X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মারতে এলে হাত ভেঙে দিতে হবে, আগুন দিতে এলে পোড়াতে হবে: শেখ হাসিনা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৭:০২আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৭:৩৩

বাংলাদেশকে নিয়ে আর কাউকে খেলতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ বসে মাইর খাবে তা আর হবে না। আওয়ামী লীগ আর বসে থাকবে না। বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে তার জবাব দিতে হবে।

তিনি আরও বলেছেন, বারবার আঘাত করলে আমরা সহ্য করবো না। আমরা ২০২২ পর্যন্ত সহ্য করেছি। এখন আর করবো না। চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে সরকার হটানো যাবে না। যে হাত দিয়ে মারতে আসবে, সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দিতে আসবে, সে হাত দিয়ে তাদের পোড়াতে হবে। ওদের কীসের ক্ষমা। বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না। গণতন্ত্র তাদের মুখে মানায় না।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির প্রেসিডিয়ামে নেতাদের সঙ্গে সহযোগী সংগঠনগুলোর যৌথ সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় গণভবন থেকে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির প্রেসিডিয়াম নেতাদের সঙ্গে সহযোগী সংগঠনগুলোর যৌথ সভায় শেখ হাসিনা

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, প্রত্যেক এলাকায় আমাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। সেদিন তারা (নয়া পল্টনে বিএনপি) বিআরটিসির বাস পুড়িয়েছে। এটা তাদের টেস্ট ছিল। নেতাকর্মীদের বলছি, সবাই প্রস্তুত থাকুন। মেহনতি মানুষের ওপর আঘাত করলে তাদের ক্ষমা নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি জামায়াতকে নিয়ে আবার ক্ষমতা এলে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে। দেশের আর উন্নত হবে না। দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। কেউ বিশৃঙ্খলা করলে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না।

বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি আবারও বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। রাস্তার ওপর পুলিশের ওপর হামলা করছে।  চাল ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খেয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে সরকারের পতন করা যাবে না। সরকার পতন করা এত সহজ কাজ নয়। বিএনপি আবার সন্ত্রাসী হামলা শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হলে আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিএনপি যে হাত দিয়ে মারতে আসবে সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারতে আসবে সেই হাতকে পুড়িয়ে দিতে হবে। আর তাদের ছাড় নয়।

তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। দেশের মধ্যে কোনও বিশৃঙ্খলা করতে দেবো না। তাদের (বিএনপিকে) আর কোনও ক্ষমা করা হবে না, তাদের কীসের ক্ষমা।

বিএনপির নেতাকর্মীরা শান্তিতে ব্যবসা করছে, আওয়ামী লীগ কোনও বাধা দিচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী মাইর খেয়েছে, তারা কেন সেগুলো প্রচার করে না। আওয়ামী লীগ যেসব নির্যাতিত নেতাকর্মী আছে,  তাদের বিষয়গুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

অগ্নি সন্ত্রাসীদের, স্বাধীনতাবিরোধীদের আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে  আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ওরা আমাদের উৎখাত করবে? ওরা পকেট থেকে এসেছে আবার পকেটেই থাকবে। গণতন্ত্রের কথা ওদের মুখে মানায় না। এবার যেন আর কোনও বিআরটিসির বাস পোড়াতে না পারে। যেটা পোড়াতে যাবে, এখন তো সবার হাতে ক্যামেরা, ভিডিও ফুটেজ দেখে যেই হাতে আগুন দেবে, সেই হাত সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দিতে হবে। কোন দিন বলিনি এখন বলবো, আর মার খাওয়ার সময় নাই।

আমরা তো তাদের ওপর এভাবে অত্যাচার নির্যাতন করতে যাইনি

বিএনপির আমলে নির্যাতন হয়েছে দাবি করে তার চিত্র তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এসময় তিনি জানান তাদের দল প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। তিনি বলেন, ২০০১ সালে যে অত্যাচারটা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর করেছে আমরা ২০০৯-এ ক্ষমতায় আসার পর গুনে গুনে সেই অত্যাচারের জবাব দিতে পারতাম, সেই ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে। কই আমরা তো করি নাই। আমরা তো তাদের ওপর এভাবে অত্যাচার নির্যাতন করতে যাইনি।

সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাড়া মহল্লায় সতর্ক অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেই পঁচাত্তর থেকে একুশ বছর শুধু মার খেয়েছি। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত শুধু মার খেয়েছি। এবার যে হাত দিয়ে মারবে সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে মানুষকে আগুন দিতে আসবে সেই হাত আগুনে পুড়াতে হবে। পোড়ার যন্ত্রণাটা তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। এখনও পোড়া মানুষগুলোর অবস্থা দেখলে চোখে পানি আসে। মা দেখে চোখের সামনে স্বামী সন্তান পুড়ে যাচ্ছে। এদের কীসের ক্ষমা, এদের আর ক্ষমা নাই।

মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না

বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না দাবি করে তিনি বলেন, এটা আমার পরিষ্কার কথা। প্রত্যেকটা এলাকায় নেতাকর্মীরা মাঠে থাকতে হবে। আর আমাদের যতগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তাদের বলতে হবে তারা কি শান্তিতে থাকতে চায়? নাকি আবার অশান্তিকে জায়গা দিতে চায়। তাদের সিদ্ধান্ত দিতে হবে। জ্বালাও পোড়াও, হত্যা, খুন, মানি লন্ডারিং এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের শান্তিকে বিনষ্ট করতে দেওয়া হবে না। সবাই প্রস্তুত থাকবেন, বাংলাদেশের কোনও মানুষের একটা ক্ষতিও যেন করতে না পারে।

তিনি বলেন, দোকানপাটে সবাইকে বলে দেবেন তারাও যেন প্রতিবাদ করে। এর আগে বহু যন্ত্রণা দিয়েছে তারা। আমরা অনেক সহ্য করেছি। এভাবে আমার কৃষক শ্রমিক আমাদের নেতাকর্মী কারও গায়ে হাত দিলে আর ক্ষমা নাই।

তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ধরে এনে সাজা বাস্তবায়ন করবো

তারেক রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুচলেকা দিয়ে গেছিল সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবো, তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ধরে এনে সাজা বাস্তবায়ন করবো।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনিদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমেরিকা... তারা খুনি পালতেছে একটা, আবার কানাডা পালে আরেকটা, পাকিস্তানে আছে দুইটা। সবার কাছে বলবো এই খুনিদের ফেরত পাঠাতে হবে। আর ব্রিটিশ সরকারকে বলবো, তারেক জিয়াকে দেশে ফেরত পাঠাতে। কারণ সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারা (বহির্বিশ্ব) মানবতার কথা বলে, দুর্নীতির কথা বলে, আবার সেই খুনিকে দুর্নীতিবাজকে তাদের দেশে আশ্রয় দেয়। কাজেই তাকে বাংলাদেশের কাছে হ্যান্ডওভার করতে হবে। এই দেশে নিয়ে এসে সাজা আমি বাস্তবায়ন করবো।

তিনি বলেন, যেসব দেশ আমাদের দেশের গণতন্ত্রের কথা বলে, তাদের দেশের অবস্থা তো আমরা জানি, প্রতিদিন মানুষ খুন হয়, ভোটের সময় ভোট চুরি হয়েছে বলে তাদের ক্যাপিটাল হিলেও আক্রমণ হয়, পাঁচ-ছয় জন গুলি করে মারে, আর তাদের কাছ থেকে আমাদের গণতন্ত্রের ছবক নিতে হবে? বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হলো আমি তখনই দেশে চলে এসেছি। ওর বাপও তো আমাকে ঠেকাতে পারেনি। তারেক জিয়ার বাপও আমাকে ঠেকাতে পারেনি। আবার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তখনও পারেনি। এতই নেতৃত্ব দেওয়ার শখ দেশের বাইরে পালিয়ে থাকে কেন? ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, সেই সুযোগে ডিজিটালি কথা বলে।

আওয়ামী লীগ ভেসে আসেনি

আওয়ামী লীগ ভেসে আসেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের সংগঠন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতের সংগঠন। আর বিএনপির জন্ম কোথায়? জিয়াউর রহমানের উর্দি পরা পকেটে। পকেট থেকে কাগজ বের হয়েছে এমন সংগঠন। আওয়ামী লীগ কারও পকেটের সংগঠন না। এটা তাদের মাথায় রাখা উচিত। পকেটের সংগঠন সেই কারণে তাদের মাটিতে কোনও শিকড় নাই।

বিএনপি স্বর্ণলতার মতো উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যে গাছে উঠে সে গাছ খেয়ে শেষ করে দেয়, এটা হলো বিএনপি। যে গাছের ওপরে স্বর্ণলতা উঠে সে গাছে আর কোনও ফল ধরে না, বিএনপি দেশের ওপর উঠেছিল, তাই দেশটাকে খেয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ আসার পরে দেশের উন্নতি হয়েছে। উন্নতি করার জন্য মানসিকতা থাকা দরকার। আওয়ামী লীগ মানুষকে দিতে এসেছে।

বিএনপিকে যারা তেল মারছে, আমরা তাদেরও হিসাব করবো

গণমাধ্যম মালিকদের উদ্দেশ সরকারপ্রধান বলেন, যেসব মিডিয়া এখন ধরনা দিচ্ছে, এত টেলিভিশন... এ তো আমারই দেওয়া। আমি যদি উন্মুক্ত না করে দিতাম এত মানুষের চাকরিও হতো না, এত মানুষ ব্যবসাও করতে পারতো না। আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সে বিএনপির ব্যবসায়ীই হোক বা আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী হোক, সবাই কিন্তু শান্তিতে ব্যবসা করেছে। হাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই, খাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই; বরং ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছি। আবারও হাওয়া ভবন এলে, এখন এলে আরেকটা নাম দেবে। আবারও চুষে চুষে খাবে। শান্তিতে ব্যবসা করতে হবে না।

তিনি বলেন, বিএনপিকে যারা তেল মারছে, আমরা তাদেরও হিসাব করবো। আওয়ামী লীগের সময় আরাম আয়েশ করে ব্যবসা করে খাচ্ছে, কারও ব্যবসায় আমরা বাধা দেইনি। সবাইকে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে দিয়েছি। বিএনপির আমলে তো এত আরামে ব্যবসা করতে পারেনি। এই মিডিয়া একটা উল্টাপাল্টা লিখলেই তো মারতো। তারপরও এত আহ্লাদ কীসে, এত তেল মারা কীসে আমি তো জানি না। কত তেল আছে আমি দেখবো।

 

/এমআরএস/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাইল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ
সর্বশেষ খবর
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!