X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

৬ জঙ্গির সবই জানে পুলিশ, অজানা শুধু ঠিকানা ও পরিচয়

জামাল উদ্দিন
২২ মে ২০১৬, ০২:১০আপডেট : ২৩ মে ২০১৬, ১৪:৫৮

৬ জঙ্গি আনসারুল্লাহ’র জঙ্গিরা কে কোন ঘটনায় কিভাবে জড়িত সবই জানে পুলিশ। শুধু জানে না তাদের ঠিকানা ও পরিচয়। বৃহস্পতিবার ৬ জঙ্গির বিরুদ্ধে পুরস্কার ঘোষণা করে ডিএমপি’র ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবরণে এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে।
পুরস্কার ঘোষিতদের নাম জানতে পারলেও বিস্তারিত ঠিকানা ও পরিচয় না পাওয়ার কারণেই এদের ধরিয়ে দিতে জনগণের সহায়তা চেয়ে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্লগার, লেখক ও প্রকাশক হত্যাকারীদের মধ্যে আনসারুল্লাহ’র ৬ জনকে ধরিয়ে দিতে প্রত্যেকের জন্য দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার ঘোষণা করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।একইসঙ্গে ডিএমপি’র ওয়েবসাইটে তাদের ছবিও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বিস্তারিত ঠিকানা দিতে পারেনি ডিএমপি।
৬ জঙ্গির একজন হচ্ছেন, শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে শরিফ ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১। তার সম্পর্কে ডিএমপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, তিনি আনসারুল্লাহর সদস্যদের সামরিক ও আইটি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন অপারেশনের সদস্য নির্বাচন ও সংগ্রহে প্রধান ভূমিকা পালন করেন।অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের মিশনে সরাসরি জড়িত ছিলেন। সিসিটিভির ফুটেজেও তার উপস্থিতি দেখা যায়। অভিজিৎ ছাড়াও গোড়ানে নীলাদ্রী নীলয় হত্যা, লালমাটিয়ায় আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যা চেষ্টা এবং সাভারে শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যার ঘটনায় তার সরাসরি উপস্থিতি ও সার্বিক নেতৃত্ব দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এছাড়া জাগৃতির প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, তেজগাঁওয়ে ওয়াশিকুর রহমান বাবু এবং গত দুই মাসে সূত্রাপুরে ব্লগার নাজিম উদ্দিন সামাদ এবং কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই শরিফুল ওরফে সাকিব বলেও জানতে পারে পুলিশ। কিন্তু এতো ঘটনার তদন্তের পরও তার বিস্তারিত ঠিকানা অদ্যাবধি পুলিশ পায়নি। শুধু জানতে পেরেছে তার বাড়ি বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে। তার নাম ও ছবি পেয়েছে গ্রেফতারকৃত আনসারুল্লাহ’র সদস্যদের কাছ থেকে। তাকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে ডিএমপি।

আরও পড়ুন: ‘টার্গেট কিলিং’কে বড় করে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র

সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২ আনসারুল্লাহ’র অন্যতম নেতা ও দেশে জঙ্গি হামলাগুলোর অন্যতম হোতা বলে দাবি পুলিশের। প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নিলাদ্রী নীলয় নীল, নাজিম উদ্দিন সামাদ, জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয় হত্যা ও মিরপুরের স্কুল শিক্ষক হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তিনি সরাসরি উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে পুলিশ সুনির্দিষ্টভাবে জানতে পেরেছে। তিনি কিভাবে কথা বলেন, তার উচ্চতা,গায়ের রং এবং তিনি চশমা পড়েন এসব তথ্যও এখন পুলিশের হাতে। কিন্তু তারও সুনির্দিষ্ট নাম-পরিচয় ও ঠিকানা জানেনা পুলিশ। শুধু জেনেছে তার বাড়ি দেশের উত্তরবঙ্গে। তাকে ধরিয়ে দিতেও পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে ডিএমপি।

আনসারুল্লাহ’র সামরিক শাখার আরও এক গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় সদস্য হচ্ছেন সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান। আজিজ সুপার মার্কেটে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডে তিনি সমন্বয়কারী ও খুনিদের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া সাভারে শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যাকাণ্ডে তার সরাসরি অংশ নেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে তার ঠিকানা জানতে পারেনি পুলিশ। শুধু জেনেছেন তার বাড়ি সিলেট অঞ্চলে।

আনসারুল্লাহ’র সামরিক শাখার অপর দুইস সদস্য হচ্ছেন আ. সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সালমান ওরফে সাদ ও সিহাব ওরফে সুমন ওরফে সাইফুল। প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টায় সরাসরি অংশ নেন তারা। তবে সাদ ওই অপারেশনের সমন্বয়কারী ও খুনিদের প্রশিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেন। জিহাদুল কতলে উদ্বুদ্ধ করার বয়ানও দিয়ে থাকেন সাদ। তাদের একজনের বাড়ি কুমিল্লা ও অপরজনের বাড়ি চট্টগ্রাম অঞ্চলে, এছাড়া তাদের  কোনও ঠিকানা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

আরও পড়ুন: সম্প্রতি সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডে আ.লীগ জড়িত: খালেদা জিয়া

অভিজিৎ রায়, নিলাদ্রী নীলয় ও শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া আনসারুল্লাহর স্লিপার সেলের আরেক সদস্য হচ্ছেন সাজ্জাদ ওরফে সজিব ওরফে সিয়াম ওরফে শামস। তার বাড়ি ঢাকার আশে-পাশের কোথাও হতে পারে এমন তথ্য আছে পুলিশের কাছে। কিন্তু কোথায় তার বাড়ি দীর্ঘদিনেও  তা জানতে পারেনি পুলিশ। সিফাত, রাজু, সিহাব ও সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে দুই লাখ টাকা করে ৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে ডিএমপি।

ডিএমপি’র ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবরণে আরও বলা হয়, বিগত কয়েক বছরে ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে আসছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাড্ডার সাতারকুল ও মোহাম্মদপুরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) দু’টি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে আনসারুল্লাহর দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর আশকোনা ও দক্ষিণখানে জঙ্গিদের আরও দু’টি আস্তানার সন্ধান পান তারা। ওইসব অভিযানেই আনসারুল্লাহ’র কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য-উপাত্ত পান গোয়েন্দারা।

বিগত কয়েক বছরেও এসব খুনির বিস্তারিত নাম,ঠিকানা না পাওয়া ও তাদের গ্রেফতার করতে না পারা গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা কিনা জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে নাম, ঠিকানা ও পরিচয় পেলেতো তাদের ধরে নিয়ে আসতাম। সেটা না পাওয়ার কারণেই জননিরাপত্তার স্বার্থে এসব দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের ধরিয়ে দিতে ছবি প্রকাশ করে জনগণের সহায়তা চাওয়া ছাড়াও পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

/জেইউ/এমপি/এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
গাজায় যুদ্ধবিরতি: মিসর ও কাতারের সঙ্গে হামাসের আলোচনা
গাজায় যুদ্ধবিরতি: মিসর ও কাতারের সঙ্গে হামাসের আলোচনা
উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হলেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও ভাগনে
উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হলেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও ভাগনে
ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ
ঈদের পরও চলছে রঙচটা বাস, আবার সময় দিলো বিআরটিএ
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা