(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৩০ জুলাইয়ের ঘটনা।)
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর একগুঁয়েমি মনোভাব- সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পথে বাধা সৃষ্টি করছে এবং উপমহাদেশে উত্তেজনা জিইয়ে রাখছে। যুগোস্লাভিয়ায় পাঁচদিন ব্যাপী সরকারি সফর শেষে সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু ভুট্টোকে আগুন নিয়ে না খেলে যুক্তি মেনে বাস্তবতা স্বীকার করে নিতে বলেন। উপমহাদেশে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর দেশের অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা আবার ঘোষণা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশে উত্তেজনা হ্রাস এবং উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের শেষ চিহ্নটুকু মুছে ফেলার জন্য কাজ করে যাবো’। বাংলাদেশ বিশ্বের সব দেশের মুক্তি এ শান্তি সংগ্রামে সমর্থন জানাবে বলে তিনি জানান।
১৯৭১ সালে যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত মানবিক সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাবে পাকিস্তান অনুকূল সাড়া না দেওয়ায় বঙ্গবন্ধু দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এদেশ বন্ধুত্ব নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। জোট নিরপেক্ষ ও অপর দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে দৃঢ় আস্থাশীল বাংলাদেশ এবং যুগোস্লাভিয়া বিশ্ব শান্তি স্থাপনে একযোগে কাজ করে যাবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মার্শাল টিটোর সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে উল্লেখ করেন। টিটোর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ সফরের কথা তার মনের মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করবে।
বঙ্গবন্ধু অটোয়া যাচ্ছেন
শান্তির সন্ধানে এশিয়ার মহান নেতা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেলগ্রেড থেকে এদিন অটোয়ায় যাত্রা করার কথা। ২ আগস্ট থেকে অনুষ্ঠিতব্য কমনওয়েলথ প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি সেখানে যাবেন। সম্মেলনের প্রথম পর্যায়ে জোট নিরপেক্ষ দেশগুলোর নেতা ও যুগোস্লাভিয়ার মধ্যে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ নিয়ে কথা বলবেন তিনি। উভয়দলের কাছ থেকে জানা গেছে, শান্তি ও পারস্পরিক স্বার্থের ব্যাপারে উভয়নেতার মতের সম্পূর্ণ মিল রয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান বৈঠক মুলতবি
ভারত ও পাকিস্তান বর্তমান আলোচনা মুলতবি রেখে দিল্লিতে নতুন করে আলোচনা অনুষ্ঠানে সম্মত হয়েছে। বর্তমান আলোচনা থেকে উদ্ভূত প্রতিকার বিষয়ে আরও বিবেচনার জন্য আলোচনা সম্ভবত দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি রাখা হয়।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত পিএন হাকসার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেন। ভারতীয় ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের মধ্যে যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে, তা দূর করার উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। গত সাতদিনের আলোচনায় বর্তমানে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছিল কূটনীতিক মহল।
বৈঠকের বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে এই বৈঠকে ভারত-পাকিস্তান আলোচনার চূড়ান্ত ফলাফল সম্পর্কে সতর্ক আশাবাদ দেখা দেয়। রাওয়ালপিন্ডি থেকে ইউএনআই-এর খবরে প্রকাশ, দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পাকিস্তানের একগুঁয়েমির কারণে ভারত-পাকিস্তান আলোচনায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের ফেরত নিয়ে আসা।
আরেকদফা আলোচনা শেষে ভারতীয় প্রতিনিধিদল পাকিস্তান পক্ষকে আভাস দেন যে, বর্তমানে যে লাইনে আলোচনা চলছে তাতে কোনও সুফল পাওয়া যাবে না।
২৪ জুলাই আলোচনা শুরুর পর প্রায় ১৫ ঘণ্টা ব্যাপী আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটা এখন স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে, পাকিস্তান তার অনমনীয় মনোভাব না বদলালে কোনও আশান্বিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এদিন দু’ঘণ্টা আলোচনার পর ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা হাকসার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আমাদের অবস্থা আরও সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারছি।’