X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
এডিটরস গিল্ডের গোলটেবিল বৈঠক

মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:৫৪আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫:০৯

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যূত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এখন আমাদের জন্য সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ ও বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়ায় এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর পেছনে ভূরাজনীতিরও একটা প্রভাব রয়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ প্রয়োগ করতে হবে। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের ‘রোহিঙ্গা সংকট- সীমান্ত পরিস্থিতি- ভূরাজনীতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

গোলটেবিল বৈঠকে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, যারা কথায় কথায় স্যাংকশন দেয় তাদের উচিত মিয়ানমারের ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে এটা দেওয়া। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে তাদের বলা উচিত এভাবে চলতে পারে না। সুইফট সিস্টেম থেকে মিয়ানমারকে বাদ দেওয়া উচিত। কূটনৈতিকভাবে এই সমস্যার সমাধানের দিকে আমাদের এগোতে হবে। সমস্যার কথা চিন্তা করে আমাদের কিছু মিসাইল কক্সবাজারের দিকে মোতায়েন করা উচিত। সীমান্ত এলাকায় ভারত ও চীনের কিছু ইপিজেড বসিয়ে দেওয়া উচিত। পর্দার আড়ালে মিয়ানমারের সঙ্গেও একটি ডিপ্লোম্যাসি করা উচিত।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ বলেন, মিয়ানমার আর্মির বিরুদ্ধে সেখানকার অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটা প্রক্রিয়া আমরা দেখছি। সীমান্তে আমরা নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক রেখেছি। তবে ডিপ্লোম্যাসির ক্ষেত্রে অপ্রতুলতার কথাও সামনে আসছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই সংকট বেশিদিন দীর্ঘায়িত হলে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে থাকা আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদেরও পাশে টানার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গা যুবকরা যদি তাদের মাতৃভূমি জন্য লড়াই শুরু করে তাহলে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে!

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, অং সান সু কি ক্ষমতা হারানোর পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের মনোযোগে পরিবর্তন এসেছে। ক্ষমতা দখলকারীরা দুর্বল থাকায় সেই সুযোগ নিচ্ছে অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীগুলো। আরাকান আর্মিসহ অন্যরাও নিজেদের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই সুযোগটা আন্তর্জাতিক বিজনেস কমিউনিটিও নিচ্ছে, অস্ত্র ব্যবসা বাড়ছে।

তবে আন্তর্জাতিক আদালতে দুটি জাজমেন্ট রোহিঙ্গাদের পক্ষে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেটি বুঝেই মিয়ানমারের জান্তারা একটি সংঘাত চাইছে। তারা এর সঙ্গে বাংলাদেশকে জড়াতে চাইছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেন, মিয়ানমার আর্মির এই মুহূর্তে শক্তি থাকলেও বাংলাদেশে আক্রমণ করার সক্ষমতা নেই। আমরা ডিফেন্সিভ অবস্থায় আছি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ও ভারতের কী অবস্থান সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ২০১৭ সালে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা জোরদার অব্যাহত রাখতে হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. আব্দুর রব খান বলেন, দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে যথেষ্ট কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এখনও তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি। বরং পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সম্প্রতি সীমান্তের ওপারে সংঘাতে রোহিঙ্গা ইস্যুটি আরও পেছনে চলে যাচ্ছে। মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় জান্তা সরকার দুর্বল থাকায় ইচ্ছাকৃতভাবেই এমনটি করতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে সেটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এটি বেড়ে চললেও আমরা কিন্তু ভিকটিম না। মিয়ানমারের আচরণ সবার জন্যই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ এটিকে ভালোভাবেই মোকাবিলা করছে।

বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ডের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। এটি সরাসরি সম্প্রচার করে বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টেলিভিশন।

 

 

/এমআরএস/এফএস/
সম্পর্কিত
ফিরলেন ১৭৩ বাংলাদেশি, মিয়ানমারে ফেরত যাবেন ২৮৮ জন
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!