X
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কমনওয়েলথ সম্মেলনের প্রথম ভাষণে যা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম
০৩ আগস্ট ২০২১, ০৮:০০আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২১, ১৮:৩১

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৩ আগস্টের ঘটনা।)

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কমনওয়েলথ সম্মেলনে বলেছেন, উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তির অন্বেষায় আমরা রত, স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা নীরবে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এশিয়ার নিরঙ্কুশ শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতি ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সাথে আমরা একাত্ম হতে চাই উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমরা সেই আকাঙ্ক্ষিত আন্তর্জাতিক পরিবেশকে স্বাগত জানাই, যেখানে সংঘর্ষের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠিত হবে পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতা।’ উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টার কথা তিনি উল্লেখ করেন।

বঙ্গবন্ধু মন্তব্য করেন, যে বাস্তবতা সেখানে পাকিস্তানের ব্যর্থতাই উপমহাদেশে সমস্যাবলীর সমাধান এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পক্ষে প্রধান অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কমনওয়েলথ সম্মেলনে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন যে, ‘শান্তির প্রতি আমাদের অঙ্গীকার সর্বাত্মক।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এইতো সেদিন আমরা যুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসের শিকার হয়েছি। জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকারকে দাবিয়ে রাখার জন্য প্রচুর শক্তি প্রয়োগের বিভীষিকার অভিজ্ঞতা যে কত মর্মান্তিক, তা আমরা জানি। শান্তির পথে আমাদের অঙ্গীকার সর্বাত্মক। আর এজন্যই উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তোলা এবং উপমহাদেশে নিরঙ্কুশ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে ত্রুটি রাখিনি।’

দৈনিক ইত্তেফাক, ৪ আগস্ট ১৯৭৩ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বর্বরতার গভীর ক্ষত সত্ত্বেও আমাদের প্রচেষ্টা হলো— এই ক্ষত ভুলে যাবার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা।’ তিনি বলেন, ‘আমি আমার জন্মভূমিকে একথা বুঝিয়েছি যে, অতীতের দিকে নয়, তাকাতে হবে ভবিষ্যতের দিকে নতুন দিগন্তে। উপমহাদেশের অনাবিল শান্তির অন্বেষণে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।’

দেশগুলোকে সমস্যা ভাগ করে নিতে হবে

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কমনওয়েলথ সম্মেলনে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন—‘‘অনুন্নত দেশগুলোর সমস্যা ও উদ্বেগের ভাগ নেওয়ার জন্য। যে প্রক্রিয়ার ফলে গোটা বিশ্ব আজ  সীমাহীন হাহাকারের এক বিক্ষুব্ধ সমুদ্রে গুটিকয় ‘সব পেয়েছি’র দ্বীপে পরিণত হওয়ার সম্মুখীন হয়েছে, সেই চরম পরিণতি থেকে বিশ্বকে রক্ষার জন্য বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকে অনুন্নত দেশগুলো সমস্যাবলি ও উদ্বেগের ভাগ নিতে হবে।’’

বাঙালিদের আটকে রাখার ফলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পাকিস্তানে বাঙালিদের দিনের পর দিন অন্যায়ভাবে আটকে রাখার ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। পাকিস্তান বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে, তার সংবিধানে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে, দিচ্ছে। পাকিস্তান ঠিক তখনই তার সংবিধানে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।’

অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের জন্য আহ্বান জানান। অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধে কমনওয়েলথ জনমত গড়ে তুলবে—এই আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন রাখেন— পৃথিবীতে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আমরা কি সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে পারি না?’ বঙ্গবন্ধু বিশ্ব শান্তির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। ভিয়েতনাম প্রশ্নে প্যারিস শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং কম্বোডিয়ায় অবিলম্বে বোমাবর্ষণ বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।

ডেইলি অবজারভার, ৪ আগস্ট ১৯৭৩ গ্রামীণ জনগণের প্রতি সমর্থন

দক্ষিণ আফ্রিকা, রোডেশিয়া ও মোজাম্বিক প্রভৃতি দেশের মুক্তিকামী জনগণের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এসব দেশের নির্যাতিত জনগণ উপনিবেশবাদী, সাম্রাজ্যবাদী ও বর্ণবৈষম্যবাদ শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাদের জাতীয় মুক্তির জন্য যারা মানুষের মর্যাদা ও স্বাধীনতার মূল্য দিয়ে থাকেন। এসব দেশের জনগণের সংগ্রামে তাদের সমর্থন করতে হবে। উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত নির্যাতিত মানুষের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মোজাম্বিকের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেন এবং বলেন, ‘ইসরায়েল কর্তৃক অব্যাহতভাবে আরব এলাকা দখল শান্তির প্রতি এক দারুণ হুমকি।’

এদিকে হাজারো কর্মব্যস্ততার মধ্যেও দেশবাসীর খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে প্রথম সুযোগেই তিনি যোগাযোগ করেন এবং দেশ সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। কথাবার্তা বলার সময় তিনি শিল্পমন্ত্রীকে জানান যে ভালোই আছেন এবং ১৩ আগস্ট দেশে ফিরবেন।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মুজিব বর্ষ উদযাপনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের খরচ ১২৬১ কোটি
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
সর্বশেষ খবর
পুলে ঝড় তুলে সেরা তন্ময় ও জুই
পুলে ঝড় তুলে সেরা তন্ময় ও জুই
এরদোয়ানের সঙ্গে সিরীয় প্রেসিডেন্টের বৈঠক
এরদোয়ানের সঙ্গে সিরীয় প্রেসিডেন্টের বৈঠক
তিন জেলায় পানিতে ডুবে ৬ শিশুর মৃত্যু
তিন জেলায় পানিতে ডুবে ৬ শিশুর মৃত্যু
নজরুল কনসার্ট মাতাবে যে ১০ ব্যান্ড
নজরুল কনসার্ট মাতাবে যে ১০ ব্যান্ড
সর্বাধিক পঠিত
বগুড়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৭ লাখ ৪৬ হাজার পশু
বগুড়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৭ লাখ ৪৬ হাজার পশু
অবশেষে বিএনপিকে সময় দিলেন ড. ইউনূস, ডাকলেন জামায়াতকেও
অবশেষে বিএনপিকে সময় দিলেন ড. ইউনূস, ডাকলেন জামায়াতকেও
শিগগির জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতার পদত্যাগ
শিগগির জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতার পদত্যাগ
আত্মগোপন থেকে বাড়ি ফিরে নির্যাতনের শিকার সেই আ.লীগ নেতার মৃত্যু
আত্মগোপন থেকে বাড়ি ফিরে নির্যাতনের শিকার সেই আ.লীগ নেতার মৃত্যু
নুরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের
নুরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের