আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করার পর সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং ১৬ জনকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ও ১৫ জন উপদেষ্টা শপথ নিয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। অপরজন দেশের বাইরে থাকায় এখনও শপথ নেননি।
রাষ্ট্রপতি গত ৮ আগস্ট পৃথক দুটি আদেশের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও ১৬ জন উপদেষ্টাকে নিয়োগ দেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এটি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয়। পরে ওইদিনই শপথের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্য ১৩ জন উপদেষ্টা শপথ নেওয়ার মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরের দিন শুক্রবার তাদের মধ্যে দফতর বণ্টন করা হয়। আজ রবিবার (১১ আগস্ট) বেশিরভাগ উপদেষ্টাই দায়িত্ব পাওয়া দফতরে অফিস করেছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হলেও তাদের পদমর্যাদা কী হবে সেটা উল্লেখ নেই। তাদের মর্যাদা চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পৃথক কোনও প্রজ্ঞাপন এখনও জারি হয়নি।
উল্লেখ্য, সরকার গঠনের সময় রাষ্ট্রপতি তার সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগদানের সময়ও পদমর্যাদা উল্লেখ করা থাকে না। তবে সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদের ক্ষমতা বলে রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দিয়েছেন সেটা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকে।
প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তিদের পদমর্যাদার বিষয়টি সরকারের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা সম্মানিসহ অন্যান্য যেসব সুযোগ-সুবিধা পাবেন তার জন্য পৃথক আইন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা তাদের গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারেন। সরকারে পতাকা বিধিতে এ বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান সংবিধানে না থাকায় এর সদস্যদের পদমর্যাদা নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়টি যেহেতু সংবিধানে নেই, সেহেতু এর প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা বিষয়ক কোনও দিকনির্দেশনাও থাকার কথা নয়। তবে রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সরকারের নির্বাহী আদেশে তা কার্যকর হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু প্রধানমন্ত্রী এবং উপদেষ্টারা যেহেতু মন্ত্রীদের মতো ফাংশন করছেন, সেহেতু সেভাবেই তাদের মর্যাদা নির্ধারিত হতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু থাকার সময় পদমর্যাদার বিষয়টিও নির্ধারণ করা ছিল। ওই ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পরে পদমর্যাদার বিষয়টিও বিদ্যমান নেই। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটা বাতিল হওয়ায় এই জটিলতা এসেছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা পালন করছেন এবং অন্য উপদেষ্টারা মন্ত্রীদের মতো দায়িত্ব পালন করছেন, কাজেই সেভাবেই তাদের পদমর্যাদাটা নির্ধারণ করা হবে।
তিনি বলেন, সরকারের রুলস অব বিজনেসে এ বিষয়টি সন্নিবেশ করা যেতে পারে। তবে না করলেও কোনও সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। কারণ কিছু বিষয় আছে ধরে নিতে হয়।
এ বিষয়ে জানতে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব ও একজন যুগ্ম সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ হলে বিষয়টি তাদের বিভাগ সংশ্লিষ্ট নয় বলে জানান।