X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১
গুলশান হামলা

প্রতিবেশীদের বর্ণনায় ভয়াল ২৪ ঘণ্টা

উদিসা ইসলাম
০২ জুলাই ২০১৬, ২৩:৫৬আপডেট : ০৩ জুলাই ২০১৬, ০৫:২৮

গুলশান হত্যাকাণ্ডের পর  ভয়ার্ত নাগরিকরা তখন রাত সাড়ে আটটা হবে। আমি তারাবিতে ছিলাম। হঠাৎ শব্দ। শুরুতে বুঝিনি গোলাগোলি হচ্ছে বা তেমন কিছু। কথাগুলো বলছিলেন ৭৮ নম্বর রোডের এক নম্বর বাসার দারোয়ান। এ বাসার ঠিক উল্টোদিকে একটি নতুন অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি নামাজ পড়ছি আর ভাবছি ওই অ্যাপার্টমেন্টের সাটারিং খোলা হচ্ছে। পরে হইচই শুনে দৌড়ে বের হই। বাসার সবাইকে বের না হতে ফোন করে জানাই। এরপরইতো পুলিশ এলো আর সে কী বোমার শব্দ!

শনিবার সারাদিনই সাংবাদিকরা ৭৮ নম্বর সড়ক থেকে ৭৯ সড়কের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছেন। এই সড়কে বড় বড় বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। সারাদিন এসব এলাকার বাসিন্দারা বাসা থেকে বের হননি। বাসার নিচে পুলিশ সদস্যদের দেখা গেছে। ৭৯ নম্বর সড়কের একটি অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি হাঁটতে গিয়েছিলাম। সেসময় হঠাৎই হইচই দেখে একটু এগিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। পরে মনে হলো ঘটনা ছোটখাটো না। ততক্ষণে পুলিশের গাড়িও এসে গেছে। পরে বাসায় এসে বোমার আওয়াজে আমার পাশের বাসার জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। সারা রাত আমরা দোয়া কালাম করেছি আর খোদা যেন বিপদমুক্ত করেন সেই দোয়া করেছি। যখন জিম্মিকারীদের বাঁচাতে অভিযান শুরু করতে দেরি হচ্ছিল তখন আমি সামনের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ফোন পাই। তার পরামর্শে আমি বাসার সব লাইট বন্ধ করে ফ্লোরে শুয়েছিলাম। একাত্তরের পর এই প্রথম এমন নরক যন্ত্রণা ভোগ করার অভিজ্ঞতা হলো।

৭৮ নম্বর সড়কটি কাঁটাতারে ঘেরা। এর পাশের সড়কেরই একটি ভবনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটে গেছে ২৮টি হত্যাকাণ্ড। পাশের বাসার এই গা শিউরে ওঠা অভিজ্ঞতা কতদিন তাড়া করবে সে নিয়ে ভাবছেন অধিবাসীরা। গণমাধ্যমে কথা বলার কারণে হয়রানিতে পড়ার আতঙ্কও ছিল তাদের কণ্ঠে। সবমিলিয়ে গত ২৪ ঘণ্টা ছিল তাদের জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং ভয়াল।

৭৯ নম্বর সড়কের যে ভবনটিতে হলি আর্টিজান বেকারি, এর ঠিক পাশে অবস্থিত লেক ভিউ ক্লিনিক। গোলাগুলির শব্দ আর নারকীয় চিৎকার শুনে আতঙ্কে প্রাণ যাওয়ার দশা হয়েছিল এই ক্লিনিকের রোগী, দায়িত্বরত স্টাফ ও রোগীদের স্বজনদেরও। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই রেস্তোরাঁয় হামলার পর থেকেই প্রায় সারা রাত গোলাগুলি ও গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়। এসময় এক নবজাতককে নিয়ে সেখানে আটকা পড়েন এক দম্পতি। গোলাগুলি, বোমা ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে সদ্য মা হওয়া নারী তার সন্তানকে বুকে ধরে খাটের নিচে শুয়ে কাটিয়েছেন। তিনি কোনও কথা বলতে না চাইলে তাকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা নবজাতকের নানি বলেন, আমি নিজেও সেনা সদস্যের সন্তান। বুধবার আমাদের আনন্দের দিন ছিল। দুইদিনের মধ্যে এমন ভয়ঙ্কর রাত কাটাতে হবে কে ভেবেছিল!

তিনি আরও বলেন, ‘বুধবার আমার মেয়ে সন্তান প্রসব করেন। শুক্রবার হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার কথা ছিল। তবে রাতে গুলির শব্দ পেয়ে আমরা থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। খাটের নিচে শুয়ে রাত ভর দোয়া পড়েছি, সেহরিটা পর্যন্ত খেতে পাইনি।

লেক ভিউ ক্লিনিক

শনিবার সকাল ১০টা থেকে সবাইকে হাসপাতাল ছাড়তে বলে লেক ভিউ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। ক্লিনিক ছেড়ে যাওয়া আতঙ্কিত রোগীরা কেউই কথা বলতে চাইছিলেন না।

এসময় আতঙ্কিত মনিরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি তার চাচাকে ক্লিনিক থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, ‘পরিস্থিতি দেখে আমরা একদিন আগেই চলে যাচ্ছি।’

শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হঠাৎ করে ঢুকেই এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে হামলাকারীরা। সাত থেকে আট জন এই হামলা চালায়। এতে রেস্তোরাঁয় উপস্থিত ক্রেতা ও স্টাফদের মধ্যে মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় তিনতলা রেস্তোরাঁর ছাদে উঠে লাফিয়ে ও দেয়াল টপকে স্টাফদের কয়েকজন পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।

/টিএন/



সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগপিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?