যদিকে সংকীর্ণ স্বল্পমেয়াদি স্বার্থে রাজনৈতিক দল ও তাদের প্রভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতা ও যোগসাজশ এসব অপকর্মকে সুযোগ ও সুরক্ষা দিচ্ছে।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যে শিক্ষকরা ছাত্রদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার প্রেরণা যোগানোর দায়িত্বে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে তাদের একাংশও পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছেন। অনেকে আবার একধাপ এগিয়ে সরাসরি দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। সেটাও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এবং তথাকথিত ছাত্রনেতাদের যোজসাজশে। এই পুরো অসুস্থ অবকাঠামোকে ভেঙ্গে দেওয়া ছাড়া উত্তোরণের আর কোনও পথ আছে বলে আমাদের জানা নেই। তাই রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে আমাদের প্রত্যাশা এবং দাবি, এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করুন। দলীয় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাপুষ্ট ছাত্রসংগঠনের সব কার্যক্রম বন্ধ করুন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে ছাত্রসংগঠন বিকশিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করুন। শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষক, কমকর্তা ও কর্মচারীদের সংগঠনের দলীয় রাজনীতি বন্ধে কঠোর উদ্যোগ নিন এবং সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও যোগসাজশ বন্ধ করুন।’

/জেইউ/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্রাজিলে বৃষ্টিপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮, এখনও নিখোঁজ অনেকে
ব্রাজিলে বৃষ্টিপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮, এখনও নিখোঁজ অনেকে
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?