X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

লোডশেডিং আকস্মিক, এ মাসেই সমাধান: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৬ জুন ২০২৩, ২০:৩৪আপডেট : ০৬ জুন ২০২৩, ২১:৪৬

বিদ্যুতের লোডশেডিং পরিস্থিতিতে সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, লোডশেডিংটা আকস্মিক, এটা বেশি দিন থাকবে না। এই মাসের মধ্যেই সমাধান করতে পারবো।

মঙ্গলবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তিনি একথা বলেন। চলতি অর্থবছরে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের জন্য ৩২ কোটি ৪৬ লাখ চার হাজার টাকা মঞ্জুরি দাবি করেন প্রতিমন্ত্রী। তার এই দাবিতে ছাঁটাই প্রস্তাব দেন ১০ জন সংসদ সদস্য। তবে আলোচনায় অংশ নেন ছয় জন। বাকিরা অনুপস্থিত ছিলেন।

ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, কোভিড আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে, আরেকটি ক্ষতি হলো—করোনায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের স্বাস্থ্যগতভাবে মেমোরিটা লস করে দিয়েছে। কারণ আমরা খুব দ্রুত ভুলে যাই। একটা সময় ১৬ ঘণ্টা, ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকতো না। সেখান থেকে আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি।

বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট আকস্মিক উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যেকোনও মুহূর্তে ২০ থেকে ২২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে পারি। তার জন্য দরকার জ্বালানি। দুই-তিন বছর কোভিডে আক্রান্ত ছিল সারা বিশ্ব। প্রত্যেকটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর এলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সারা বিশ্বের সমস্ত কিছুর দাম বেড়ে গিয়েছিল। গ্যাস ও তেল পাওয়া যাচ্ছিল না। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি—কীভাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি রাখা যায়। বড় বড় চ্যালেঞ্জ আছে এবং থাকবে। আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হলো—সক্ষমতা, কত সাশ্রয়ে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ দিতে পারবো, সেটা ভবিষ্যতের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। বিশ্বের বাজার কখন, কী হবে ধারণা করা যাচ্ছে না, নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি পাবো কি পাবো না। নিজেদের জ্বালানির সর্বোত্তম ব্যবহার করছি আমরা। সেটা ভবিষ্যতে ব্যবহারের পরিকল্পনার জন্যও অর্থ লাগে। এক একটি কূপ খননের জন্য লাগে ৯ থেকে ২১ মিলিয়ন ডলার।

তিনি বলেন, বর্তমানে দিনের বেলায় ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারি। পিক আওয়ারে সন্ধ্যাবেলায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং বর্তমানে চলছে। আরেকজন সংসদ সদস্য বলছেন—আমরা প্রচার করছি না। কিন্তু আমি বারবার আসছি, প্রচার করছি। ওয়েবসাইটে দিয়েছি, বিজ্ঞাপন প্রচার করছি। আমরা কষ্টটা সকলের সঙ্গে ভাগ করতে চেয়েছি। সকলকে জানিয়েছি—কোথায়, কীভাবে হবে। এবং মিডিয়াতে বলা হয়েছে বারবার। লোডশেডিংটা আকস্মিক, এটা বেশি দিন থাকবে না।

নসরুল হামিদ বলেন, ৭১ বিলিয়ন ডলার পাওনার তথ্য ভুল। পাওনা আছে অবশ্যই, সকলের সহযোগিতায় সেটা আমরা অবশ্যই জোগান দিচ্ছি। অনেকেই বিল দিচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের বিল বাকি আছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। আমাদের একজন সংসদ সদস্য বলেছেন—আমরা বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছি। অনেকেই বিল দিচ্ছে না, কেন হলো? সেটা হলো করোনার কারণে। করোনার সময় আমরা বিল নেই নাই। আমরা বলেছি—মাসকে মাস বিল নিচ্ছি না। আমরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি যাতে মানুষ অস্বস্তিতে না পড়ে। আমরা প্রতিবছর জ্বালানি খাতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছি। তেলে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু গ্যাসে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এই বছরে ২৪ থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি যাবে শুধু বিদ্যুৎ খাতে। আমরা তো সমন্বয় করতে পারতাম। কিন্তু সেটা করি নাই। প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন সকলের কাছে যাতে বিদ্যুতটা পৌঁছায়। এ কারণে আমি মনে করি সকলকে ধৈর্যধারণ করতে হবে।

বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নসরুল হামিদ বলেন, আমরা সময়মতো কয়লার জন্য এলসি করতে পারিনি। বৈশ্বিক ব্যবস্থা ও বর্তমানে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সবকিছুর ওপর চিন্তা করে আমরা সময়মতো কয়লাটা আনতে পারি নাই। যার কারণে পায়রার এ অবস্থা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্ল্যান্ট চালু করে দেবো।

তিনি বলেন, আমাদের নতুন পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু হবে, পায়রা চালু হবে। রামপাল চলছে। এসএস পাওয়ার চালু হয়ে যাবে। আমরা ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনছি। আরও নিয়ে আসবো। কিন্তু বৈশ্বিক জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছু কিছু জায়গায় আমাদের অর্থের জোগান দিতে সমস্যা হয়ে গেছে। এটা বেশি দিনের জন্য না। আমরা মনে করি—১৫ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আপনারা সকলেই একটু ধৈর্য ধরুন। বিশ্বের দিকে ও নিজের দেশের দিকে তাকিয়ে যদি আমরা ধৈর্য ধরি তাহলে যে সমস্যাটা দেখতে পারছি সেটা পার হতে পারবো।

তিনি বলেন, বর্তমানে দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং আছে। আমরা এই তথ্য বারবার প্রচার করছি। ওয়েবসাইটে দিয়েছি। বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছি। আমরা কষ্টটা সকলের সাথে ভাগ করতে চেয়েছি। সকলকে জানিয়েছি— কোথায় কীভাবে হয়।

মধ্যরাতে বিদ্যুতের অনেক ব্যবহার হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এটা আগে ছিল না। অটোরিকশা সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ নিয়ে যায়। আমরা তো বন্ধ করিনি। সেগুলোও চালু রেখেছি। সাধারণ মানুষ যাতে সেটা ব্যবহার করতে পারে। ৪০ লাখের মতো অটোরিকশা আছে দেশে। আমরা তাদের ব্যবহার করার জন্য উৎসাহ করছি। সবাইকে বলছি একটু ধৈর্য ধরুন। এই মাসের মধ্যে সমাধান করতে পারবো।

বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলের বিদ্যুৎ ক্রাইসিসের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে ১৪ বছর আগে প্রায় ৬০ শতাংশ বাংলাদেশ অন্ধকারে ছিল। ১৬ ঘণ্টা, ১৮ ঘণ্টা ২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকতো না। সেখান থেকে আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি। সংসদ সদস্যরা স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে গেছে। আমরা সঞ্চালন লাইন করেছি। এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন পড়ে। ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমরা প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছি। এর সঙ্গে সঞ্চালন লাইন ও সরবরাহের খরচ আছে। প্রতিনিয়ত জ্বালানির খরচ আছে।

এর আগে ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, লোডশেডিং যেভাবে বাড়ছে তাতে জনরোষ সৃষ্টি হতে পারে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আমাদের ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার কিন্তু করে ফেলেছি ২৬ হাজার মেগাওয়াট। আর আজকে উৎপাদন হচ্ছে ৭ হাজার মেগাওয়াট।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, এখন কমবেশি এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। এই লোডশেডিং আরও বাড়বে। বিল না পরিশোধের কারণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছেন। বিদ্যুৎ বিল তো মানুষের বাকি নেই। গ্রাহকরা তো সবাই বিল দিচ্ছেন। তাহলে এই বিল কেন বাকি থাকছে? একটা হতে পারে ক্যাপাসিটি চার্জ। গণমাধ্যমে দেখেছি ৯০ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ এসেছে। ২০ হাজার কোটি টাকা নাকি এখনও বাকি। কেন এত ক্যাপাসিটি চার্জ হয়? কেন চুক্তিটা এভাবে করা হলো যে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতেই হবে। কেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাথে খাম্বা ও সঞ্চালন লাইন করা হলো না।

শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, বিএনপির আমলে বিদ্যুৎ ছিল না, খাম্বা ছিল। এখন বিদ্যুৎ আছে খাম্বা নেই। ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। টাকা শর্টেজ। মানুষ গরমে কষ্ট পাচ্ছে। মোগল আমলে মানুষ যে কষ্টে ছিল এখন তার থেকে বেশি কষ্টে আছে।

তিনি বলেন, ১৫৩টি কেন্দ্রের সবগুলোতে কম উৎপাদন হচ্ছে। সরকারের ধারাবাহিক সাফল্যের একটি জায়গা ছিল বিদ্যুৎ। সেটি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেলো। এর থেকে তো আমি মনে করি জনরোষ সৃষ্টি হবে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ বিভাগ হুমকির মধ্যে পড়েছে। কবে যে আবার লোডশেডিং কমবে! এখন যেভাবে বিদ্যুৎ সমস্যা দেখা দিচ্ছে, আগামী ১০ বছর পরে আমাদের গ্যাসও শেষ হয়ে যাবে।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকলে দেশের অগ্রগতি থেমে যাবে। কৃষি উৎপাদন কমে যাবে। সমস্ত জায়গায় স্থবিরতা তৈরি হবে। বিদ্যুৎমন্ত্রী গোটা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ দিয়েছেন—এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু নেই। হঠাৎ করে কী হলো যে বিদ্যুৎ চলে গেলো। আগেই যদি কয়লা বা ডিজেল আমদানি করা যেতো আজকের এই সমস্যা হতো না। আমাদের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই। ত্বরিত আমাদের কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করতে হবে।

রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে কিন্তু মন্ত্রীর কোনও কথা নেই। কেন? জনগণকে কনভিন্স করতে হবে। গণশুনানি করে বিষয়টি জানাতে হবে। লোডশেডিংয়ের বিষয়ে কেউ বলতে পারেন না। লোডশেডিংয়ের তথ্য জানাতে হবে। কোথায় অব্যবস্থাপনা রয়েছে সেটা দেখতে হবে। এখানে কিন্তু অনেক ঘষেটি বেগম থাকতে পারে। তারা যেন আপনাদের সুনাম নষ্ট করতে না পারে।

/ইএইচএস/এমএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
অবৈধ ব্যবহারকারীদের ধরতে বাড়ি বাড়ি যাবে তিতাস
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড
সর্বশেষ খবর
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
উপজেলা নির্বাচন আগের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে: ইসি হাবিব
উপজেলা নির্বাচন আগের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে: ইসি হাবিব
জেসি অনভিজ্ঞ বলেই আপত্তি ছিল মোহামেডান-প্রাইম ব্যাংকের
জেসি অনভিজ্ঞ বলেই আপত্তি ছিল মোহামেডান-প্রাইম ব্যাংকের
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই