(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারির ঘটনা।)
১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয়বার নতুন বছর উদযাপনের সময় হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য ১৯৭৩ সালের শুরুটাই ছিল প্রথম নতুন বছর উদযাপনের। যদিও এই দিনে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের হামলা ও ২ ছাত্র নিহতের ঘটনায় দিনটি বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ বীমার ক্রোড়পত্রের বাণীতে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বীমা, শিল্প কারখানা এখন সম্পূর্ণরূপে জনগণের সম্পত্তি। জাতীয়করণকৃত জনগণের সম্পত্তি ব্যক্তিগত মালিকানায় আর ফেরত যাবে না। বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবেই, কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। আমার একটি শর্ত, উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং একটি শান্তিময় সুখী-সমৃদ্ধ জাতীয় জীবন গড়ে তোলার কঠিন সংকল্প গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশে আছে, বাংলাদেশে থাকবে। তাই তাকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
নতুন সূর্যের কথা লেখে পত্রিকাগুলো
১৯৭২ সাল ছিল ধ্বংস, হত্যা, রক্তপাত, অশ্রু শেষে বিজয়ের গৌরব নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার, দেশের স্বাধীনতার পতাকা হাতে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ছিল ঘটনাবহুল। অনেক উজ্জ্বল দিনের ছবিসহ বিভিন্ন কর্মসূচিকে সামনে এনে এইদিনের পত্রিকায় সালতামামি করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া ১৯৭২ সালের পরে এবারই প্রথম বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশে নিউ ইয়ার পেলেন।
পুলিশের গুলি দিনটিকে বিষণ্ণ করেছিল
১৯৭৩ সালের প্রথম দিনটি শুরু হয় খারাপভাবেই। এই দিনে ইউসিসের সামনে পুলিশের গুলিবর্ষণে দুজন ছাত্র নিহতসহ অন্তত সাত জন আহত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের দুটি ছেলের মৃত্যু ও অপর কয়েকজন আহত হওয়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ইতোমধ্যে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাসসের খবরে প্রকাশ প্রধানমন্ত্রী এই দিন সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বলেন, আজকের এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। এতে আমাদের দুই ছেলের মৃত্যুসহ কয়েকজন আহত হয়। তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, ভিয়েতনাম দিবস পালনকালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও ডাকসুর একটি মিলিত ছাত্র মিছিল যখন তোপখানা রোডে মার্কিন তথ্য কেন্দ্রের সামনে এসে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং তথ্যকেন্দ্র লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে, তখন পুলিশ তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দুঃখজনক ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ইতিমধ্যে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সরকার জনগণ, সকল রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য সংস্থার সচেষ্ট হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। বাসসের খবরে প্রকাশ, উত্তর ভিয়েতনামে মার্কিন বিমান হামলার বিরুদ্ধে একটি মিছিলের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের সময় প্রেসক্লাবে এক ফটোসাংবাদিক আহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী ঘটনা খতিয়ে দেখবেন বলে কর্মরত সাংবাদিকদের জানান। মিছিলকারীদের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণকালে প্রেসক্লাবের নিজস্ব আলোক চিত্রশিল্পী আহত হওয়ার ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর করার জন্য সাংবাদিকরা তার সঙ্গে দেখা করেন।
আমদানি নীতির ব্যাখ্যা দিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী
চাহিদার তুলনায় পণ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় তা যত দ্রুত সম্ভব পূরণ এবং একই সময়ে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করাই বর্তমান আমদানি নীতি প্রধান লক্ষ্য বলে ১৯৭৩ সালের প্রথম দিনেই জানিয়ে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলনে যোগদান করে আমদানি নীতির আলোচনা প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রাম চলাকালে বাংলাদেশে বলতে গেলে কোনও আমদানি হয়নি। অথচ বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার বিদেশি পণ্য আমদানির প্রয়োজন। সরকার যত দ্রুত সম্ভব এই ঘাটতি পূরণের লক্ষ রেখেই চলতি আমদানি নীতি প্রণয়ন করেছে বলে তিনি জানান।