X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মহত্যার পোস্টমর্টেম: শিক্ষার্থীরা বাঁচুক

সাদ্দিফ অভি
১০ অক্টোবর ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২২, ১৭:১৪

‘আমি যদি বন্ধুদের সঙ্গে ভালোভাবে মিশতে পারতাম, তাহলে এটা হতো না। এখন আমি অধঃপতিত হলাম। আমি আপনাদের কাছে একদম ক্ষমার অযোগ্য, তবুও সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি’, এমন একটি চিরকুট লিখে গত জানুয়ারি মাসে আত্মহত্যা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অনিক চাকমা। তার লেখা চিরকুট দেখে শিক্ষকরা তখন বলেছিলেন, অনিক হয়তো দীর্ঘদিন ধরে হতাশায় ভুগছিল।

চিরকুটে আরও  লেখা ছিল, ‘আমি এমনি খুবই ডিপ্রেশনে ছিলাম। এমনকি ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় থেকে ডিপ্রেশনে আছি। সেই থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত মোটামুটি ভালো খেলাধুলা করেছি, বন্ধুবান্ধব পেয়েছি। সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ।’

দেশে গত ৯ মাসে ৪০৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। আত্মহননকারীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫৭ জন, স্কুলের ২১৯ জন, মাদ্রাসার ৪৪ জন, কলেজ পড়ুয়া ৮৪ জন। এদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ছিল ২৪২ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬২ জন। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য দায়ী যে সমস্যাগুলো জরিপে উঠে এসেছে, তা মোটামুটি চার ধরনের— অ্যাকাডেমিক চাপ, আর্থিক সংকট ও ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা এবং শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ।   

এমন প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সোমবার (১০ অক্টোবর) দেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০২২’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে— ‘মেকিং মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েল-বিয়িং ফর অল অ্যা গ্লোবাল প্রায়োরিটি।’ অর্থাৎ ‘সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে বিশ্বব্যাপী অগ্রাধিকার দিন।’ সংস্থাটির মতে, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী সাত লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। তবে আত্মহত্যার চেষ্টা করা ব্যক্তির সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। ৭৭ শতাংশ আত্মহত্যা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে হয়ে থাকে।

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা এবং আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। যে সমস্যাগুলো নিয়ে তারা ভুগে থাকেন, তার অনেকগুলোই চাইলে সমাধান করা যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, শিক্ষকদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি, মন খুলে কথা বলার মতো সামাজিক পরিবেশ তৈরি ইত্যাদির মাধ্যমেও তাদের এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের (অবসরপ্রাপ্ত) অধ্যাপক  এবং বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি ড. মো. মাহমুদুর রহমান বলেন,  ‘পড়াশোনার চাপ, পরীক্ষার চাপ, সামাজিকতা, ব্যক্তিগত হতাশার মতো নানা ব্যাপার শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে, আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ছে এবং এর প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন পথ খুঁজে বেরাচ্ছে, অনেকক্ষেত্রে সফলও হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধে নিশ্চিত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। একইসঙ্গে তা বাস্তবায়নের কাজ সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দসহ এ সংক্রান্ত জাতীয় নীতি ও তার শতভাগ প্রয়োগের উদ্যোগ নিশ্চিত করা জরুরি।’

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আশিক সেলিম বলেন, ‘আত্মহত্যা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের সমাজের কারণে কিংবা অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আত্মহত্যা হচ্ছে— বিষয়টা কিন্তু এমন না। বেপরোয়াভাব আত্মহত্যার অন্যতম একটি কারণ। বিশেষ করে যখন একজন মানুষ মনে করে— তার আর কোনও উপায় নেই, কোনও পথ নেই, তারাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আবার আত্মহত্যার কথা মাথায় আসাও কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু না। যেমন আমরা যদি কোনও উঁচু পাহাড়ে দাঁড়াই, কিংবা ব্রিজে দাঁড়াই— লাফ দিতে ইচ্ছে করে। এটিও আত্মহত্যার চিন্তা। যখন আমরা এসব চিন্তা করি সেটি একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কিন্তু এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া থেকে আত্মহননের পথে যাওয়া হচ্ছে মূল বিষয়। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা সত্যি শঙ্কার বিষয়। কারণ, একজন শিক্ষার্থী কিংবা তরুণরাই সমাজের পরিবর্তন আনে। তরুণরাই যদি হতাশ হয়ে যায়, তাহলে তার অর্থ কী।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পিএইচডব্লিউসিতে অধিকাংশ কাউন্সিলিং হয় তরুণদের সঙ্গে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে গেছে ফলাফলকেন্দ্রিক। এখানে অনেক ভালো ফল করার প্রতিযোগিতা চলে। ভালো না করলে শাস্তি দেওয়া হয়। যার কারণে দেখা যায়, এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার পর অনেকেই আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা আমাদের সমাজে অনেক দুর্লভ একটা ঘটনা জনসংখ্যার প্রেক্ষাপটে, কিন্তু এটা পরিহার করা সম্ভব। এখানে হঠাৎ মরে যেতে ইচ্ছা করলো, জীবন দিয়ে দিলাম— এটিকে বলা হচ্ছে ইম্পালসিভ সুইসাইড। এক্ষেত্রে কিছু করার নেই। কারণ, আগে থেকে বুঝার কোন্র উপায় নেই। দ্বিতীয়ত, অনেকেই অনেক পরিকল্পনা করে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যায়। যারা প্ল্যান করে করে তাদেরকে চিহ্নিত করা সম্ভব। আমরা যদি একটু সতর্ক হই এবং অবসারভ করি। কারণ, তাদের আচরণে একটা পরিবর্তন আসে।’

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
বাবার সঙ্গে অভিমান করে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার অভিযোগ
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!