জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) এখন থেকে কোনও মন্ত্রী বা সরকারের শীর্ষ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই পরিসংখ্যানগত তথ্য প্রকাশের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিবিএস এখন থেকে কারিগরি কমিটির ভেটিং ও নির্দেশনা অনুযায়ী তথ্য প্রকাশ করতে পারবে, সরকারের আলাদা অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সরকারের পক্ষ থেকে ‘তথ্য প্রকাশনীতি’ ও ‘পরিসংখ্যান প্রতিবেদন নীতি’ নামে দুটি পৃথক নীতি প্রণয়ন করা হয়। এর মাধ্যমে বিবিএসের মহাপরিচালককে জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তবে নতুন গঠিত কারিগরি কমিটির সঙ্গে পরামর্শ সাপেক্ষে এই তথ্য প্রকাশ করতে হবে।
এখন পর্যন্ত বিবিএসের তথ্য প্রকাশে পরিকল্পনামন্ত্রী ও রাষ্ট্রের প্রধানের অনুমোদন প্রয়োজন হতো। এতে তথ্য প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিত এবং অনেক সময় তা মাসের মাঝামাঝিতে গিয়েও প্রকাশিত হতো না। ফলে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতো।
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনীতিবিষয়ক শ্বেতপত্রে বলা হয়, ‘আগের সরকারের আমলে তথ্য গোপন ও বিকৃতির সংস্কৃতি উন্নয়ন বর্ণনার বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছিল।’
নতুন নীতির আওতায় ছয়টি কারিগরি কমিটি গঠন করা হচ্ছে—জাতীয় হিসাব (জিডিপি ও মূল্যস্ফীতি), কৃষি, শিল্প ও শ্রম, জনমিতি ও স্বাস্থ্য, কম্পিউটিং এবং জনশুমারি-বিষয়ক। এসব কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস), সিপিডি, পিপিআরসি, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
পরিসংখ্যান বিভাগের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৩ সালের পরিসংখ্যান আইন থাকলেও সরকারি তথ্য প্রকাশে কোনও নির্দিষ্ট নীতি ছিল না। এবার প্রথমবারের মতো তা নির্ধারণ করা হলো।’
নীতি অনুযায়ী, তিন ধরনের তথ্য শ্রেণিবিন্যাস করা হবে—একটি উন্মুক্তভাবে ওয়েবসাইটে প্রকাশযোগ্য, একটি নির্ধারিত ফি-র বিনিময়ে, এবং একটি ‘গোপনীয়’ হিসেবে সংরক্ষিত, যেগুলোর প্রকাশে জাতীয় নিরাপত্তা বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
নীতির অংশ হিসেবে বিবিএসের তথ্য ব্যবস্থাকে ‘রাষ্ট্রের পঞ্চম স্তম্ভ’ হিসেবে চিহ্নিত করে তা রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।