X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

সংবিধান রচিত হবে চার স্তম্ভের ওপর: গণপরিষদ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম
১০ এপ্রিল ২০২০, ০৮:০০আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২০, ০৮:০০

সংবিধান রচিত হবে চার স্তম্ভের ওপর: গণপরিষদ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল। ওই দিনই স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা ঘোষণার প্রস্তাব নিয়ে কথা বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি মক্তি সংগ্রামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের কথা উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন এবং জানান, সবার আগে সংবিধান (সেসময় পত্রিকাগুলোতে শাসনতন্ত্র হিসেবে লেখা হতো) তৈরির কাজ শেষ করাটাই বড় কর্তব্য।

এদিন অধিবেশনে রংপুরের শাহ আব্দুল হামিদ এবং নোয়াখালীর মোহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী যথাক্রমে স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে সংবোধনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী না বলে ‘শেখ মুজিব’ বলার জন্য অনুরোধ করেন, যখন আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ সেশনে আলোচনাকালে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সংবোধন করেন। এদিন মন্ত্রীরা জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সারিগুলোতে বসেন (বাম থেকে ডান পাশে)। বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন যথাক্রমে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ।

১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ গণপরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্থাপিত স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কিত প্রস্তাবে তিনি বলেন, ‘আজ স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি, এর সঙ্গে সঙ্গে আমি চারটি স্তম্ভকে স্মরণ করতে চাই। যে স্তম্ভকে সামনে রেখে আমাদের দেশের সংবিধান তৈরি করতে হবে। গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। গণতন্ত্র দিতেই আজ  আমরা এই পরিষদে বসেছি। কারণ, আজ  আমরা যে সংবিধান দেবো, তাতে মানুষের অধিকারের কথা লেখা থাকবে। চারটি স্তম্ভের ওপরে ভিত্তি করে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্যে এমন সংবিধান রচনা করতে হবে, যেন তারা দুনিয়ার সভ্য দেশের মানুষের সামনে মাথা উঁচু করে রয়েছে, একটা বিরাট কর্তব্য আছে।’

সংবিধান রচিত হবে চার স্তম্ভের ওপর: গণপরিষদ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু

সংবিধান রচনা বড় কর্তব্য

স্পিকারকে উদ্দেশ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের সামনে আজকে বিশেষ কর্তব্য হলো— যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জাতিকে একটা সংবিধান দেওয়া।’ তিনি সহকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা গাছতলায় বসে যুদ্ধ করেছেন, না খেয়ে যুদ্ধ করেছেন, পরনের কাপড়ও ছিল না। নিয়মানুয়ারী (অ্যাসেম্বলির) মেম্বারদের যে অধিকার পাওয়ার আছে, সে অধিকার পুরোপুরি দেবার ক্ষমতা আমার নেই। যদি মাইক্রোফোন বিদেশ থেকে আনবার চেষ্টা করতাম, তাহলে তিন মাস সময় লাগতো, অনেক দেরি হয়ে যেতো। এই অ্যাসেম্বলি ভবন যে অবস্থায় ছিল, তাতে মাত্র ৩০০ মেম্বার বসার জায়গা ছিল। আজকে সেখানে ৪৫০ জন বসেছেন। যদি এই অ্যাসেম্বলি ভবন নাও থাকতো, তবে গাছতলায় বসেও আমার মেম্বাররা সংবিধান রচনা করতেন, এই সুনিশ্চিত আশ্বাসটুকু দিতে পারি।’

ইতিহাস ও নেতাদের স্মরণ

ঘোষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্যে যারা সংগ্রাম করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, তাদের সেই ইতিহাস আজ  এখানে পর্যালোচনা না করলেও চলবে। কিন্তু বিশেষ কয়েকজন নেতার কথা স্মরণ করছি, যারা গণতন্ত্রের পূজারী ছিলেন— হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, বর্বর পাকবাহিনীর হাতে নিহত ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। আর কলম দিয়ে সংগ্রাম করেছেন সেই জনাব তোফাজ্জল হোসেন, আমাদের মানিক ভাই। এদের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে আমরা স্মরণ করতে চাই। স্মরণ করি ১৯৪৭ সাল থেকে আজ  পর্যন্ত প্রত্যেকটি আন্দোলনের সময় যারা জীবন দিয়েছেন। গণতন্ত্রকে এ দেশে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে যারা সংগ্রাম করেছেন, তাদের কথা যদি স্মরণ না করি, তাদের ইতিহাস যদি না লেখা হয়, তবে ভবিষ্যৎ বংশধরেরা জানতে পারবে না এই সংগ্রামের পেছনে কারা ছিলেন।

সংবিধান রচিত হবে চার স্তম্ভের ওপর: গণপরিষদ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু

ভারতকে ধন্যবাদ

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এখন যদি আমি ভারত সরকারের বিষয়ে না বলি, তাহলে অন্যায় করা হবে। আমাদের দেশের জনগণের যখন প্রাণভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে, ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে পায়ে হেঁটে ভারতবর্ষে যায়, তখন ভারতের জনসাধারণ তাদেরকে বুকে টেনে নেয়। ভারতের জনসাধারণ, পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণ, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং আসামের জনসাধারণ বিশেষ করে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সরকারকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।’

রিপোর্টারদের সতর্ক থাকতে আহ্বান

রিপোর্টারদের তাদের কাজের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এখানে যারা কাজ করছেন, তারা যেন স্পষ্ট, সুন্দর করে রির্পোট তৈরি করেন। ভুল-ভ্রান্তি যেন না হয়। কারণ, এটা একটা ইতিহাস হয়ে থাকবে। এই ইতিহাস যেন নষ্ট না হয়। অ্যাসেম্বলির কর্মচারীরাও রাতদিন পরিশ্রম করে এত তাড়াতাড়ি যে এই বন্দোবস্ত করতে পেরেছেন, সেই জন্যে তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
মুজিব বর্ষ উদযাপনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের খরচ ১২৬১ কোটি
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
সর্বশেষ খবর
নতুন শুরুর অপেক্ষায় পঞ্চপাণ্ডবহীন বাংলাদেশ
নতুন শুরুর অপেক্ষায় পঞ্চপাণ্ডবহীন বাংলাদেশ
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে মরক্কোর নেপথ্য সহযোগিতা
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে মরক্কোর নেপথ্য সহযোগিতা
‘পালানোর’ অভিযোগে ডিআইজিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
‘পালানোর’ অভিযোগে ডিআইজিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে নকল সরবরাহের অভিযোগে ছাত্রদল নেতা আটক
এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে নকল সরবরাহের অভিযোগে ছাত্রদল নেতা আটক
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট