X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১
জহির রায়হান হত্যা দিবস

কাচের দেয়ালের মতো ভেঙে গেছে স্বপ্ন

উদিসা ইসলাম
৩০ জানুয়ারি ২০১৬, ১২:৫৩আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০১৬, ১৮:৫১

৩০ জানুয়ারি ১৯৭৩

মুক্তিযুদ্ধের সময় জহির রায়হানকে খুঁজে না পাওয়ায় বিজয় পরবর্তী সময়ে সেই শোধ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা। ১৯৭২ সালে ৩০ জানুয়ারি এক ফোন পেয়ে নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারের খোঁজ নিতে মিরপুরে গিয়ে আর ফেরেননি তিনি। মুক্তিযুদ্ধের দালিলিক প্রমাণ নিয়ে নিজেই তদন্তে নেমে পড়েছিলেন এই চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অ্যাক্টিভিস্ট। মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা তখনও মিরপুরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। সেই অবরুদ্ধ মিরপুর মুক্ত হওয়ার আগের দিন শুধু জহির রায়হানই নয়, তার সঙ্গে মেরে ফেলা হয়েছিল ৪২ জনকে। যাদের মধ্যে তিন-চারজন বাদে কারোর লাশই পাওয়া যায়নি।

জহির রায়হান ৩০ জানুয়ারি ভাইয়ের খোঁজে বেরিয়ে আর ফিরে আসেনননি

জহির রায়হানের হত্যাকে মৃত্যু হিসেবে ধরে নেওয়া হলেও ধীরে ধীরে একের পর এক বেরিয়ে আসে হত্যার সময়কার প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদের জবানবন্দিতে জানা যায়, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয় নিয়ে  এগিয়ে চলা জহির রায়হানের স্বপ্নকে কিভাবে ভেঙে ফেলা হয়। আর কেন ভেঙে ফেলা হয় সেটাও বের হতে বেশিদিন লাগেনি। তবে জহির রায়হান হত্যার আলাদা করে তদন্ত হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্টরা।

২৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ দৈনিক অবজারভার এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জহির রায়হান বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। সেসময় তিনি অনেকটা একাই তদন্ত করছিলেন এবং বেশকিছু দলিলপত্রও জোগাড় করেছিলেন। টিঅ্যান্ডটি, বুয়েট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও পুলিশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেশকিছু কর্মকর্তা বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েও ছিলেন এই নির্মাতা।

দৈনিক অবজারভার-এর এই প্রতিবেদনটিতে বুদ্ধিজীবী হত্যা নিয়ে জহির রায়হানের দাবি তুলে ধরা হয়েছে

জহির রায়হানের হত্যাকে মৃত্যু বানানোর অপচেষ্টা চলেছে লম্বা সময়জুড়ে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে তার সুরাহা হয় অনেকখানি। মেজর জেনারেল মইনুল ইসলাম চৌধুরী (অব.) বীরবিক্রম তার বইতে লিখেছেন, মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইব্রাহীম (অব.) এর বক্তব্যের সঙ্গে সুবেদার মোখলেছুর রহমান (অব.) এর বিস্তারিত বর্ণনা মিলিয়ে আমরা জহির রায়হানের নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে সত্য উদঘাটন করতে পারি, কারণ এ নিয়ে অনেক অপপ্রচার হয়েছে।

জেনারেল মুহাম্মদ ইব্রাহীম (অব.) এর বক্তব্য অনুযায়ী, ‘জহির রায়হান সেখানে গিয়েছিলেন তার ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারের সন্ধানে, সেনা সদস্যদের সহগামী হয়ে। মিরপুরে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানি সেনা ও বিহারিদের আক্রমণে এইদিন শুধু জহির রায়হান নয়, লে. সেলিম, নায়েব সুবেদার আবদুল মুমিনসহ দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৪০ জন সেনা নিহত হন এবং তাদের দেহাবশেষ কোনওদিনই খুঁজে পাওয়া যায় নাই।

৩০ জানুয়ারি ১৯৭৪

তিনি আরও লিখেছেন, ওই সময় আমাদের সেনাদের কোনও মৃতদেহ দেখতে পাইনি। পরিস্থিতির কারণে তাৎক্ষণিকভাবে ভেতরের দিকে খোঁজাখুঁজি করা সম্ভব হয়নি। নিহতদের মধ্যে লে. সেলিমসহ মাত্র কয়েকজনের মৃতদেহ দিন দুয়েক পর পাওয়া যায়। পুরো এলাকা জনশূন্য করার পরও বাকিদের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। ৩০ জানুয়ারি রাতেই সম্ভবত বিহারিরা সেগুলো সরিয়ে ফেলে।

আন্তজর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও দীর্ঘবছর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে অ্যাক্টিভিজমের সঙ্গে জড়িত তুরিন আফরোজ বলেন, ‘জহির রায়হানের যে কাজ এবং অবদান তা অনন্য। এই নিখোঁজ হওয়াটা বুদ্ধিজীবী হত্যারই অংশ।’

তিনি বলেন, বিশ্বের কাছে মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে যে অবদান জহির রায়হান রেখেছেন তেমন একজন ব্যক্তি হঠাৎ হারিয়ে গেলেন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সেটা মেনে নেওয়া সম্ভব না। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে যে মামলা পরিচালিত হয়ে আসছে সেখানে জহির রায়হানের নিহত হওয়ার বিষয়টি আনা হয়নি কারণ এটা ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কাল রাখা হয়েছে। কিন্তু আলাদাভাবে এই মামলা তদন্ত হওয়া জরুরি এবং আমি শুনেছি এ নিয়ে সেসময়ই একটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল। সেই প্রতিবেদন আমরা দেখতে চাই।

জহির রায়হান

জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সঙ্গে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। রাজনৈতিকভাবে পরিবার থেকেই তার পথচলা শুধু। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন।

পত্রিকা কৃতজ্ঞতা: সিবিজিআর ও আইসিএসএফ।

/এসটি/ এএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন: বিচারের অপেক্ষায় এক দশক পার
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন: বিচারের অপেক্ষায় এক দশক পার
জাতীয় পার্টির (কাদের) বর্ধিত সভা শুরু
জাতীয় পার্টির (কাদের) বর্ধিত সভা শুরু
লোহিত সাগরে আরেক তেলবাহী জাহাজে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
লোহিত সাগরে আরেক তেলবাহী জাহাজে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
‘আমার স্ত্রী শুধু অন্যের পরামর্শ শোনে’
‘আমার স্ত্রী শুধু অন্যের পরামর্শ শোনে’
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!