ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর বার্ষিক দুই ঈদ উৎসবের একটি। পবিত্র রমজান মাসের ৩০ দিন সংযম সাধনা শেষে ভালোবাসা, সাম্য-সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসে ওই খুশির ঈদ। এদিন সকালে ফজরের নামাজের পর ঈদের নামাজের প্রস্তুতি নিতে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। আর ঈদের জামাতের জন্য স্থানীয় ঈদগাহ ও মসজিদগুলোয় নেওয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা। কোথাও কোথাও একাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার (১১) সকাল ৭টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের প্রথম জামাত। আর সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয় দেশের প্রধান জামাত। সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে জামাতে নামাজ আদায় করতে আসেন বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা গোছল সেরে, নতুন পাঞ্জাবি ও সুগন্ধি গায়ে দিয়ে মসজিদে উপস্থিত হন। কেউ বৃদ্ধ বাবাকে, কেউ নিজের ছোট সন্তানকে, কেউ আবার বন্ধুদের নিয়ে ঈদের নামাজ পড়তে আসেন। নামাজ শেষে মনোযোগ দিয়ে খুদবা শোনেন। এরপর দলীয়ভাবে মোনাজাতের মাধ্যমে নামাজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন।
মসজিদ থেকে বেরিয়ে প্রত্যেক মুসল্লি নিজ পরিচিত-পরিজনের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। কুশল বিনিময় করেন। মসজিদের সামনে বসে থাকা গরিব অসহায় মানুষদের মাঝে ফিতরার টাকা বন্টন করেন।
মিরপুর ১১ এর স্থানীয় মসজিদে ছোট ছেলেকে নিয়ে মসজিদে আসা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ঈদের আনন্দ শুরু হয় ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে। সবার মাঝে পবিত্রতা ও উৎসব আমেজ থাকে। সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আসছি সেই উৎসবে শরিক হতে।
বন্ধুদের সঙ্গে নামাজ পড়তে আসা তামিম বলেন, ঈদ নিয়ে আমাদের কত প্ল্যান থাকে। প্রথম প্ল্যান এক সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করবো। তারপর কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আমরা একজন আরেকজনের বাসায় যাবো। সালাম নেবো আঙ্কেল-আন্টিদের থেকে।
ঈদের জামাত শেষে মৃত স্বজনদের স্মরণ
ঈদের দিন জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে ঈদের নামাজ শেষে মুসল্লিরা যান স্থানীয় কবরস্থানে। সেখানে স্বজনের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া করেন। কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। কেউ কেউ ছোট সন্তানকে কবরস্থানে সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন।
মিরপুর কালশী কবরস্থানে বাবার কবর জিয়ারতে আসা মাহমুদ বলেন, ঈদের আনন্দ শুরুই হয়েছে আব্বার হাত ধরে। আব্বা মারা যাওয়া আগ পর্যন্ত প্রত্যেক ঈদ একসঙ্গে করেছি। কিন্তু তিনি এখন আর নেই। আব্বা মারা যাওয়ার পর প্রত্যেক ঈদেই তার স্মরণে কবরস্থানে আসি। দোয়া করি।
দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করতে আসেন ফজলুল হক। তিনি বলেন, সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে আসার কারণ, আমি চাই আমার যেমন করে আমার মৃত বাবা-মায়ের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে, তারাও যেন অভ্যস্ত হয়, আমার মৃত্যুর পর এভাবেই কবরে এসে আমার সঙ্গে দেখা করে যায়।
ছবি: প্রতিবেদক।