X
সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩
১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

জ্বালানি তেল আমদানি বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরামর্শ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:১৮আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩:৩৭

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি খোলার জটিলতায় জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধে দেরি হচ্ছে। এতে বৃদ্ধি পাচ্ছে বকেয়ার পরিমাণ। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল আমদানি বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা মূল্য বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে। তারা বলেছে, পাইকারি মূল্য ইউনিটপ্রতি এক টাকা বাড়ানো হলে বছরে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি কমে আসবে।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য আমদানি ব্যয়কে প্রভাবিত করছে উল্লেখ করে বিপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে বিপিসি প্রান্তে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলার সরবরাহ সংকোচনের কারণে জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধে ১০-৫০ দিন পর্যন্ত দেরি হচ্ছে। ধাপে ধাপে মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। বকেয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল আমদানি বিঘ্নিত হতে পারে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে চায় না উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, বেসরকারি ওয়ান ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, এসসিবি, এইচএসবিসি ব্যাংকসমূহ ইতোপূর্বে এলসি খুললেও প্রায় দুই বছর ধরে এলসি খোলা থেকে বিরত রয়েছে। বর্তমানে বিপিসি শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক পিএলসি, জনতা ব্যাংক পিএলসি, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি এবং রূপালী ব্যাংক পিএলসি’র মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানি করছে।

এতে বলা হয়, বিপিসি সাধারণত প্রতি মাসে প্রায় ১৪-১৫টি এলসি’র মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৪ চার থেকে ৫ লাখ  মেট্রিক টন পরিশোধিত এবং ১ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে। বর্তমানে ডলার সরবরাহ সংকোচনের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহও অনেক ক্ষেত্রে বিপিসি’র চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করছে। কোনও কোনও ব্যাংক এলসি খুলতে ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত বিলম্ব করছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করলে আমদানি প্রক্রিয়া ব্যাহত তথা জ্বালানি সংকট দেখা দিতে পারে।

গত ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জ্বালানি তেল সরবরাহকারীদের পাওনা অর্থের পরিমাণ ২৯৮ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ডলার বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে নির্দিষ্ট সময়ে কার্গো এলেও মূল্য পরিশোধে বিলম্বের কারণে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দুটি জাহাজে ‘ফিন্যানসিয়াল হোল্ড’ আরোপ করায় প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল খালাস সম্ভব হচ্ছে না। পণ্য খালাসে বিলম্বের কারণে ৩২ হাজার ডলার ডেমারেজ দিনে হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলএনজি আমদানির মূল্য বাবদ ২৪১ দশমিক ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অপরিশোধিত রয়েছে।

সংকট নিরসনে বিপিসি তার প্রতিবেদনের সুপারিশে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রাখতে জরুরি ভিত্তিতে বকেয়া পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংক/অর্থ মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ চেয়েছে। এক্ষেত্রে এ সরকারি প্রতিষ্ঠানটি জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় যথাসময়ে এলসি খোলা ও মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি আগের মতো বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খোলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছে।

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের স্বল্পতা, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও কয়লার মূল্য বৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায়, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ক্রয়-বিক্রয়ের পার্থক্য বাবদ চলতি অর্থবছরে ৩৫ হাজার থেকে ৩৭ হাজার কোটি টাকা সম্ভাব্য ভর্তুকি বাবদ প্রয়োজন হবে। তবে গ্যাস উত্তোলন দিনে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়লে ঘাটতি ৬ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে।

বর্তমানে ডলার সরবরাহ সংকোচনের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পরিচালনার জন্য জ্বালানি আমদানির লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খোলায় বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফুয়েল সাপ্লাই চেইন যথাযথভাবে মেনটেইন না হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে কোনও কোনও সময় জ্বালানি স্বল্পতার কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সংকট নিরসনে পর্যায়ক্রমে পাইকারি ও খুচরা বিদ্যুতের বিক্রয় মূল্য বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে। বলেছে, পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয় মূল্য ১ টাকা বাড়ানো হলে ভর্তুকির পরিমাণ বছরে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা কমবে।

/ইএইচএস/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বাড়লো এলপিজির দাম
ভারত থেকে আসা মৈত্রী পাইপলাইনে তেল চুরির ‘দক্ষ পরিকল্পনা’!
গাজায় সীমিত পরিসরে জ্বালানি প্রবেশের অনুমতি দিলো ইসরায়েল
সর্বশেষ খবর
গাইবান্ধার ৫ আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল ১৬, স্থগিত ১৮
গাইবান্ধার ৫ আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল ১৬, স্থগিত ১৮
মুন্সীগঞ্জে তিন আসনে বর্তমান এমপিসহ ৮ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল
মুন্সীগঞ্জে তিন আসনে বর্তমান এমপিসহ ৮ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল
পিরোজপুরের ৩ আসনে বাদ পড়েছেন ১০ প্রার্থী
পিরোজপুরের ৩ আসনে বাদ পড়েছেন ১০ প্রার্থী
সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল
সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল
সর্বাধিক পঠিত
একবছরে এক শিক্ষকের ১০২টি গবেষণাপত্র, প্রতিটি তৈরিতে লেগেছে তিন দিন!
একবছরে এক শিক্ষকের ১০২টি গবেষণাপত্র, প্রতিটি তৈরিতে লেগেছে তিন দিন!
কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসা ২ লাশের পরিচয় মিলেছে
কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসা ২ লাশের পরিচয় মিলেছে
আজকের আবহাওয়া: গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউমে’ পরিণত
আজকের আবহাওয়া: গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউমে’ পরিণত
ক্রেডিট কার্ডের টাকা না দেওয়ায় ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্র বাতিল
ক্রেডিট কার্ডের টাকা না দেওয়ায় ডলি সায়ন্তনীর মনোনয়নপত্র বাতিল
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ব্যাপক মিথ্যাচার করা হচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ব্যাপক মিথ্যাচার করা হচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী