X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বেবিচক

চৌধুরী আকবর হোসেন
১৬ মার্চ ২০২২, ১০:০০আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২২, ১৮:২২

কর্মীদের হাজিরা থেকে শুরু করে, উড়োজাহাজের চার্জ আদায়সহ বিভিন্ন কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের (ভিপিএন) মাধ্যমে দেশের বাকি বিমানবন্দরও বেবিচকের প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। তবে এ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের লাইসেন্সের মেয়াদ পার হয়েছে ৯ মাস আগে। ফলে যেকোনও সময় সাইবার অ্যাটাক বা ভাইরাসের কবলে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বেবিচকের ডেটা সেন্টার।

নিজস্ব প্রযুক্তিবিদ না থাকায় বেবিচকের ডেটা সেন্টার, সফটওয়্যার ও নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এতেও আছে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি।

জানা গেছে, বেবিচকে পরিচালনা ও পরিকল্পনা, এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে, প্রশাসন, অর্থ, নিরাপত্তা, ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স, প্রকৌশল বিভাগ থাকলেও আইটি বিভাগ নেই। রাডার, টেলিকমিনিউকেশন, নেভিগেশনের বিভিন্ন বিষয় পরিচালিত হচ্ছে বেবিচকের নিজস্ব জনবলে। এজন্য রয়েছে কমিনিউকেশন, নেভিগেশন, সার্ভেইল্যান্স (সিএনএস) বিভাগ। একই বিভাগ  সফটওয়্যার সল্যুশনসহ প্রযুক্তিগত বিষয়গুলোও দেখাশোনা করছে।

এসব যন্ত্রপাতি কেনাকাটা করছে বেবিচকের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড স্টোর ইউনিট (সেমসু)। সেখানেও নেই দক্ষ প্রযুক্তিবিদ। সময়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ‍যুক্ত হলেও তা দেখাশোনা করছে সিএনএস বিভাগ। যেখানে নেই কোনও প্রোগ্রামার বা কম্পিউটার প্রকৌশলী। ফলে বেবিচকের প্রযুক্তিগত পরামর্শ, দরপত্র যাচাই, ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণসহ যাবতীয় কাজে নির্ভর করতে হচ্ছে আউটসোর্সিংয়ের ওপর।

সূত্র জানায়, বেবিচকের লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (ল্যান), ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (ওয়ান), ডেটা সেন্টার, ৩৫টি বিভিন্ন মডিউলের সফটওয়্যার, বিভিন্ন কম্পিউটার ও নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাউথটেক লিমিটেড। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ম্যানেজড আইসিটি সাপোর্ট সার্ভিসের আওতায় বেবিচকের সকল বিভাগ, শাখা ও ইউনিটের আইসিটি ও ই-গভর্ন্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে দায়িত্ব দেয় বেবিচক।

সূত্র জানায়, প্রায় ১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সাউথটেককে দায়িত্ব দেয় বেবিচক। তিন বছর মেয়াদে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও সাউথটেকের। ২০২১ সালের ২৪ জুন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। পরে আবারও তিন বছরে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ৩০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা প্রস্তাব করে সাউথটেক। তবে সাউথটেকের এই আর্থিক প্রস্তাব বেশি মনে হওয়ায় বেবিচক কমিটি গঠন করে অন্য প্রতিষ্ঠানের দরপত্র যাচাই করার উদ্যোগ নেয়। এ অবস্থায় নতুন করে কাউকে দায়িত্ব না দেওয়া পর্যন্ত সাউথটেককেই সেবা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয় বেবিচক।

সূত্র জানায়, এরমধ্যে বেশ কিছু সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের লাইসেন্সের মেয়াদ পার হয়েছে। বেবিচকের সঙ্গে নতুন চুক্তি না হওয়ায় লাইসেন্স নবায়ন করতে পারছে না সাউথটেক।

কেন লাইসেন্স নবায়ন জরুরি জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতরের নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার মো. তুহিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত নতুন ভাইরাস ও হ্যাকিং থ্রেট তৈরি হচ্ছে। সেগুলো প্রতিরোধ করতে সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রটেকশন সল্যুশন তৈরি করে। লাইসেন্স নবায়ন না করলে সেই সল্যুশন আপডেট হবে না।’

নতুন করে চুক্তি প্রসঙ্গে বেবিচকের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড স্টোর ইউনিটের (সেমসু) নির্বাহী পরিচালক মো. মহসিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন সফটওয়্যার দিয়েছে সাউথটেক। তারা জানিয়েছে লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। আমরা দরপত্র আহ্বান করেছি। শিগগিরই নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে যোগ্য প্রতিষ্ঠানই কাজ পাবে।’

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে অটোমেশনের উদ্যোগ নেয় বেবিচক। তবে নিজস্ব প্রযুক্তিবিদ না থাকায় তিন কোটি টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয় একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। তাদের কাজ ছিল কোন প্রক্রিয়ায় অটোমেশন করা হবে তা বের করা। তবে সেই প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি।

সাউথটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মামনুন কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বেবিচকের সফটওয়্যার তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি আমাদের প্রতিষ্ঠান করছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দেশের স্বার্থে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু জটিলতা হচ্ছে সফটওয়্যারের মেয়াদ নিয়ে। নিরাপত্তার স্বার্থে এগুলো নবায়ন করা জরুরি। আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে যতটা সম্ভব প্রটেকশন দিচ্ছি। এ বিষয়ে বেবিচককে জানিয়েছি।’

বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের আইটি টিম আছে। তবে যোগ্যতা, দক্ষতা ও সংখ্যার বিচারে আমাদের টিম যথেষ্ঠ শক্তিশালী নয়। এজন্য আউটসোর্সিংয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি নিজস্ব জনবলকে দক্ষ করে তুলতে। নিয়োগ প্রক্রিয়াও চলমান। এটা সম্পন্ন হলে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মীদের দক্ষ করে তোলা হবে। তখন বেবিচক নিজেই সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে।

লাইসেন্স নবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রকিউরমেন্ট পলিসি আছে। পলিসির বাইরে যেতে পারি না। নিয়ম অনুসরণ করতে গিয়ে দরপত্র দেওয়ার পর আবার দরপত্র দিতে হচ্ছে। এরমধ্যে লাইসেন্সের সময় চলে গেছে। এটা ক্রুশিয়াল পিরিয়ড। তবে আমরা একটা টিম করেছি, যেন সবাই সাবধানে থাকে।’

/এফএ/
সম্পর্কিত
মে থেকে বাংলাদেশে ফ্লাইট শুরু করবে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স
ইসরায়েল থেকে ফ্লাইট আসার ব্যাখ্যা দিলো বেবিচক
তৃতীয় টার্মিনাল বুঝে নিতে অপেক্ষা করতে হবে ছয় মাস
সর্বশেষ খবর
দিয়াবাতেকে ছাড়া মোহামেডানের হোঁচট, ৫ গোলের ম্যাচে ব্রাদার্সের চমক
দিয়াবাতেকে ছাড়া মোহামেডানের হোঁচট, ৫ গোলের ম্যাচে ব্রাদার্সের চমক
সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন, ব্যতিক্রম থাকতেই পারে
মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানসাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন, ব্যতিক্রম থাকতেই পারে
জন্ম আর মৃত্যুর সুরেলা মেলবন্ধনের প্রতিধ্বনি
৩৫তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবজন্ম আর মৃত্যুর সুরেলা মেলবন্ধনের প্রতিধ্বনি
দারুণ সেঞ্চুরিতেও রাব্বির কাছে ম্লান সাকিব
দারুণ সেঞ্চুরিতেও রাব্বির কাছে ম্লান সাকিব
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ