X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচন দলীয় হওয়ায় এতো প্রাণহানি

এমরান হোসাইন শেখ
৩১ মে ২০১৬, ১৯:২২আপডেট : ০১ জুন ২০১৬, ১২:৫৯

নিবাচনি সহিংসতা দলীয় হওয়ায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যাপকহারে সহিংসতা-প্রাণহানি, বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড বা বড় রাজনৈতিক দলের প্রার্থী দিতে না পারার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, দলীয় প্রতীকে ভোট করতে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মত জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানকে অজনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে। নির্বাচন উৎসবের পরিবর্তে শোকে পরিণত হয়েছে।
অবশ্য দলগত নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে সহিংসতা ও প্রাণহানি ঘটছে বলে মনে করছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভোটের ‍মাঠে তাদের বিপরীতে শক্তিশালী কোনও রাজনৈতিক দল না থাকায় এমনটি হয়েছে।
বিশ্বের বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক দেশে জাতীয় নির্বাচনের মত স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়-এমন যুক্তিতে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন দলীয়ভাবে অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়। যার ‍সূত্র ধরে গত বছর নভেম্বরে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন সংশোধন করে দলীয়ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান যুক্ত করে। প্রাথমিক পর্যায়ে স্থানীয় সরকারের সকল পদে দলীয় মনোনয়নের সিদ্ধান্ত হলেও সরকার পরে প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদটিকে দলীয় মনোনয়নে করে বাকিগুলো পূর্বেকার মত নিদর্লীয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। আইন সংশোধনের পর গত বছর ডিসেম্বরে দেশের পৌরসভাগুলোতে নতুন আইন অনুযায়ী নির্বাচন হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ৬ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলমান রয়েছে।
কিন্তু দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত এই দুই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, কেন্দ্র দখল, জালভোট প্রদান ও সহিংসতা-প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনন্তঃ ৮ জন ও চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরে এই নির্বাচনে সরকার দল মনোনীত প্রার্থীদের বিনাভোটে জয়ী ও অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির বিভিন্ন পৌরসভা ও ইউপিতে প্রার্থী দিতে না পারার ঘটনাও ঘটেছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা দলভিত্তিক নির্বাচন অনুষ্ঠানকে এই সহিংসতা ও প্রাণহানির প্রধান অনুঘটক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, দলীয়ভাবে এই নির্বাচনটা ‍না করে পূর্বের বিধান অনুযায়ী করলে প্রাণহানি এড়ানো না গেলেও কমানো যেত। তড়িঘড়ি করে দলীয় নির্বাচনের বিধান চালুর আগে জনমত গঠনে আরও সময় নেওয়ার দরকার ছিলো বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে কোনও সুফল আসবে না। এটা করতে গেলে মনোনয়ন বাণিজ্য বাড়বে। জোর জবরদস্তি করে জয়লাভের প্রবণতা বাড়বে। আমরা যে আশংকা করেছিলাম এখন বাস্তবে সেটাই হলো।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকার বা নির্বাচন কমিশন কারোরই দলীয়ভিত্তিতে নির্বাচন করার কোনও অভিজ্ঞতা না থাকার কারণেই সহিংসতা ও প্রাণহানি হয়েছে।

তিনি বলেন, তাড়াহুড়ো করে আইন পরিবর্তন করে এই বিধানটা করা হয়েছে। একটু সময় নিয়ে এই আইনটা করা গেলে একটা জনমত পাওয়া যেত। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দল প্রার্থী ও ভোটারদের একটা মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকত। কিন্তু আমরা শেষ রাতে একটা হাফ হার্টেড সিদ্ধান্ত নিলাম।
নির্বাচনি সহিংসতা জগাখিচুড়ি মার্কা সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে কমিটির বৈঠকে এই আইনের বিরোধিতা করেছি। সংসদে দাঁড়িয়েও বিরোধিতা করেছি। বলেছি এটা ঠিক হচ্ছে না। আমাদের ওই দাবি যে যৌক্তিক ছিলো তার বহিঃপ্রকাশ আপনারা এখন দেখতে পাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনটা এখন এমন হয়েছে যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা কেবল নির্বাচন করতে পারবেন। অন্য কারও নির্বাচন করার কোনও অধিকার নেই। আমার মনে হয়েছে দলের নেৃতত্বের কোনও অংশ থেকে এই ভ্রান্ত ধারণা কর্মীদের মাঝেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দৃষ্টিভঙ্গির সংকটের কারণে তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত সংঘর্ষ হয়েছে বলে মনে করেন এই নেতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা আইন প্রণয়নের আগেই এটার বিরোধিতা করেছিলাম। বলেছিলাম দলীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক সংঘাত সংঘর্ষ পাড়া মহল্লায় ছড়িয়ে পড়বে। ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমাদের সেই ‍আশঙ্কারই প্রমাণ দিলো।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই সরকার ও কমিশনের অধীনে এমনিতেই সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা জনগণের নেই। সেই অবস্থায় রক্তাক্ত নির্বাচনে সরকার নিজে যেভাবে নিজেকে নির্বাচিত দেখাচ্ছে তার কাছে এর থেকে বেশি আশা করার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, দলীয় প্রার্থীদের জেতাতে ক্ষমতাসীনরা বিরোধী মতের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিয়েছে। প্রশাসনকে ব্যবহার করে হুমকি ধামকি দিয়ে প্রত্যাহারে বাধ্য করেছে। এভাবে নির্বাচন শব্দটাকে কলুষিত করা হয়েছে। গণতন্ত্রের একমাত্র বাহন নির্বাচনকে খোড়া করে দেওয়া হয়েছে যাতে চলতে না পারে। এটা করে গণতন্ত্রের বড় ক্ষতি করেছে সরকার। কমিশন তার সহযোগী হয়ে কাজ করছে।

দলীয় নির্বাচনের কারণে এমনটি হয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন। তার মতে, দলীয়ভাবে করতে গিয়ে এসব হয়েছে কী-না এখনই এ ধরনের সিদ্ধান্তে আসার মত পরিস্থিতি হয়নি। দলীয়ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। এজন্য আমাদের এসবের কারণ গভীরভাবে খুঁজে বের করতে হবে। এবারের নির্বাচনের ঘটনা রিভিউ করতে হবে। আরও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন কীভাবে করা যায় তা খুঁজে বের করতে হবে।

নির্বাচনি সহিংসতা তিনি বলেন, আমাদের মত ওয়েস্ট মিনিস্টার ডেমোক্রেসিতে আগে থেকেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভিত্তিতেই হয়ে আসছে। সেটা ‍অনুসরণ করেই আমাদের এখানে এই বিধান চালু হয়েছে।
বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে এটা হয়েছে এমন অভিমত লেনিনের। তিনি বলেন, এবারের যে সহিংসতা হয়েছে তা দলীয়ভাবে নির্বাচন না হলেও হতে পারত। বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন ও তাদের শক্তি তলানিতে ঠেকার কারণেই এটা হয়েছে। অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রায় সমভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অংশগ্রহণ ছিলো। এ ক্ষেত্রে দলীয়ভিত্তিতে না হওয়ার কারণে একদলের একাধিক প্রার্থী থাকত। যুদ্ধটা হয়ে গেছে অসম। বিপুল জনপ্রিয়তা ও সংগঠিত আওয়ামী লীগের বিরোধিতায় মাঠে শক্তিশালী কোনও দল নেই। আমার নিজের ধারণা বিএনপি শক্তিশালী অবস্থানে থাকলে সংঘাত কম হতো। কারণ, দুই পক্ষ শক্তিশালী হলে কিন্তু যুদ্ধ হয় না।
নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়ার জন্য সহিংসতা বা প্রাণহানি বেড়েছে এটা অস্বীকার করবো না। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। রাজনৈতিকভাবে নির্বাচনটা হওয়ার কারণে দলীয় সম্পৃক্তা বাড়ছে। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে দলগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। প্রত্যেক দলে মনোনীত প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। যার পরিণতিতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
আরও পড়ুন: মামলায় আসক্ত মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর!

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আসলামের সাতদিনের রিমান্ড

/এমএসএম/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা