কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী পুলিশি অভিযানে নিহত সেজাদ রউফ অর্কের মরদেহ শনাক্ত করতে বুধবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আসেন তার বাবা ও ভাই। অর্ক আমেরিকান পাসপোর্টধারী ছিলেন বলে তাদের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তাও মর্গে আসেন। তবে সব লাশ দেখার পর তারা লাশের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি, কেবল সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে তারা তিনজন চলে যাওয়ার পর নিহত জঙ্গিদের ময়নাতদন্ত পরিচালনাকারী টিমের প্রধান ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ জানান, তারা অর্কের বাবাকে ডিএনএ টেস্টের পরামর্শ দিয়েছেন। জঙ্গিদের ডিএনএ টেস্ট হওয়ার পর প্রতিবেদনের সঙ্গে স্বজনদের ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন মিলিয়েই কেবল পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বুধবার (২৭ জুলাই) দুপুর ১টা ৫৮মিনিটে মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তাসহ অর্কর বাবা ও ভাই ঢামেকে আসেন। তারা ভেতরে প্রবেশের সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। প্রথমে একবার তারা মর্গের ভেতর গিয়ে নিহত জঙ্গিদের লাশ দেখে আসেন। পরে ময়নাতদন্ত পরিচালনাকারী টিমের প্রধান সোহেল মাহমুদকে নিয়ে আবার মর্গের ভেতর যান। বেলা সাড়ে তিনটায় তারা ঢামেক থেকে চলে যান। ঢামেকে থাকার পুরোটা সময় তাদের সঙ্গে পুলিশ ছিল এবং তারা সংবাদিকদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি।
মর্গ থেকে বের হয়ে মার্কিন দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা যখন সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদের সঙ্গে কথা বলতে যান। ওই সময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে তিনি বলেন, ‘নো পিকচার, নো নিউজ, নোবডি অ্যালাউড হেয়ার।’ তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের সরে যাওয়ারও ইঙ্গিত করেন।
তারা তিনজন মর্গের প্রধান ফটক দিয়ে বের বের না হয়ে অন্য গেট দিয়ে বের হন। সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে হাত দিয়ে ফেরান।
এদিকে সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, অর্কের বাবা ও ভাই পুলিশের দেওয়া ৯ জঙ্গির ছবিতে দ্বিতীয় সারির শেষটা বা ৬ নম্বরটা অর্কের ছবি বলে সন্দেহ করছেন। তারা সবগুলো মরদেহ দেখেছেন। লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা অর্কের বাবাকে ডিএনএ টেস্টের পরামর্শ দিয়েছি। তাদের প্রমাণ নিয়ে আসার কথা বলেছি।
জানা যায়, কল্যাণপুরে নিহতদের ছবি দেখে সেজাদ রউফ অর্ককে চিহ্নিত করেছেন তারা পরিবার। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) দেওয়া নিখোঁজ তালিকায় (প্রথম পর্ব) তার নাম ছিল। সেজাদ রউফ অর্ক আমেরিকান পাসপোর্টধারী।
র্যাব সম্প্রতি নিখোঁজের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে থাকা ২৬২ জনের মধ্যে একাধিকবার একটি নাম ছিল। তালিকার ২৬ নম্বর ও ১৯৫ নম্বরে থাকা ব্যক্তির পাসপোর্ট নম্বর একই। তাদের বাবার নামও এক। তবে ওই ব্যক্তির নাম দুই জায়গায় সামান্য পার্থক্য ছিল।
র্যাবের তালিকায় ২৬ নম্বরে থাকা ব্যক্তির নাম লেখা হয়েছে মো. সাজাদ রউফ। তার বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ২৪। বাবার নামের ঘরে লেখা হয়েছে মো. তৌফিক রউফ। স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া হয়েছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, থানা ভাটারা, ডিএমপি, ঢাকা। বলা হয়েছে, তিনি আমেরিকান নাগরিক ও তার পাসপোর্ট নং ৪৭৬১৪৫৯৯২। বর্তমান ঠিকানার ঘরে লেখা হয়েছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, থানা ভাটারা, ডিএমপি ঢাকা। মো. সাজাদ রউফ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ অধ্যয়নরত বলেও লেখা হয় এই ঘরে।
পরে র্যাবের ৬৮ জনের তালিকায় তার নামটি আবারও উল্লেখ করা হয়। এসময় ঠিকানা লেখা হয় বসুন্ধরার ১০ নম্বর সড়কের ৩০৪ নম্বর বাসা। বাবার নাম আগের মতোই তৌফিক রউফ। তবে এখানে সরবরাহ করা তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী লেখা নেই।
উল্লেখ্য, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা বুধবার বেলা পৌনে ১২টায় শুরু করে ১টা ২০ মিনিটে ময়নাতদন্ত শেষ করেন। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ভোরে কল্যাণপুরে ৫ নম্বর রোডের ৫ তলা ভবনে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হয়। অপারেশন স্টর্ম-২৬ নামে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এই অভিযান চলে।
র্যাব-পুলিশের অন্তত এক হাজার সদস্য অভিযানে অংশ নেন। এর আগে সোমবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভবন ও তার আশেপাশের এলাকা ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এই অভিযান শুরু হয়। ওই ভবনে ১১ জন জঙ্গি ছিল। এর মধ্যে সোমবার রাতে ভবনটি থেকে লাফিয়ে পালানোর সময় রাকিবুল হাসান রিগ্যান নামে এক জঙ্গিকে গুলি করার পর আটক করে পুলিশ। আরেকজন পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন-
গুলশান ও কল্যাণপুরের জঙ্গিদের কানেকশনের প্রমাণ ছবিতেই!
খালেদার চা-চক্র থেকে আসছে জাতীয় ঐক্যের রোডম্যাপ: নির্ধারিত হবে জামায়াতের ভাগ্যও!
দারুল ইহসানের শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করতে পারবে
/এফএস/টিএন/