মোংলা বন্দর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন প্রকল্প চীনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবে সরকার। ইতোমধ্যে চীন থেকে ঋণ আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ফেব্রুয়ারিতে ৪ হাজার ৬৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন পায়। এর মধ্যে চীন থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মোংলা বন্দরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই ঋণের আবেদন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র বলছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীনের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের সময় এ সম্পর্কিত আলোচনায় দেশটির সরকার আগ্রহ প্রকাশ করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ‘মোংলা বন্দর নিয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা করছে চীন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে।’
উল্লেখ্য, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, এটি বাস্তবায়িত হলে বার্ষিক ২০ ফিট কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ৪ লাখে উন্নীত হবে এবং বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
মোংলা বন্দর নিয়ে আগ্রহ
মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন নিয়ে চীনের সঙ্গে অনেকদিন ধরে আলোচনা করে আসছে বাংলাদেশ। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কাজটি চীনকে দেওয়ার বিষয়ে প্রায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত থাকলেও ভারতের আপত্তির কারণে সেটি স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসলে চীন আবারও আলোচনা শুরু করতে তৎপর হয়ে ওঠে এবং অবশেষে কাজটি তারা পায়।
সাবেক একজন কূটনীতিকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেকোনও দেশের জন্য বন্দর একটি কৌশলগত সম্পদ। মোংলা বন্দরে চীনের সহায়তার বিষয়টিকে ভারত হয়তো স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচনা করছে।’
সহায়তাকারী দেশ চীন না হয়ে অন্য কেউ হলে হয়তো দিল্লির আপত্তি থাকতো না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আরও আলোচনা হওয়া দরকার।’
চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে জনগণের যে পরিমাণ আগ্রহ, সেটি মোংলা বন্দর নিয়ে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর হয়তো বড় কারণ হচ্ছে— বেশিরভাগ পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হ্যান্ডলিং করা হয়। তারপরও মোংলা বন্দরের উন্নয়ন চীনকে দিয়ে করানোর সিদ্ধান্তে ভারতের আপত্তির কারণে এর একটি স্পর্শকাতরতা তৈরি হয়েছে।’
মোংলা বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প
মোংলা বন্দরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করে দুটি কনটেইনার জেটি তৈরি করার পাশাপাশি একটি লোড কনটেইনার এবং একটি খালি কনটেইনার ইয়ার্ড তৈরি করা হবে। এছাড়া একটি বিপজ্জনক কার্গো হ্যান্ডলিং ইয়ার্ড, চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন, সাতটি আরটিজিসহ ৪৪টি বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পটি ২০২৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা।