(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২১ মার্চের ঘটনা।)
‘আমিও তো বাঙালি, তাই শেখ মুজিব আমার পিতা। কারণ আমিও তো সাড়ে সাত কোটি বাঙালির একজন।’ এ কথা বলেন বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান এইদিন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বঙ্গবন্ধুর পিতাকে বলেন, আপনি বিশ্বের ভাগ্যবানদের একজন। কারণ বাঙালি জাতির জনকের পিতা আপনি। এ কথার জবাবে শেখ লুৎফর রহমান এমন কথা বলেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর ৯৩ বছর বয়স্ক পিতা অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, খোকাকে কোনও কাজে বাধা দিইনি কখনও। যখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, সেই স্বদেশি আন্দোলনকালে অনেকে আমাকে বলেছে, আগুন জ্বালাতে দিচ্ছো, সেই আগুন কে নেভাবে? তিনি উত্তরে বলেন, যে জ্বালাচ্ছে সে-ই নেভাবে।
বঙ্গবন্ধুর পিতা এইদিনে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি গল্প বলেন। ‘একবার সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে একটি জনসভায় সময়মতো পৌঁছে দিতে বঙ্গবন্ধু নিজে ২২ মাইল নৌকার গুন টেনেছিলেন। এইদিন তৎকালীন পিজি হাসপাতালে বঙ্গবন্ধুর অসুস্থ পিতাকে দেখতে যান জিল্লুর রহমান। বেগম মুজিব ও রাজস্বমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতও বঙ্গবন্ধুর অসুস্থ পিতাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে কোসিগিনের বাণী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ায় সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী কোসিগিন তাঁকে অভিনন্দন জানান। এইদিনে বাসসের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট পাঠানো বাণীতে সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী এই মর্মে আস্থা প্রকাশ করেন যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার করার কাজে আমাদের দেশের জনগণের কল্যাণ সাধনের সুযোগ আরও বাড়বে। সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছাবাণীতে বলেন আপনি পুনরায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় আমি আমার সহকর্মী ও আমার পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী আপনার নেতৃত্বে অগ্রগতি ও গণতন্ত্রের পথে এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত হবে। জনসাধারণের অভিপ্রায়ে সংসদীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। এখন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কার্যাবলীতে আপনার সাফল্যের জন্য আমাদের শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আমরা বাংলাদেশ মিত্র। জনগণের মঙ্গল ও নতুন জীবন গঠনে অগ্রগতি কামনা করি।
একাত্তরের ৯ মাসে করা লাইসেন্স বাতিল
১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইস্যু করা সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এই নির্দেশের সাত দিনের মধ্যে ওই সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিতে হবে। এ ছাড়া তফসিলভুক্ত অপরাধ ও দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত অভিযুক্ত এবং ডাকাতি রাহাজানি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকেও লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০ তারিখ ছিল বেআইনি অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
বেআইনি অস্ত্র জমা দেওয়ার এই সর্বশেষ সময়সীমার মধ্যে ঢাকাসহ দেশের ৪১৩টি থানায় অস্ত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ পথে-ঘাটে ফেলে রাখা অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে বলেও জানা গেছে। তবে এ পর্যন্ত কী পরিমাণ বেআইনি অস্ত্র পাওয়া গেছে তার সঠিক হিসাব এখনও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়নি। মন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল স্বাক্ষরিত নির্দেশে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইস্যু করা সকল আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হলো। আগ্নেয়াস্ত্র ও লাইসেন্স জমা দেওয়ার সময়সীমা উত্তীর্ণ হবার পর যেসব আগ্নেয়াস্ত্র থেকে যাবে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করে অপরাধীদের উপযুক্ত সাজা দানের জন্য ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরে বিক্রিত পণ্যের স্তূপ
এইদিনের সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৭৫ হাজার টন মাল পড়ে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিদেশ থেকে প্রেরিত ত্রাণসামগ্রীও ছিল। পোর্টবোর্ড সূত্রে জানানো হয় যে, বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, ওয়াপদা, ইউনিসেফ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এসব মাল আনিয়েছে। যেসব মাল পড়েছিল, তার মধ্যে সিমেন্ট, যানবাহনের যন্ত্রপাতি, ময়দা, ওষুধ অন্যতম। সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী জহুর আহমেদ পোর্ট এলাকা পরিদর্শন করেন এবং মাল পাঠানো ত্বরান্বিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।