শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আমি জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) দায়িত্বরত এলাকায় একটা করে সুন্দর নিদর্শন রেখে যেতে বলেছি। যাতে করে অনেক বছর পরেও সবাই বলতে পারে আপনি ওই শহরের প্রশাসক ছিলেন। তিনি বলেন, সুন্দর নিদর্শনগুলোর মধ্যে— সেটা একটা সুন্দর দিঘী, স্টেডিয়াম বা স্কুল অথবা সুন্দর একটা পার্ক হতে পারে।
তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রথম দিন রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিষয়ক কার্য অধিবেশন শেষে তিনি একথা বলেন।
শিক্ষা প্রশাসনে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে মন্তব্য করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এগুলো একটু নজরদারি করতে বলেছি। যেমন অনেক শিক্ষক ঠিকমতো তাদের ভাতা পান না। স্কুল পরিদর্শকের মাধ্যমে হেনস্তার অভিযোগ ওঠে। দুপক্ষের দোষ থাকে এগুলো নজরদারি দরকার। বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা বোর্ডগুলো নিয়ে প্রচণ্ড সমস্যা রয়েছে। যারা ছিল তারা চলে গেছে, চর দখলের মত নতুন প্রভাবশালীরা এসে সেগুলো দখলের চেষ্টা করেছে। আমরা প্রথম দিকে বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে ডিসি বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু এতগুলো দায়িত্ব তাদের পক্ষে নেওয়া কঠিন।
‘আমরা আবারও পরামর্শ দিয়েছি বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদগুলো শুরু করে দিতে। কিন্তু তা করতে গিয়ে তারা রাজনৈতিক চাপ সহ্য করে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে স্থানীয় যারা ভালো, সৎ মানুষ, গণ্যমান্য ব্যক্তি, সরকারি চাকরিজীবী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক— এ ধরনের মানুষজনকে যেন পরিচালনা পর্ষদে নেয়। যাতে শিক্ষকরা তাদের চাকরি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে হেনস্থার শিকার না হন। তাতেও যদি কাজ না হয় আমরা মন্ত্রণালয় থেকে আরেকটি পরিপত্র জারি করেছিলাম, স্কুলের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে অন্তত বিএ পাস এবং পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে অন্তত মাস্টার্স ডিগ্রিধারী হতে হবে। এটাতে তাদের পক্ষে রাজনৈতিক চাপ অনেকটা সামলাতে সুবিধা হয়েছে।’
এবছরের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ শুরু করতে অনেক বিলম্বিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম বইগুলো দিতে ফেব্রুয়ারি মাঝ বা শেষ পর্যন্ত চলে যাবে। আমরা নির্দেশ দিয়েছি প্রান্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেন আগে বই চলে যায়।
সবার দাবি দাওয়া মেটানো এই সরকারের প্রধান কাজ না মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, সামনের নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু করা যায় সে বিষয়ে কথা বলেছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নামে কোথাও কিছু হবে না। আমরা কোনও ব্যক্তি প্রস্তর স্থাপন করতে চাই না, আমাদের একমাত্র কাজ হল একটা সুন্দর নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
শিক্ষাখাতে সবচেয়ে অবহেলিত হলো সরকারি খাতে এমপি ভুক্ত স্কুল শিক্ষকরা উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমাদের যতদূর করার, আমি চেষ্টা করবো। তাদের অনলাইন বদলির ব্যবস্থা করছি। তারা যে ভাতা পান তা অপ্রতুল। আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে ভাতা বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগামী বছরের জন্য এখন একটা বাজেট তৈরি হচ্ছে। শিক্ষকদের অবসরকালীন যে সুবিধা পায়, তা তাদের টাকা। এগুলো তাদের ন্যায্য দাবি। আমি উপদেষ্টা পরিষদে বলেছিলাম সরকারকে এই অর্থ অবহেলিত শিক্ষকদের অবসর ভাতা না দেওয়া অত্যন্ত অনৈতিক। কিন্তু তাদের ভাতা এক বছরের বাজেটের ওপর চাপিয়ে সমাধান করা যাবে না। আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করছি। যেমন বন্ডের মাধ্যমে একটা ফান্ড তৈরির চেষ্টা করছি। আগামী বছর থেকে সেটা শুরু হতে পারে।
পরিচালন ব্যয় বাড়িয়ে উন্নয়ন ব্যয় কমানোর কথা জানিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এ বছর বাজেটের ওপর যেন অধিক চাপ না পড়ে সেজন্য বন্ড দিচ্ছি। কারণ যখন তৈরি করা হয় সেটা উন্নয়ন বাজেটে চলে যায়। যখন শিক্ষকদের কিছু সুবিধা দেওয়া হয়, তার রেভিনিউ বাজেটে চলে যায়।
শিক্ষাখাতে অনেক সমস্যা আছে, এক বছরে সমাধান হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোথাও এ স্কুল আছে শিক্ষক নাই, কোথাও ছাত্র আছে কিন্তু দালান কোঠা ভেঙ্গে গেছে। এই অসংগতিগুলো, এতদিন অপরিকল্পিতভাবে ছিল। এটাতো হঠাৎ করে রাতারাতি ঠিক করা যাবে না। কাঠামো কিছু কিছু ঘাটতি থাকলেও যাতে শিক্ষার মান উন্নত হয়। ভালো সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন সেদিকে চেষ্টা করবো। এজন্য আগামী বছরের বাজেটে উন্নয়ন খাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে খুব বেশি বরাদ্দ না থাকলেও পুরো বাজেটে শিক্ষা স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে আমরা চেষ্টা করবো, অন্য বছরের তুলনায় আনুপাতিকভাবে একটু বেশি বরাদ্দ দিতে।