X
রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫
৯ চৈত্র ১৪৩১

কোন পদ্ধতিতে জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি তৈরি হলো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:২০আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:২১

শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল। প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য জাতিসংঘের ওই অনুসন্ধানী দল এসেছিল বাংলাদেশে। প্রধানত ২৩০টিরও বেশি গোপন সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ও অনলাইনে ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী, ছাত্র ও অন্যান্য প্রতিবাদকারী নেতা, মানবাধিকার কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, চিকিৎসক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞ ও প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৩৫ জন নারী, এবং ১০ জন শিশুও অন্তর্ভুক্ত।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতরের (ওএইচসিএইচআর) এই তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। ১১৪ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে ওই সময়ের নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিগত সরকার ও শাসক দল আওয়ামী লীগকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে।

ওএইচসিএইচআরের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনটি বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জেনেভা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দল প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, সিলেট ও গাজীপুর-এই আট শহরে অনুসন্ধান চালায়। মূলত যে শহরগুলোতে বেশি মাত্রায় বিক্ষোভ হয়েছিল, সেসব স্থানে গিয়ে সরেজমিনে কাজ করে জাতিসংঘের দলটি।

তৎকালীন সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আরও ৩৬টি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এই ৩৬ জনের মধ্যে সরকারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারাও আছেন, যারা ওই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে অবগত ছিলেন।

প্রতিবাদ মোকাবিলায় সরাসরি জড়িত র‌্যাব, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার/ভিডিপি, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিচার বিভাগের উচ্চপদস্থ ৩২ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। বিজিবি প্রধান ছাড়া এই কর্মকর্তারা আন্দোলনের সময় তাদের পদে ছিলেন না এবং তারা সংশ্লিষ্ট বাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে সীমিত তথ্য প্রদান করেছেন। এছাড়া ওই তথ্যানুসন্ধানী দল কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েকজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করেছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনুরোধ সত্ত্বেও, সেনাবাহিনী বা ডিজিএফআই-এর নেতৃত্বের সঙ্গে তারা সাক্ষাৎ করার সুযোগ পায়নি। আটক সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য ওএইচসিএইআরের অনুরোধ মঞ্জুর করা হয়নি।

তারা সাক্ষাৎ করেছিল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথেও। জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করা হলেও তারা সাক্ষাতের সময় দিতে পারেনি। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সাক্ষাতের জন্য অনুরোধ করা হলেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে, ওএইচসিএইচআর জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের কয়েকজন সমর্থকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে।

আওয়ামী লীগের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও তথ্য সংগ্রহের জন্যও অনুরোধ জানায় ওএইচসিএইচআর। সাবেক সরকারের মন্ত্রিসভার চারজন মন্ত্রীর কাছ থেকে অনলাইন সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেন তারা। আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তারা। এছাড়া আওয়ামী লীগের অন্যান্য শীর্ষ এবং মধ্যম স্তরের নেতা এবং ছাত্রলীগের নেতাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে ওএইচসিএইচআর।

বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মহাপরিদর্শক এবং তিনটি আধা-সামরিক বাহিনীর মহাপরিচালক এসব সাক্ষাৎকার পরিচালনায় সহায়তা করেছে। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ওএইচসিএইচআর-এর কাছে বাংলাদেশ পুলিশ এবং র‍্যাব থেকে প্রাপ্ত একটি অতিরিক্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন শেয়ার করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনও লিখিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

ওএইচসিএইচআর প্রতিটি উৎসের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং তাদের সরবরাহকৃত তথ্যের বৈধতা, অভ্যন্তরীণ সামঞ্জস্য ও প্রাসঙ্গিকতা কঠোরভাবে মূল্যায়ন করেছে। কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্থান, তারিখ, অপরাধীর পরিচয় বা এমন অন্যান্য বিবরণ বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে তা ওএইচসিএইচআর-এর কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

এছাড়া এই প্রতিবেদনে এমন কোনও ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি যার আচরণ আরও অপরাধ তদন্তের জন্য প্রাসঙ্গিক হতে পারে। তবে, ভবিষ্যতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য ওএইচসিএইচআর সংরক্ষণ করেছে এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তা ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তুত রেখেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জুলাই ও আগস্টের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তের অনুরোধ জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ককে চিঠি লেখেন। এরপর টুর্ক জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রুরি ম্যানগোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল গঠন করেন। দলটি গত বছরের ২২ থেকে ২৯ আগস্ট ঢাকা সফর করে। এরপর তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের মূল দল তথা তথ্যানুসন্ধান দল এক মাসের বেশি সময় বাংলাদেশে অবস্থান করে গত জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ ১৪ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করে।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে শেয়ার করা হয়েছিল, যাতে কোনও তথ্যগত ত্রুটি বা অসঙ্গতি সংশোধনের জন্য তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়। প্রাসঙ্গিক মন্তব্যগুলো প্রতিবেদনে সংযোজন করা হয়েছে।

/এস/
সম্পর্কিত
আ.লীগকে পুনর্বাসনের কোনও সুযোগ নাই: আমিনুল হক
শেখ হাসিনার বিচার হতে হবে, নির্বাচন পেছানো যাবে না: ইকবাল হাসান
বাংলার মাটিতে আ.লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই: বিন ইয়ামিন মোল্লা
সর্বশেষ খবর
ঈদে এক চ্যানেলেই ২৭ নাটক ও ৭ সিনেমা
ঈদে এক চ্যানেলেই ২৭ নাটক ও ৭ সিনেমা
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সেই মালেকের ১৩ বছরের কারাদণ্ড
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সেই মালেকের ১৩ বছরের কারাদণ্ড
দিল্লিতে অবৈধ বসবাসের দায়ে একাধিক বাংলাদেশি গ্রেফতার
দিল্লিতে অবৈধ বসবাসের দায়ে একাধিক বাংলাদেশি গ্রেফতার
এবার আগুন লেগেছে সুন্দরবনের গুলিশাখালীতে
এবার আগুন লেগেছে সুন্দরবনের গুলিশাখালীতে
সর্বাধিক পঠিত
পিস হিসেবে কিনে আনা তরমুজ কেজিতে বিক্রি, দুই ফল ব্যবসায়ীকে জরিমানা
পিস হিসেবে কিনে আনা তরমুজ কেজিতে বিক্রি, দুই ফল ব্যবসায়ীকে জরিমানা
মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ৭১
মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ৭১
জাতীয় পার্টি ও আ.লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না
রংপুরে জিএম কাদেরজাতীয় পার্টি ও আ.লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না
রাজধানীতে সড়কে বসলো ‘রিকশা ট্র্যাপার’, উদ্দেশ্য গতি নিয়ন্ত্রণ
রাজধানীতে সড়কে বসলো ‘রিকশা ট্র্যাপার’, উদ্দেশ্য গতি নিয়ন্ত্রণ
জুলাই গণহত্যার বিচার দাবি ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ
জুলাই গণহত্যার বিচার দাবি ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ