X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১ হাজার ৫২৪ ওলামা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৮ জুন ২০১৬, ১১:২৯আপডেট : ১৮ জুন ২০১৬, ১১:৫৯

সংবাদ সম্মেলন

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন দেশের ১ লাখ ১ হাজার ৫২৪ জন মুফতি, উলামা ও আইম্মার। বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার উদ্যোগে গৃহীত ‘এক লক্ষ মুফতি, উলামা ও আইম্মার দস্তখতসম্বলিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী মানবকল্যাণে শান্তির ফতোয়া’ স্বাক্ষর করছেন তারা। ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্রান্ড ইমাম ও এক লক্ষ আলেম, মুফতি ও ইমামগণের ফতোয়া ও দস্তখত সংগ্রহ কমিটির আহ্বায়ক ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ শনিবার সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ফতোয়া জনসম্মুখে প্রকাশ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘অতীব পরিতাপের বিষয় আজ কতিপয় দুষ্কৃতিকারী নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশ্যে মহাগ্রন্থ কুরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামের নামে বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। মানুষের চোখে ইসলামকে একটা বর্বর নিষ্ঠুর ও সন্ত্রাসী ধর্মরূপে চিত্রিত করছে। এতে সরলমনা কেউ কেউ বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন। এই উগ্রজঙ্গিবাদীরা মূলত ইসলাম ও মুসলিমদেরই শত্রু নয়, তারা মানবতার শত্রু। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, আফ্রিকার দেশসমূহ কিভাবে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে তা আজ কারও অজানা নেই। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও আজ হুমকির সম্মুখীন।’

জঙ্গিবাদ ও আত্মঘাতী হামলা হারাম

বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার উদ্যোগে গৃহীত ‘এক লক্ষ মুফতি, উলামা ও আইম্মার দস্তখতসম্বলিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মানবকল্যাণে শান্তির ফতোয়ায় সর্বসম্মতভাবে এক লাখ আলেম ও মুফতি ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ও আত্মঘাতী হামলাকে ‘হারাম’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

জানা গেছে, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর নামে ভাগ করে ২৬টি এবং শুধু নারী আলেমদের স্বাক্ষরে ৪টি খণ্ড তৈরি হয়েছে। সব খণ্ডেই জঙ্গিবাদ নিয়ে মূল ফতোয়ার সঙ্গে দারুল উলুম দেওবন্দ, মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া ইসলামিয়া, শায়খ জাকারিয়া রিসার্চ সেন্টার ও জামিয়াতুল আসআদ মাদ্রাসার ফতোয়াও সংযুক্ত করা হয়েছে। সংযুক্ত প্রত্যেকটি ফতোয়াতেই সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদকে কোরআন ও হাদিসের আলোকে হারাম বলা হয়েছে।

  শীর্ষ আলেমদের স্বাক্ষর

ফতোয়ার ১০টি প্রশ্ন

বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার উদ্যোগে গৃহীত ‘এক লক্ষ মুফতি, উলামা ও আইম্মার দস্তখতসম্বলিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মানবকল্যাণে শান্তির ফতোয়া’য় ১০টি প্রশ্ন রাখা হয়। প্রশ্নগুলো হলো- ১. মহান শান্তির ধর্ম ইসলাম কি সন্ত্রাস ও আতঙ্কবাদী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে? ২. নবী ও রাসূল বিশেষ করে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি এই ধরনের হিংস্র ও বর্বর পথ অবলম্বন করে ইসলাম কায়েম করেছেন? ৩. ইসলামে জিহাদ ও সন্ত্রাস কি একই জিনিস? ৪. সন্ত্রাস সৃষ্টির পথ কি বেহেশত লাভের পথ না জাহান্নামের পথ? ৫. আত্মঘাতী সন্ত্রাসীর মৃত্যু কি শহিদী মৃত্যু বলে গণ্য হবে? ৬. ইসলামের দৃষ্টিতে গণহত্যা কি বৈধ? ৭. শিশু, নারী, বৃদ্ধ নির্বিশেষে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ইসলাম কি সমর্থন করে? ৮. ইবাদতরত মানুষকে হত্যা করা কি ধরনের অপরাধ ৯. অমুসলিমদের উপসানালয় যথা গির্জা, মন্দির, প্যাগোডা ইত্যাদিতে হামলা করা কি বৈধ? ১০. সন্ত্রাসী ও আতঙ্কবাদীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা ইসলামের দৃষ্টিতে সকলের কর্তব্য কিনা?

এসব প্রশ্নের জবাবে মুফতিরা তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। একমত পোষণ করে ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন। প্রশ্নগুলোর উত্তরেই ইসলামের ব্যাখ্যাসম্বলিত মূল ফতোয়াটি বর্ণিত হয়েছে।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে,‘জিহাদ ও সন্ত্রাস একই জিনিস নয়। জিহাদ হলো ইসলামের অন্যতম একটা নির্দেশ, পক্ষান্তরে সন্ত্রাস হলো হারাম ও অবৈধ।’ 

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে,‘আত্মহত্যা ও আত্মঘাতী হামলা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম।’ 

৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে,‘ইসলামে নিরাপরাধ মানুষদের গণহারে হত্যা বৈধ নয়। এমনকি সন্দেহের বশবর্তী হয়েও কাউকে হত্যা করা নিষেধ।’

৯ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে বলা আছে,‘মুসলিম সমাজে বসবাসকারী অমুসলিমকে যদি কেউ হত্যা করে সে বেহেশতের গন্ধও পাবে না। অমুসলিমদের গির্জা, প্যাগোডা, মন্দির ইত্যাদি উপাসনালয়ে হামলা করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম ও অবৈধ। এটি কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ 

ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এভাবেই ১০টি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে কোরআন শরিফের আয়াত ও হাদিস দিয়ে।

ফতোয়ার প্রয়োজনীয়তা  

ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, বিষয়টি স্পষ্ট যে এদের হৃদয় বৈকল্য বিদূরিত করা না গেলে কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এদের দমন করা সম্ভব নয়। কারণ এই সন্ত্রাসীরা তো ধর্মের নামে আত্মদানে প্রস্তুত। তাদের চৈতন্যের বিভ্রম দূর করা দরকার সবার আগে। ইসলামের সঠিক ও বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা তুলে ধরে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষে তা করা সম্ভব। মুসলিম সমাজে ফতোয়ার অর্থাৎ কুরআন হাদীসের আলোকে মুফতি ও ধর্মবেত্তাদের সুচিন্তিত পরামর্শ ও মতামতের গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। ধর্মীয় ও সামাজিক সমস্যাদিতে আজও বিপুলসংখ্যক মানুষ আলিম ও মুফতিগণের দারস্থ হন এবং তাদের ফতোয়া অনুসরণ করেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলাম ও মুসলিমদের কঠিন অবস্থান তুলে ধরার এবং কুরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যার অপনোদন করে সঠিক বিষয়টি উপস্থাপনের মানস থেকে এক লক্ষ দেশ বরেণ্য আলিম, মুফতি ও ইমামগণের দস্তখতসহ ফতোয়া সংগ্রহ ও তা প্রকাশের চিন্তা আসে।

  শেষ মহূর্তের প্রস্তুতি, ব্যস্ত জমিয়তুল উলামার কর্মীরা

ফতোয়া অংশ নিয়েছেন যারা

ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ জানান, ফতোয়া সংগ্রহ কমিটি এই বিষয়ে প্রদত্ত দারুল উলূম দেওবন্দ ভারত, মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, ইসালামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা- ঢাকা, চরমোনাই জামিআ রশিদিয়া ইসলামিয়া, শায়খ যাকারিয়া রিসার্চ সেন্টার - ঢাকা,বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়াসহ বিশেষ কতিপয় ইসলামী প্রতিষ্ঠানের ফতোয়াও সংগ্রহ করে সেগুলো পত্রস্থ করা হয়েছে।

জানা গেছে, এক লক্ষ মুফতি, ওলামা, আইম্মার ফতোয়ার সমর্থনে ঢাকা বিভাগে ২৮ হাজার ৫৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ হাজার ৬৮১ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ হাজার ২৫০ জন, রংপুর বিভাগে ৯ হাজার ৭৭০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮ হাজার ৮৯২ জন, রাজশাহী বিভাগে ২ হাজার ২শ’ জন, বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৪৫০ জন এবং সিলেট বিভাগে ১৬ হাজার ২২৫ জন মুফতি, ওলামা, আইম্মার দস্তখত করেছেন।

 

ফতোয়া কি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ঠেকাবে

ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্রান্ড ইমাম ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, প্রশ্ন হতে পারে ফতোয়া কি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ঠেকানো যাবে? আমরা দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, লক্ষ অস্ত্রের চেয়েও ফতোয়ার শক্তি অনেক ধারালো। মনো চেতনা মানবকর্মের মূল উৎস। সঠিক ফতোয়া সেই মনো চেতনাকে শুদ্ধ করে, আলোড়িত করে, মানবতাবাদী বানায়। মুসলিম সমাজে ফতোয়ার ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব অনস্বীকার্য। ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস করছে তারা বেহেশত লাভের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তা করছে। এটা যে বেহেশতের নয় জাহান্নামের পথ তা যখন বুঝতে পারবে নিশ্চয় তারা এ পথে পা বাড়াবে না। সুতরাং মানবকল্যাণ ও শান্তির ফতোয়ার এই বারতা সন্ত্রাস পুরোপুরি ঠেকাতে না পারলেও এতে যে তা বহুলাংশে হ্রাস পাবে তাতে সন্দেহ নেই। সন্ত্রাসের মদদদাতারা এতে হতোদ্যম হবে দ্বিধাহীনভাবে তা বলা যায়। কিন্তু যারা জাগতিক স্বার্থ সামনে রেখে অর্থ, নারী, ক্ষমতার জন্য বর্বরতাকে অবলম্বন বানিয়েছে, কুরআন পাকের ভাষায় ‘অন্তরে যাদের মরচে পড়েছে তাদের কথা স্বতন্ত্র।’ 

 

ফতোয়ার উদ্যোগ যেভাবে

সংবাদ সম্মেলনে ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিত সামনে নিয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে পুলিশ হেড কোয়ার্টারে দেশখ্যাত ধর্মীয় নেতাদের এক সভা হয়। এতে বিভিন্ন জেলার ৪০ জন আলিম ও মুফতি উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রথম আমি এ বিষয়ে একটা প্রস্তাব তুলে ধরি। সবাই এর গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং এতে একমত পোষণ করেন। এতে আমি খুবই উৎসাহিত হই। গত ২ জানুয়ারি আলিম ও মুফতিগণের প্রতিনিধিত্বশীল অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার উদ্যোগে ইকরা বাংলাদেশ ময়দানে আলিম ও মুফতিগণের একটা সম্মেলন  আহ্বান করি। উক্ত সম্মেলনে ৩ শতাধিক প্রখ্যাত আলিম মুফতি ও ইমাম অংশগ্রহণ করেন। এতে ইস্তিফতা ও ফতোয়ার একটা খসড়া পেশ করা হয়। দিনব্যাপী বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যালোচনার পর কিছু সংশোধনীসহ খসড়াটি সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত করা হয় । আমাকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের ‘এক লক্ষ আলিম, মুফতি ও ইমামগণের ফতোয়া ও দস্তখত সংগ্রহ কমিটি’ নামে একটা পরিষদ গঠন করা হয়। ৩ জানুয়ারি দস্তখত সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। আর গত ৩১ মে এক লক্ষ দস্তখত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হয়।

  শীর্ষ আলেমদের স্বাক্ষর

কমিটিতে যারা আছেন

শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের নেতৃত্বাধীন ‘এক লক্ষ আলিম, মুফতি, ইমামগণের ফতোয়া ও দস্তখত সংগ্রহ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-সদস্য সচিব আবদুর রহিম কাসেমী,যুগ্ম সদস্য সচিব সদরুদ্দীন মাকুনুন। এছাড়া সদস্য রয়েছেন- আল্লামা আলীম উদ্দীন দুর্লভপুরী, হোসাইন আহমদ, দেলোয়ার হোসাইন সাঈফী, ইমদাদুল্লাহ কাসেমী, আইয়ুব আনসারী, ইবরাহিম শিলাস্থানী, আবদুল কাইয়ুম খান, যাকারিয়া নোমান ফয়জী।

 

আছেন নারী আলেমা ও মুফতি

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত লাখো আলেমের ফতোয়ায় অংশ নিয়েছেন নারী আলেমরাও। দেশের ৯ হাজার ৩২০ জন নারী আলেমা স্বাক্ষর করেছেন জঙ্গিবাদ বিরোধী ফতোয়া।

এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, আমাদের দেশে মহিলাগণের মাঝেও বিপুলসংখ্যক আলিম ও মুফতির আবির্ভাব ঘটেছে। এই ফতোয়ায় মহিলা আলিম ও মুফতিগণেরও দস্তখত নেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে বেশ সাড়াও পাওয়া গেছে। বর্তমান বিশ্বে এটা একটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নয়া সংযোজন।

 দেশের নারী আলেমরাও জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়ায় অংশ নিতে আগ্রহী ছিলেন। বিশেষ করে সিলেট বিভাগের মহিলা মাদ্রাসাগুলোয় এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়। মহিলা মাদ্রাসার মধ্যে রামপুরা জাতীয় মহিলা মাদরাসা, দুর্লভপুর দারুল হাদীস মহিলা মাদরাসা সিলেট, বারুতখানা দারুল হাদীছ মহিলা মাদরাসা উল্লেখযোগ্য। স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে রামপুরা জাতীয় মহিলা মাদ্রাসার আলেমা তানজিলা আফরিন, উম্মে হাফছা, আমেনা, কুলসুম রিমা, খাদিজাতুল কুবরা, তানজিম তাসফিয়া দিনা, আনিকা আহাদ, ফাতেমা খাতুনসহ আরও অনেকের নাম রয়েছে। এ মাদ্রাসাটির প্রিন্সিপাল চরমোনাই পীরের ভাই মাওলানা মুসতাক আহমদ। নরসিংদী জেলার কয়েকটি মহিলা মাদ্রাসার নারী আলেমদের মধ্যে রয়েছেন, আলেমা মোসা তৈয়্যবা, উম্মে সালমা, আমিনা, সুরাইয়া, মাকসূদা, তাসফিয়া, মুশফিকাসহ আরও অনেকে।

 

যেভাবে সংগ্রহ করা হয় ফতোয়া

ফতোয়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন,‘এক লক্ষ আলিম, মুফতি ও ইমামগণের ফতোয়া ও দস্তখত সংগ্রহ কমিটি’র অধীনে প্রতিটি জেলায় একটা করে জেলা সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। তৃণমূল পর্যন্ত কমিটি গঠন করে ফতোয়া ও দস্তখত সংগ্রহের কাজ পরিচালনা করতে ওই জেলা কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আলিম, মুফতি ও ইমামগণের দস্তখত সংগ্রহের জন্য একটা ফরম প্রস্তুত করা হয়, এতে নাম, মোবাইল নম্বর ও দস্তখত এই তিনটি ঘর রাখা হয়। ওই  দস্তখতসমূহ জেলাওয়ারী বিন্যস্ত করা হয় এবং গণনার সুবিধার জন্য প্রতি শিটে পঁচিশটি করে দস্তখত নেওয়া হয়।

 

ফতোয়ার বৈশিষ্ট্য

জঙ্গিবাদ বিরোধী ফতোয়ার দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। তিনি বলেন,জঙ্গিরা যে চেতনা থেকে বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে সেগুলো অপনোদনের চেষ্টা করা হয়েছে। ব্যাখ্যাসহ সবিস্তার দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। মহিলা আলিম ও মুফতিগণেরও সমর্থন নেওয়া হয়েছে। এটি আজ পর্যন্ত কোনও ফতোয়ায় করা হয়েছে কি না জানা নেই।

  ফতোয়ায় যে ১০টি প্রশ্ন যুক্ত করা হয়

ফতোয়ার আকার, যাদের কাছে কপি যাবে

ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ৩০ খণ্ডে ফতোয়া ও দস্তখতসমূহ গ্রন্থবদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা হলো,এ ফতোয়ার কপি জাতিসংঘ, ওআইসি, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যেই এ ফতোয়ার ইংরেজি ও আরবি ভার্সনও প্রস্তুত করা হয়েছে। মুফতি, আলিম ও ইমামগণসহ নাগরিক সমাজ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বুদ্ধিজীবী, সাধারণ মানুষ নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরে আমরা বিপুল সমর্থন ও আগ্রহ দেখেছি।

 

ফতোয়া যাবে গিনেজ বুকে

ফতোয়া গিনেজ বুক’র নজরে আনার আগ্রহ প্রকাশ করে কমিটির আহ্বায়ক ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, এ দেশের আলেম ও মুফতি সমাজকে ধন্যবাদ ও শুকরিয়া। এ ধরনের বিরাট কাজ আজ পর্যন্ত পৃথিবীর আর কোথাও কখনও হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। গিনেজ বুক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন।

 

যে বাঁধা ছিল স্বাক্ষর সংগ্রহে

ফতোয়ায় স্বাক্ষর সংগ্রহে বাঁধা ছিল বলেও জানান ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। তিনি বলেন, কিছু কিছু সমস্যার সম্মুখীন যে হতে হয়নি তা নয়। তিনটি শ্রেণির কাছ থেকে আমাদের বাধাগ্রস্ত হতে হয়েছে। জামাত, শিবির ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী আমরা জেহাদের বিরুদ্ধে কাজ করছি এই অপবাদ তুলে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছে। আরেক দল যারা বিষয়টি সমর্থন করেছে কিন্তু জঙ্গিবাদের হামলার শিকার হওয়ার আতঙ্কে দস্তখত করতে চাননি। আর এই আতঙ্ক তারা প্রচার করেছেন। আরেক শ্রেণি হলো হিংসুক। আল্লাহপাক মেহেরবানী করে সব বাঁধা কাটিয়ে কাজটি অগ্রসর করে দিয়েছেন।

 

ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের অনুরোধ

ফতোয়ার মূল অংশটি পুস্তক আকারে প্রকাশ করে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে আগ্রহী ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। এজন্য দেশের বিত্তবান লোকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন,ফতোয়ার মূল অংশটি পুস্তক আকারে ছেপে সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া হয় তবে দেশ সমাজের অনেক বেশি লাভ হবে। বহুত বড় পূণ্যের কাজ হবে। শিক্ষক, সমাজকর্মী, এনজিওকর্মীসহ সর্বস্তরের সচেতন দেশবাসীকে বিনীত অনুরোধ করবো সর্বত্র বিষয়টিকে পৌঁছে দেওয়ার। সকলে মিলে যদি আমরা উদ্যোগী হই তবে বর্তমান অবস্থা অতিক্রম করে স্বপ্নের দেশগড়া কঠিন কিছু হবে না।

 

/সিএ/এসএনএইচ/এমএসএম /আপ: এএইচ/

আরও পড়ুন-

জঙ্গিবাদবিরোধী ফতোয়ায় বাধা ছিল জামায়াত-শিবির

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বরিশালে গরমে শ্রেণিকক্ষে ৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ
বরিশালে গরমে শ্রেণিকক্ষে ৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন নস্যাৎ সম্ভব না: দুদু
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন নস্যাৎ সম্ভব না: দুদু
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ
রেশনে পণ্য চান শ্রমিকরা
রেশনে পণ্য চান শ্রমিকরা
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ