(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৪ জানুয়ারির ঘটনা।)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেখানেই জনসভায় গিয়েছেন, সেখানেই বলেছেন—তিনি জানেন, তার দেশের মানুষ তাকে ভালোবাসেন, আর তিনিও তাদের ভালোবাসেন। ১৯৭৩ সালে এসে খোঁজ মেলে ময়মনসিংহ জেলার জবু মিয়ার, যিনি বঙ্গবন্ধুর জন্য মানত করেছিলেন। জবু মিয়া পেশায় একজন ফেরিওয়ালা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ছিল তার গভীর শ্রদ্ধা ও অসাধারণ ভালোবাসা।
বিপিআই’র কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি তার এই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডনের ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের জন্য গিয়েছিলেন, জবু মিয়া তখন বঙ্গবন্ধুর আশু রোগমুক্তির জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে মানত করেছিলেন দুই মণ চাল বিতরণ ও একটি গরু কোরবানির জন্য।
আ.লীগে প্রার্থীর সংখ্যা আড়াই হাজারে দাঁড়াতে পারে
গণপরিষদের স্পিকার মোহাম্মদ উল্লাহ এ দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আনোয়ার চৌধুরীর কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় দলের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, প্রচার সম্পাদক আমজাদ হোসেনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনি তৎপরতা নিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, আগামী নির্বাচনে জাতীয় সংসদের তিনশ’ আসনে আড়াই হাজারের মতো মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের টিকিটের জন্য প্রার্থনা জানাবে। এতে বলা হয়, নির্বাচনে সম্মিলিত মনোনয়ন প্রার্থীর সংখ্যা ছয় হাজার দাঁড়াতে পারে।
স্বীকৃতি দিতে রুমানিয়ার প্রেসিডেন্টের আহ্বান
পরস্পরকে স্বীকৃতিদান ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানান রুমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নিকোলাই চসেসকু। পাকিস্তান ত্যাগের আগে বেতার ও টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাস্তবতার ভিত্তিতে কাজ করা প্রয়োজন। পাকিস্তান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের জনগণের স্বার্থে সব রাষ্ট্রের পারস্পরিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং সমান অধিকারের ভিত্তিতে সহযোগিতা অর্জনের জন্য এটা প্রয়োজন।’
শীতলক্ষ্যায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবি
১৯৭৩ সালের এই দিনে শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে। ঈদের একদিন আগে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বড় দুর্ঘটনার একটি। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লঞ্চটি ডুবে যায়। ১৪ জানুয়ারি রাত ১০টায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়নি। ফলে লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির কোনও সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে লঞ্চের ভেতরে শতাধিক যাত্রীর মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে বলে অনুমান করা হয়েছিল। দুর্ঘটনাস্থলে চালকবিহীন অবস্থায় পড়ে ছিল উদ্ধারকারী ক্রেন হামজা। চালক না থাকায় নিমজ্জিত লঞ্চ উদ্ধারে হামজা কোনও ভূমিকা নিতে পারেনি।
জেল থেকে পালিয়েছে দেড়শ’ কয়েদি
এ দিন বিকাল সাড়ে চারটায় চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার থেকে ১৫২ জন কয়েদি কর্তব্যরতদের পরাভূত করে পালিয়ে যায়। এ কারণে চুয়াডাঙ্গায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ঘটনার পরপরই দুই জনকে পুনরায় আটক করা হয়। চুয়াডাঙ্গার এসডিপিও এবং কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তারা জানান যে, কয়েদিরা আকস্মিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে চাবি, দুটি রাইফেল, একটি শটগান ছিনিয়ে নেয় এবং তালা খুলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুষ্টিয়ার ডিসি ও এসপি চুয়াডাঙ্গা থেকে জানান, সেখানে জরুরি আইন জারি করা হয়েছে এবং রক্ষীবাহিনী ও পুলিশ পলাতক কয়েদিদের খুঁজছে।
১৬ জানুয়ারি ঈদুল আজহা
১৯৭৩ সালের ১৬ জানুয়ারি ছিল ঈদুল আজহা। কয়েকদিন আগে থেকেই ঈদের আমেজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। ফলে সরকারি কোনও ধরনের কর্মসূচি এই সময়ে ছিল না। সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঈদ পালনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়। সকাল আটটায় পল্টন ময়দানে পৌরসভার কর্তৃত্বাধীন ঢাকার প্রধান ঈদের জামাত এবং বায়তুল মোকাররমে আরেকটি জামাত হবে বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়।