X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫০ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুতে আপ্লুত জেনারেল ভেতসপ

দিল্লি প্রতিনিধি
০৮ মার্চ ২০২১, ২২:৩৮আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২১, ২২:৩৮

গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভারতে ভুটানের রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা পালন করছেন মেজর জেনারেল ভেতসপ নামগিয়েল। দিল্লির কূটনৈতিক মহলে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত একজন ব্যক্তিত্ব। ভুটান সেনাবাহিনীর এই সাবেক কর্মকর্তা ও অভিজ্ঞ কূটনীতিবিদ জানাচ্ছেন, গত পঞ্চাশ বছর ধরে তাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন একজন রাষ্ট্রনায়ক– যিনি আর কেউ নন, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

উপলক্ষটা ছিল বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান। দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে এই উপলক্ষে যে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানেই বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন অ্যাম্বাসেডর নামগিয়েল। ওই অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়েই তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার সেই পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করেন।

যখন একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হচ্ছে, তখন অ্যাম্বাসেডর নামগিয়েল ভারতের দেরাদুনে ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তরুণ এই সেনা কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটা খুঁটিনাটির খবর রাখতেন, ভুটান যখন প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয় সে দিন তো আনন্দে ফেটে পড়েছিলেন তিনি।

‘৭ মার্চের সেই অবিস্মরণীয় ভাষণের কথাও আমি দেরাদুনে বসেই শুনেছিলাম। তখনই ভাষণটা পুরো শুনতে পারিনি, অনেক পরে শেখ মুজিবের গলায় পুরোটা শুনি আর রোমাঞ্চিত হই’ বাংলাদেশ হাই কমিশনে তার ভাষণে জানান মেজর জেনারেল নামগিয়েল।

‘যুদ্ধে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের পর শেখ মুজিব যখন পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন হয়ে দিল্লিতে এসে নামলেন, সেই দিনটার কথাও আমার ছবির মতো মনে আছে। সেটা ছিল বাহাত্তরের ১০ই জানুয়ারি।’ ‘আমরা মিলিটারি অ্যাকাডেমির ক্যাডেটরা সবাই মিলে টিভির সামনে বসে গোটা অনুষ্ঠানটা লাইভ দেখছিলাম। দিল্লি এয়ারপোর্টে যখন শেখ মুজিব যখন বিমানের সিঁড়ি বেয়ে নামছেন, তার প্রতিটা দৃপ্ত পদক্ষেপ যেন এখনও চোখের সামনে ভাসে’ —বলেন তিনি।

‘সে দিনই প্রথম দেখা হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধী আর শেখ মুজিবের। দূরদর্শনে যিনি ধারাবিবরণী দিচ্ছিলেন, তার কণ্ঠস্বর আবেগে থরথর করে কাঁপছিল, এখনও আমার মনে আছে। আর ছ’ফুটেরও ওপর লম্বা, অত্যন্ত সুপুরুষ শেখ মুজিব প্রথম দেখাতেই যেন সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন।’

সে বছরের ডিসেম্বরেই ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে কমিশনড হন ভেতসপ নামগিয়েল। ভুটানে ফিরে গিয়ে রয়্যাল বডিগার্ডসের সদস্য মনোনীত হন তিনি। ১৯৭৪-য়ে যখন ভুটানের চতুর্থ রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুকের অভিষেক হয়, তখন তিনি নিজের এডিসি হিসাবে বেছে নেন নামগিয়েলকে।

পরবর্তী তিন দশক ধরে ভুটানের রাজা যখন যেখানে রাষ্ট্রীয় সফরে গেছেন, তার এডিসি হিসেবে প্রায় সব সফরেই সঙ্গী ছিলেন ভেতসপ নামগিয়েল। আর এভাবেই চুয়াত্তরের শীতে তার সরাসরি দেখার সুযোগ হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বা দূতাবাস স্থাপনের ক্ষেত্রে (স্বীকৃতি নয়) ভুটান ছিল দ্বিতীয় দেশ, ভারতের পরই। সেটা হওয়ার পর আমাদের রাজা যখন ঢাকায় রাষ্ট্রীয় সফরে গেলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার বৈঠকের সময় আমারও উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। অবশ্যই তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারিনি, তবে তার প্রতিটা কথা মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলাম।’

‘এরপর সারাজীবনে বহু রাষ্ট্রপ্রধানকে, বহু দেশনায়ককে কাছ থেকে দেখেছি। কিন্তু ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব আজও আমার মনে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে, আজও সেই অভিজ্ঞতা ভুলতে পারিনি। শেখ মুজিবুর রহমান আজ এত বছর পরেও আমায় অভিভূত, আপ্লুত করে রেখেছেন’, জানান অ্যাম্বাসেডর নামগিয়েল।

বাংলাদেশ ও ভুটানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই মৈত্রী ও সৌহার্দ্যের এক অনন্য নিদর্শন। সেখানে বাংলাদেশের জাতির পিতাকে নিয়ে ভুটানের অভিজ্ঞতম কূটনীতিবিদের এই নস্টালজিক স্মৃতিচারণ নিঃসন্দেহে এক অন্য মাত্রা যোগ করে।

/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
 ‘রান আপের গতি আর হ্যান্ড সুইংয়ে বদল এনেই সাফল্য পাচ্ছি’
 ‘রান আপের গতি আর হ্যান্ড সুইংয়ে বদল এনেই সাফল্য পাচ্ছি’
প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করায় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসককে শোকজ
প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করায় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসককে শোকজ
ভৈরবে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে একজন গ্রেফতার
ভৈরবে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে একজন গ্রেফতার
গরু কিনতে যাওয়ার পথে বাবা-ছেলে নিহত
গরু কিনতে যাওয়ার পথে বাবা-ছেলে নিহত
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
আমার কাছে ৪৫টি বাচ্চা আছে, ডিবিকে বলেন নিয়ে যেতে: আদালতে মিল্টন সমাদ্দার
আমার কাছে ৪৫টি বাচ্চা আছে, ডিবিকে বলেন নিয়ে যেতে: আদালতে মিল্টন সমাদ্দার
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?