(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১১ আগস্টের ঘটনা।)
কমনওয়েলথ সম্মেলনে সরকারপ্রধানরা ইশতেহারে চারটি প্রধান ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অভিমত পুরোপুরি অনুমোদন করেছেন। চারটি বিষয় হচ্ছে-ভারত মহাসাগরকে শান্তির এলাকা ঘোষণা, ইউরোপীয় সাধারণ বাজারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কমনওয়েলথ দেশগুলোর জন্য ব্রিটিশ বাজারে বিশেষ সুবিধা বজায় রাখা, আফ্রিকার স্বাধীনতা সংগ্রামে জনগণের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ বিজয় অর্জনে তাদের মানবিক সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের ব্যবস্থা করা।
ইশতেহারে শুধু যে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্ভাবিত চারটি প্রধান বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা নয়, অধিকন্তু সেসব বিষয় পুরোপুরিভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে।
অটোয়া থেকে আগের এক খবরে বলা হয়, কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে এই আশা ব্যক্ত করা হয় যে, প্রক্রিয়ায় সাধারণ বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে আসন্ন আলাপ-আলোচনায় সাংগঠনিক বা অন্যান্য বিশেষ বাণিজ্যিক ব্যবস্থাদি সম্পর্কে ন্যায়সঙ্গত সুষ্ঠু ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
৯ দিনব্যাপী কমনওয়েলথ সম্মেলন শেষে প্রকাশিত ইশতেহারে বলা হয়, কমনওয়েলথের উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের মতামতে উল্লেখ করে, পারস্পরিক লেনদেনের মনোভাবই সমাধান এনে দিতে পারে।
বাণিজ্য সম্পর্কে ইশতেহারে আশা প্রকাশ করা হয় যে, আগামী সেপ্টেম্বরে টোকিওতে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন বিশ্ব বাণিজ্য আলোচনায় বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য বিস্তারের নিশ্চয়তা বিধান করবে এবং উন্নয়ন দেশগুলোর প্রয়োজনীয় চাহিদা সম্পর্কে বিশেষ হিসাব-নিকাশে নেবে।
সম্মেলনে আশা করা হয়, ব্রিটেন ছাড়া কমনওয়েলথের উন্নত দেশগুলোর বাজারে উন্নয়নশীল দেশের জন্য বর্তমানে চালু অনুকূল অবস্থা বজায় থাকবে।
অর্থ সম্পর্কিত বিষয়ে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কমিটির কার্যাবলী সরকারগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছে। তারা শিগগিরই স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থা কায়েমের কাজে অগ্রসর হওয়া জরুরি বলে স্বীকার করেছে। এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিশেষ অবস্থার কথা বিবেচনা করতে হবে।
যুক্ত-ঘোষণা মেনে নিলেই নিষ্পত্তি হবে
১৮ আগস্ট দিল্লিতে ভারত-পাকিস্তান কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা শুরুর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত পি এন হাকসার ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ঢাকা আসবেন। বাংলাদেশ সুস্পষ্ট জানিয়েছে, উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার যেকোনও গঠনমূলক প্রস্তাবে সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত। তবে সমস্যার সমাধান হিসেবে অবশ্যই ভারত-বাংলাদেশের যুক্ত ঘোষণা মেনে নিতে হবে।
বাংলাদেশ কথাটা পাকিস্তানকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য ভারতকে বলেছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিংয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসেন এবং ভারত-পাকিস্তান কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনার বিষয় নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন।
এ ছাড়া আগেও অটোয়ায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনকে পিন্ডিতে অনুষ্ঠিত ভারত-পাকিস্তান আলোচনার ফলাফল জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবুও আসন্ন ভারত-পাকিস্তান আলোচনায় দিল্লি-ঢাকা যৌথ কৌশল সম্পর্কে বাংলাদেশ নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন বলে জানান তিনি।
এখন যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে, তা হলো যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও বাংলাদেশে অবস্থানকারী পাকিস্তানিদের নিজদেশে ফিরিয়ে নেওয়া।
অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি
দল-মত জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দেশবাসীকে বিদেশ থেকে প্রত্যাগত প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা জ্ঞাপনের আহ্বান জানান অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
এদিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিবৃতিতে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুগোস্লাভিয়ায় তার রাষ্ট্রীয় সফর জোট-নিরপেক্ষ দুনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার শক্তিশালী সেতুবন্ধন রচনায় সহায়ক হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব স্থাপন হয়েছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জোটনিরপেক্ষ দুনিয়ায় ভ্রাতৃত্ব এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রভৃতির ক্ষেত্রে অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।