X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

‘বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৪আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:১৮

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের জয়ের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি ও জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’

দীর্ঘ ২৯০ দিন পাকিস্তানে কারাবন্দি থাকার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কিনা। আজ  আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যেতে দেখে ২৫ মার্চ কালোরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার  ও পরে  তাঁকে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে কারাবন্দি করা হয়।

পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় তিনি বন্দি ছিলেন কারাগারে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব-মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। আর পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি।

বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার প্রসঙ্গে রবার্ট পেইন লিখেছেন, ‘২৫ মার্চ রাতে বাসভবন থেকে গ্রেফতারের পর কুর্মিটোলা সেনানিবাসে কাটে ছয় দিন। তারপর ঢাকা থেকে নেওয়া হয় করাচি। পরের দিন মিয়ানওয়ালি কারাগারে। চার মাস পরে লায়ালপুর কোর্টে আসামির কাঠগড়ায়। এভাবে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের কারাগারেই কাটে জাতির পিতার পুরোটা সময়। কারাগারে দীর্ঘ সাড়ে ৯ মাস বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে মৃত্যুর প্রচ্ছন্ন হুমকিতে।’

কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনের (পিআইএ) বিশেষ ফ্লাইট ৬৩৫-এ করে গ্রিনিচ সময় ৬টা ৩৬ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ১২টা ৩৬ মিনিট) লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছান বঙ্গবন্ধু। পরদিন সকালে ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে করে ভারতের রাজধানী দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে আসেন বঙ্গবন্ধু। সেখানে ২১ বার তোপধ্বনির পর তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান দেশটির রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তারপর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।

দিল্লি থেকে ১০ জানুয়ারি সকালে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানবাহিনীর কমেট বিমানটি ঢাকার আকাশসীমায় পৌঁছালে তাঁর অপেক্ষায় থাকা বিপুল জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ে। বেলা ১টা ৫১ মিনিটে বিমানটি ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করলে সেদিকে এগিয়ে যান বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও অন্য নেতারা। তাদের সঙ্গে ছিলেন মুজিব বাহিনীর চার প্রধান, কেন্দ্রীয় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। তারা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন স্বদেশে অভ্যর্থনা জানান।

এদিন বিকাল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ লোকের উপস্থিতিতে ভাষণ দিতে গিয়ে বাঙালি জাতির পিতা সশ্রদ্ধ চিত্তে সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন। সবাইকে যুদ্ধবিদ্ধস্ত সদ্য স্বাধীন দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বরাবরের মতো এবারও নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। সোমবার (৯ জানুয়ারি) দলটির দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের শ্রদ্ধা নিবেদন। বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য দেশের প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এবং সংগঠনের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে।

/এমআরএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
রাঙামাটিতে ভেঙে ফেলা হচ্ছে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশি ২০ পাসপোর্টসহ ভারতীয় ট্রাকচালক আটক
বাংলাদেশি ২০ পাসপোর্টসহ ভারতীয় ট্রাকচালক আটক
করবিন-সুলতানার দল কি ব্রিটিশ রাজনী‌তি‌তে ভূমিকা রাখ‌তে পার‌বে?
করবিন-সুলতানার দল কি ব্রিটিশ রাজনী‌তি‌তে ভূমিকা রাখ‌তে পার‌বে?
সারা দেশে আগামী কয়েকদিন বাড়তে পারে বৃষ্টির প্রবণতা
সারা দেশে আগামী কয়েকদিন বাড়তে পারে বৃষ্টির প্রবণতা
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, এখনও শঙ্কায় পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, এখনও শঙ্কায় পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল