(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৫ নভেম্বরের ঘটনা।)
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেকোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জনগণকে সম্ভাব্য সকল প্রকারের সাহায্য করার জন্য বাংলাদেশ রেডক্রসের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু ঘূর্ণিঝড় সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় তাদের সাহসিকতার সঙ্গে জনগণের সেবায় সব সময় প্রস্তুত থাকতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী এদিন বিকালে গণভবনে থেকে দেশের উপকূলবর্তী এলাকাগুলোয় মোতায়েন বাংলাদেশ রেডক্রসের প্রায় ২০ হাজার অফিসার, স্বেচ্ছাসেবী ও কর্মীদের নিবেদন করেন। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিলে রেডক্রসের স্বেচ্ছাসেবকরা যে সতর্কতার পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন সেজন্য তিনি তাদের ধন্যবাদ জানান। বঙ্গবন্ধু উপকূলে পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণের নির্দেশ দেন, যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ স্বাভাবিকভাবে প্রতিরোধ করা যায়। তিনি উল্লেখ করেন, উপকূলে গাছ ও ঝোপঝাড়ের অভাবে অতীতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়।
বিদেশিদের নিয়োগ দিতে বাধ্য হচ্ছে শিপিং করপোরেশন
বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ বিশেষ করে ব্রিটিশ মার্চেন্ট নেভিতে কর্মরত জাহাজে বাঙালি টেকনিক্যাল অফিসারের তীব্র সংকটের কারণে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন-এর জাহাজ সংগ্রহ কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারের তীব্র সংকট থাকায় বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন বিদেশি নাগরিকদের নিয়োগ দিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে বেতন বাবদ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে নোঙর করা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বৃহত্তম জাহাজ ‘বাংলার আশা’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার একজন যুগোস্লাভ আর সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার একজন পোলিশ নাগরিক। পলিটেকনিক্যাল স্টাফের অভাবে তাদের নিয়োগ করতে হয়েছে।
পাকিস্তানের কিছু যুদ্ধবন্দি দেশে ফিরতে অনিচ্ছুক
পাকিস্তানের কিছু যুদ্ধবন্দি ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বলেছে তারা পাকিস্তানে ফিরে যেতে ইচ্ছুক নয়। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম এক প্রশ্নের জবাবে সংসদে এদিন এ তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গত ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩ হাজার ২৬৮ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী স্বদেশে ফিরে গেছে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের সন্তোষ
বাংলাদেশকে সাহায্যকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে জাতিসংঘ সন্তোষ প্রকাশ করে। তারা বলে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি বর্তমানে ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে। ১২ নভেম্বর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের কয়েক দফা বৈঠকের পর এক ইশতেহারে উক্ত অভিমত প্রকাশ করা বলা হয়, বাংলাদেশের কেউ অনাহারে মৃত্যুর মুখে পতিত হয় নাই। অথচ অনেকেই অনাহারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা প্রকাশ করেছিল। ইশতেহারে এও লেখা আছে বাংলাদেশের সমস্যা এখনও দূর হয়নি। ডিসেম্বরে আনরবের কাজ শেষ হওয়ার পরও খাদ্য আমদানির প্রয়োজনীয়তা বিরাজ করবে। খাদ্য সরবরাহের জন্য পরিবহনের সমস্যাও বহাল থাকবে। পাকিস্তান প্রত্যাগতদের পুনর্বাসনসহ বাংলাদেশ সরকার অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
ইসরায়েল-মিসর বন্দিবিনিময় শুরু
ইসরায়েল ও মিসর নিজেদের মধ্যে যুদ্ধবন্দি বিনিময় শুরু করেছে। ফলে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে অচলাবস্থা দূর হলো এবং বছর শেষ হওয়ার আগেই আরও ঐতিহাসিক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠানের পথ উন্মুক্ত হলো। যুদ্ধবন্দি বিনিময় শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সুয়েজ সড়কের ওপর জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েল সম্মত হয়। এদিন সকালে এক পাশে বিমানযোগে আহত যুদ্ধবন্দিদের বিনিময় শুরু হয়। কায়রো থেকে ২৬ জন আহত ইসরায়েলি সেনাকে নিয়ে একটি উড়োজাহাজ তেল আবিব রওনা হয়। অপরদিকে ৪৪ জন আহত মিসরীয় সেনাকে নিয়ে অপর একটি উড়োজাহাজ কায়রোর উদ্দেশ্যে তেল আবিব ত্যাগ করে। উল্লেখযোগ্য যে কায়রো ও তেল আবিবের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল ইতিহাসে এই প্রথম। আশা করা হয় ৬-৭ দিনের মধ্যে যুদ্ধবন্দি বিনিময় সম্পন্ন হবে।