X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

কমান্ডো অভিযানে মাত্র ১০ ঘণ্টার মধ্যে গুলশানে জিম্মি সংকটের অবসান: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০২ জুলাই ২০১৬, ১২:১০আপডেট : ০২ জুলাই ২০১৬, ১৪:৩৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা মাত্র ১০ ঘণ্টার মধ্যে কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে জিম্মি সমস্যার সমাধান করেছি। সন্ত্রাসীদের খতম করেছি। ওইখানে যারা জঙ্গি সন্ত্রাসী ছিল তারা সবাই নিহত হয়েছে। আমরা ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছি। তবে কয়েকজনকে বাঁচাতে পারিনি।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও জয়দেবপুর ময়মনসিংহ চারলেন মহাসড়ক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় যারা গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে কমান্ডো অভিযানের অংশ নিয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, শনিবার ভোর ৪টায় গণভবনে কমান্ডো অভিযানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গুলশানের রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী দেশের ‍সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আত্মসামাজিক উন্নতি হচ্ছে। তখন এ ধরনের ঘটনা প্রত্যেকটা কাজে হোচট খেয়ে যায়। জানি না ঠিক সেসময় কেন আমাদের ওপর এক একটা আঘাত চলে আসে।

ঘটনার বর্ণনা ও ব্যবস্থা গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, গতকাল রাতে ঠিক এশার নামাজের পর পর কিছু সন্ত্রাসী গুলশানের একটি রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিজানে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা অত্যন্ত তৎপর ছিল। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের টহল পুলিশ সেখানে চলে যায়। থানা পুলিশও সেখানে চলে আসে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতির কারণে হামলাকারীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়নি। তারা সেখানেই আটকা থাকে। ওই সময় ‍আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখনই অ্যাকশন নিতে যায় সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় দুজন পুলিশ অফিসার মারা যায় এবং প্রায় ৩০ জনের মতো আহত হয়। তবে ঘটনায় আমরা থেমে থাকিনি। আমরা আমাদের সেনাবাহিনীতে ডাকি। সেনাবাহিনীর যে প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন সিলেট থেকে তাদের আনা হয়। সাভার থেকে কমান্ডো নিয়ে আসা হয়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে কমান্ডো ও সেনাবাহিনী আসে। এছাড়া আমাদের পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিও সেখানে প্রস্তুত থাকে যে- কিভাবে এই জিম্মিদের উদ্ধার করা বা বাঁচানো যায়।আমরা এই জঙ্গিদের দমনে পরিকল্পনা নিই। সবাই মিলে গণভবনে বসে রাত ৪টার মধ্যে সব পরিকল্পনা করি। কিভাবে অপারেশন চালানো হবে এবং সেখানে গিয়ে তারা কিভাবে অপারেশন শুরু করবেন। তবে সুখের বিষয় হলো আমাদের সবকিছুর জন্য ১০ ঘণ্টা সময়ও লাগেনি। তার আগেই জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের ওপর আক্রমণ চালাতে সক্ষম হই। যারা জিম্মি ছিল তাদের ১৩ জনকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছি। বাকি কয়েকজনকে হয়তো বাঁচাতে পারিনি। কয়েকজন আহত অবস্থায় সিএমএইচএস-এ চিকিৎসাধীন আছে। আর সন্ত্রাসীদের ৬ জনকেই ওখানে হত্যা করা হয় এবং একজন ধরা পড়ে। কাজেই সন্ত্রাসী ওখানে যারা ছিল প্রায় সবাই সেখানে মারা যায়। আল্লাহর রহমতে আমরা এদেরকে দমন করতে পেরেছি। খতম করতে পেরেছি।

ইন্টারনেট, ক্যাবল টিভি লাইন ও টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার ফলে অপারেশন সফল হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী এ সময় উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে অপারেশনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। বলেন, একটা সফল অপারেশন করার জন্য আমি আমাদের প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নকে আন্তরিত অভিনন্দন জানাই। সেইসঙ্গে আমাদের সেনা, নেভি, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, বিমানবাহিনী সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সবাই একত্রিত হয়ে সারা রাত অপারেশন চালানোর ফলেই এত অল্প সময়ের মধ্যে এই সন্ত্রাসীদেরকে খতম করতে সক্ষম হয়েছি।

সন্ত্রাসী কর্তৃক মানুষকে জিম্মি করার ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশ এই প্রথম। এর আগে তারা টুকটাক করে একটা-দুটো মানুষ হত্যা করে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ এ ধরনের ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। এটা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ করেছে। কিছু লোক আমরা বাঁচাতে পেরেছি। সন্ত্রাসীদের আমরা শেষ করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর যেন বাংলাদেশে না ঘটে আমরা সেটাই চাই।

ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, রমজান মাসে একজন মুসলমান নামাজ পড়বে। এশার আযান হয়েছে সে যাবে নামাজ পড়তে। কিন্তু তারা আযান উপেক্ষা করে গেলো মানুষ খুন করতে। তাহলে কেমন মুসলমান তারা কেমন ধর্ম তারা রক্ষা করলো এটাই বড় প্রশ্ন যে, তারা নামাজ রেখে মানুষ খুন করতে চলে গেলো। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হয়ে ঢুকলো মানুষ হত্যা করলো আর নিজেরাও বাঁচতে পারল না। তাদেরকে মরতে হলো। তাদের পরিবারই বা কী পেলো। কাজেই কেন যে এ ধরনের সন্ত্রাসের পথে মানুষ যায় এটা আমার বোধগম্য নয়। যেন একটা জিঘাংসা ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। একটা মানুষ আরেকটা মানুষের ওপর কিভাবে আক্রমণ করে। তাও এই পবিত্র রমজান মাসে। আসলে এরা কোনও ধর্মেই বিশ্বাস করে না। এদের কোনও ধর্ম নাই। আমি মনে করি সন্ত্রাসটাই এদের ধর্ম।

জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনরায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের একটা সিদ্ধান্ত রয়েছে। বাংলাদেশে আমরা এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ চাই না। এদেশে আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী থাকতে দেবো না। এটা পরিষ্কার কথা। এ বিষয়ে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করে আরও বলেন, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবসময় বাংলাদেশের মানুষ স্বোচ্চার। সবাইকে আহ্বান করবো আরো সচেতন হতে। মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষককে হত্যার চেষ্টার সময় জনগণ যেভাবে এগিয়ে এসেছিল। ঠিক সেইভাবে সকলকে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সকলে সচেতন হলে, রুখে দাঁড়ালে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসীদের স্থান হবে না। এ ধরনের সন্ত্রাসের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুললে এটা থামবে।

/ইএইচএস/ এফএস/এএইচ/

আরও পড়ুন- গুলশানে হামলা:

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, নিহত ৫, নারী-শিশুসহ উদ্ধার ১২

যেভাবে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রবিউল ও সালাহউদ্দিন

গুলশানে ২৪ জনকে হত্যার দাবি আইএসের

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু