X
বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘ভাড়া করা না, এখানে বাংলাদেশের সমাজতন্ত্রই কায়েম হবে’

উদিসা ইসলাম
০৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:০০আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:০০

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারির ঘটনা।)

এখানে বাংলাদেশেরই সমাজতন্ত্র কায়েম হবে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অনেক আগেই অর্জন করতে পারতাম, যদি দল-মত নির্বিশেষে সবার সাহায্য-সহযোগিতা পেতাম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তখন সবাই আমাকে ঠাট্টা করতো। আমি বলতাম, আমাদের কলোনিতে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু অন্যরা সত্যকে স্বীকার করতেন না। আমার সেদিনের সে কথা আজ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আজ  প্রমাণ হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশকে কলোনিতে পরিণত করা হয়েছিল।’ এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শতকরা ৮০ ভাগ কাপড়-তেল-সাবান-ওষুধপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এসে এখানে বিক্রি করে যেতো।’

দৈনিক ইত্তেফাক, ৮ জানুয়ারি ১৯৭৩ তিনি বলেন, ‘ওখান থেকে কিছু আসছে না বলেই এখানে এখন এসবের অভাব দেখা দিয়েছে। তবে  প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও সেসব আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আমাদের গাড়ি ছিল না, তবু তাড়াতাড়ি সব আনতে হয়েছে। দেশের অবস্থা না বুঝে যারা কথা বলেন, তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তারা বোঝেন না এমন কথা বলতে চাই না। আসলে তারা বুঝেও বোঝেন না, বুঝতে চান না। সমাজতন্ত্রের কথা অনেকেই বলে থাকেন। কিন্তু তাদের বোঝা উচিত, চটি বই পড়ে সমাজতন্ত্র হয় না। দেশের অবস্থা বুঝতে হবে।’

বাংলাদেশ অবজারভার, ৮ জানুয়ারি ১৯৭৩ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এক দেশে এক ধরনের সমাজতন্ত্র হয়েছে। আমরা কোনও দেশের সমাজতন্ত্র ভাড়া করতে চাই না। বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সমাজতন্ত্র কায়েম হবে।’

তিনি বলেন, ‘সমাজতন্ত্রে পৌঁছাতে হলে সমাজতন্ত্রের শৃঙ্খলা জানতে হবে। আর সমাজতন্ত্রের সুফল ভোগ করতে হলে কিছু কষ্ট করতে হবে ‘

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ গণকর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের প্রথম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।

দেশের বর্তমান অবস্থা ও এই অবস্থার বিশেষ করে নির্দিষ্ট বেতনভোগী চাকরিজীবীদের অসুবিধার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ কথা অস্বীকার করি না যে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।’ এই মূল্য বৃদ্ধির পেছনে যাদের কারসাজি রয়েছে, তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘যারা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে খেলছে, তারা জানে না এর পরিণাম তাদের জন্য কী হবে। ওরা ভাবছে যে, সরকার বেশি দিন থাকবে না। কিন্তু ওরা অবস্থা বুঝতে পারছে না, মুসলিম লীগ আমলে অনেকেরই অবৈধ টাকায় পেট ফুলে উঠেছিল। অনেকেই শিল্প-কারখানা করেছিল। কিন্তু সেসব কিছুই আজ তাদের নেই।’

বাবা-মায়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু, দৈনিক ইত্তেফাক, ৮ জানুয়ারি ১৯৭৩ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের জাতীয় চরিত্র আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘এই অবস্থার মধ্যেও বাইরে থেকে মাল আনি মাল দিই। কিন্তু সে মাল পেছন দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। বেশি দাম দিলে একটা একটা করে সে মাল বের হতে থাকে।’

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এই হতভাগারা জানে না তাদের পরিণতি কী হতে পারে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যাদের মাল কিনতে বাইরে পাঠাই তারাও সেখানে গিয়ে কমিশন খোঁজে। সারা জীবন বাংলার জন্য সংগ্রাম করেছি, আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। অবশেষে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এখন একে সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে চাই। কিন্তু জাতীয় চরিত্রেই অধঃপতন যখন দেখি, তখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠি।’

দৈনিক বাংলা, ৮ জাননুয়ারি ১৯৭৩ বাবা-মায়ের কাছে বঙ্গবন্ধু

কৃতী সন্তানকে কাছে পেয়ে এদিন আনন্দমুখর ছিল  টুঙ্গিপাড়া। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর গোপালগঞ্জ সফরের শেষ পর্যায়ে নিজের গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় যান। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর নৃশংস হামলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে টুঙ্গিপাড়া একটি। বঙ্গবন্ধু সেখানকার হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন।  জানুয়ারির হাড় কাঁপানো শীতের সকালে বঙ্গবন্ধুর আগমনে আনন্দমুখর হয়ে জেগে ওঠে তাঁর গ্রাম। বঙ্গবন্ধু সকালে গোপালগঞ্জ থেকে তাঁর দুই ছেলে শেখ কামাল আর শেখ রাসেলকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে পৌঁছান। ঢাকা ফেরার পথে বঙ্গবন্ধু এখানে এসে পৌঁছালে জনতা তাঁকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান। স্বাধীনতার পর টুঙ্গিপাড়ায় এটি বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় পদার্পণ।

বঙ্গবন্ধু তাঁর ভিটায় বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করলে সন্তানকে তারা পরম স্নেহে বুকে জড়িয়ে ধরেন। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে তখনও দখলদার বাহিনীর নৃশংস হামলার চিহ্ন। চার ঘণ্টা অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধু চারদিকে ঘুরে ঘুরে লোকজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করেন।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মুজিব বর্ষ উদযাপনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের খরচ ১২৬১ কোটি
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
সর্বশেষ খবর
আইএমএফ অসন্তুষ্ট হলেও কৃষিতে ভর্তুকি কমবে না
বাজেট ২০২৫-২৬আইএমএফ অসন্তুষ্ট হলেও কৃষিতে ভর্তুকি কমবে না
রোগ প্রতিরোধে মনোযোগ না দিলে হাসপাতাল বানিয়ে লাভ নেই : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
রোগ প্রতিরোধে মনোযোগ না দিলে হাসপাতাল বানিয়ে লাভ নেই : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ
সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ
মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে ট্রাকসহ ১৭টি গরু লুট
মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে ট্রাকসহ ১৭টি গরু লুট
সর্বাধিক পঠিত
ঢাবিতে বামপন্থিদের মশাল মিছিল ঘিরে উত্তেজনা, ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি
ঢাবিতে বামপন্থিদের মশাল মিছিল ঘিরে উত্তেজনা, ‘ভুয়া ভুয়া’ দুয়োধ্বনি
যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে ‘হত্যাকাণ্ডের’ সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাইলেন এটিএম আজহার
যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে ‘হত্যাকাণ্ডের’ সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাইলেন এটিএম আজহার
কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা
সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য জুয়েলারি ব্যবসা বন্ধ
সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য জুয়েলারি ব্যবসা বন্ধ
সাবেক মন্ত্রী হীরাকে বাসায় পৌঁছে দিলো পুলিশ
সাবেক মন্ত্রী হীরাকে বাসায় পৌঁছে দিলো পুলিশ